ছবি: পিটিআই।
গত ২০ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে কলকাতায় আসা যে যুবকের শরীরে করোনার নতুন স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে, তাঁর সঙ্গে একই উড়ানে শহরে আসা এক মহিলা সহ তিন যাত্রীর সন্ধান মিলল বক্সার জঙ্গলে। খোঁজ মিলতেই রিসর্টে আটকে দেওয়া হয় তাঁদের। ওই তিন জনের লালা রসের নমুনা পরীক্ষার পরে রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে বলেই জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
সূত্রের খবর, হুগলির বাসিন্দা ওই তিন পর্যটক দু’দিন আগে রাজাভাতখাওয়ার কাছে বন উন্নয়ন নিগমের বাংলোতে এসে ওঠেন। ওই তিন জনের সঙ্গে পরিবারের আরও পাঁচজন রয়েছেন। বুধবার সেই খবর জানতে পারেন আলিপুরদুয়ারের স্বাস্থ্য কর্তারা। বৃহস্পতিবার ওই আটজনের পাশাপাশি তাঁদের সংস্পর্শে আসা বন বাংলোর পাঁচ জন কর্মীরও নমুনা সংগ্রহ করে কোচবিহারে পরীক্ষায় পাঠানো হয়। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এ দিন রাতে সকলেরই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। আলিপুরদুয়ারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘ওই তিন যাত্রী-সহ বাকিদের দেহে করোনার কোনও উপসর্গ মেলেনি। র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষাতে সকলেরই রিপোর্ট
নেগেটিভ এসেছিল। তবে আরও নিশ্চিত হতে আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে লালা রসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।’’
স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়েছেন, রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ওই প্রত্যেককে বাংলো থেকে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছিল। পাশাপাশি শীতের মরসুমে আলিপুরদুয়ারে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিয়মিত করোনা পরীক্ষারও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন গিরীশবাবু। বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান উদয়ন গুহ বলেন, “বড় বড় বন বাংলোগুলোতে থাকার ক্ষেত্রে পর্যটকদের করোনা রিপোর্ট দেখানো বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: বছরের শেষ দিনেও করোনা কেড়ে নিল ২৯ জনের প্রাণ
আরও পড়ুন: বিদায় ২০২০, জনশূন্য রাস্তায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাল অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড
লন্ডন ফেরত যুবকের শরীরে নতুন স্ট্রেনের হদিশ মেলার পর থেকেই সতর্কতায় কোনও ফাঁক রাখতে নারাজ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও। আর তাই গত এক মাসে ব্রিটেন থেকে আসা যাত্রীদের উপর বিশেষ ভাবে নজর রাখতে বুধবার ছয় দফার নির্দেশিকা জারি করেছে দফতর। কলকাতা পুরসভার কমিশনার এবং সমস্ত জেলাশাসক, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে সেই নির্দেশিকা।
তাতে বলা হয়েছে, বিট্রেন থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলক ভাবে আরটিপিসিআর পরীক্ষা করাতে হবে। তাঁদের বাড়ি থেকেই লালারসের নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। ভারতে আসার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী ১৪ দিন ওই যাত্রীদের উপর নজর রাখতে হবে জেলার নজরদারি দলকে। যাত্রীদেরও ভারতের আসার পরে ২৮ দিন ধরে কিছু নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্য কর্মীরা যখন প্রতিদিন ফোন করে কিংবা বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেবেন, তখন পুরোমাত্রায় সহযোগিতা করতে হবে। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টর মতো কোনও উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কি না সে বিষয়েও ভারতে আসার দিন থেকে পরবর্তী ২৮ দিন নজর রাখতে হবে। কোনও প্রকার উপসর্গ দেখা দিলেই অবিলম্বে মাস্ক পরতে হবে এবং বাড়িতেই নিভৃতাবাসে থাকতে হবে। পাশাপাশি বিষয়টি জেলার নজরদারি দলের আধিকারিক কিংবা রাজ্যের হেল্প লাইনে জানাতে হবে।
আরও বলা হয়েছে, শুধু যাত্রীকে নিয়ম মানতে বললেই হবে না, ২৮ দিন ধরে নজরদারি ঠিক ভাবে হচ্ছে কি না সে বিষয়েও নিশ্চিত হতে হবে জেলার নজরদারি আধিকারিককে। যদি কারও কোভিড পজ়িটিভ ধরা পরে তাহলে তাঁকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মাধ্যমে নিভৃতাবাসে যেতে হবে। আর তাঁর সংস্পর্শে আসা লোকজনকেও পাঁচ থেকে দশ দিনের মধ্যে করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি কোয়রান্টিনে থাকতে হবে। গত ২০ ডিসেম্বরের উড়ানে লন্ডন থেকে কলকাতায় এসেছিলেন ২২২ জন যাত্রী। তার মধ্যে ২৫ জনের কোভিড রিপোর্ট না থাকায় তাঁদের আলাদা রেখে পরীক্ষা করানো হয়। তখনই দু’জনের পজ়িটিভ রিপোর্ট আসে। তার মধ্যে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্ত্রীর ছেলের শরীরে নতুন স্ট্রেনের হদিশ মেলে। তিনি ছাড়া আরও যে ছয় জনের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য পাঠানো হয়েছিল তাতে ব্রিটেনের স্ট্রেন মেলেনি। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ২২২ জনের মধ্যে ১৯৭ জনের সঙ্গে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট ছিল।
এই নির্দেশিকা আসার পরে কলকাতা পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘ওই সব যাত্রীদের মধ্যে যাঁরা কলকাতায় থাকেন তাঁদের বাড়িতে গিয়ে আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হবে।’’ আপাতত শহরে আরও কারও শরীরে বিট্রেনের স্ট্রেন লুকিয়ে রয়েছে কি না তারই খোঁজে রয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)