Citizenship Amendment Act

‘নাগরিক’রা খুশি, অবশ্য বাতিল নিয়ে সদুত্তর নেই

মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের অনেকেই অবশ্য মনে করছেন, কেন্দ্র যখন নাগরিকত্ব দিচ্ছে, তখন তাঁরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন। হাবড়া-অশোকনগরের মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষজনও খুশি।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

হাবড়া শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৪ ০৮:৪০
Share:

নাগরিকত্বের শংসাপত্র হাতে। —ফাইল ছবি।

শুরু হয়ে গিয়েছে নাগরিকত্বের শংসাপত্র দেওয়ার কাজ। ১ জুন শেষ দফার ভোটের আগে নাগরিকত্ব সংশোধিত আইনে (সিএএ) বুধবার এ রাজ্যে কয়েক জনকে নাগরিকত্বের শংসাপত্র দেওয়া হল। সূত্রের দাবি, এঁদের মধ্যে রয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়া জেলার কয়েক জন মতুয়া উদ্বাস্তু। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের পিছনে রাজনৈতিক স্বার্থ দেখছে শাসক তৃণমূল। এর প্রভাব শেষ দফার ভোটে পড়বে কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। শনিবার রাজ্যে যে আসনগুলিতে ভোট, তার মধ্যে বারাসত, দমদম, বসিরহাট ও জয়নগরে মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের বসবাস। যাঁদের বড় অংশ বিভিন্ন সময় ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে পালিয়ে এ দেশে এসেছিলেন বলে দাবি।

Advertisement

শংসাপত্র দেওয়া শুরু হতে স্পষ্টতই স্বস্তিতে বারাসত কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদার। তাঁর কথায়, “মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের একটা আস্থার জায়গা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বারে সেই আইনে নাগরিকত্ব শংসাপত্র দেওয়া শুরু হতে তাঁর প্রতি মতুয়াদের আস্থা আরও বেড়ে গিয়েছে।” স্বপনের দাবি, “বারাসত লোকসভা কেন্দ্রে প্রায় ২৫ শতাংশ মতুয়া উদ্বাস্তু তফসিলি মানুষের বসবাস। এই অংশের মানুষের ৯০ শতাংশ সমর্থন আমি পাব। নাগরিকত্ব শংসাপত্র প্রদানের প্রভাব নিশ্চিত ভাবেই ভোটে পড়বে।” অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বিদায়ী কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেন, “নাগরিকত্ব শংসাপত্র প্রদানের কাজ শুরু হওয়ায় শেষ দফার ভোটে এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে চলেছে।” যদিও যাঁদের আবেদন এই যাত্রায় বাতিল হয়েছে বা গৃহীত হয়নি, তাঁরা কী করবেন, তা নিয়ে কেউ কিছু বলতে চাননি। একাংশের মতে, যাঁরা শংসাপত্র পেলেন, তাঁদের নিয়ে চিন্তা নেই। আসল উদ্বেগ তাঁদের জন্য, যাঁদের আবেদন বাতিল হয়ে গেল। তা হলে কি তাঁরা শরণার্থী হয়ে গেলেন?

মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের অনেকেই অবশ্য মনে করছেন, কেন্দ্র যখন নাগরিকত্ব দিচ্ছে, তখন তাঁরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন। হাবড়া-অশোকনগরের মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষজনও খুশি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় থাকা মতুয়া মন্দিরে গিয়ে মতুয়ারা ডঙ্কা, কাঁসি, নিশান নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। অশোকনগরে মতুয়া ভক্ত অমৃত মণ্ডল বলেন, “নাগরিকত্ব প্রদান করে মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যা করলেন, তা আর কোনও রাষ্ট্রনায়ক করেননি।”

Advertisement

সিএএ-তে আবেদন করে তা বাতিল হলে ডিটেনশন ক্যাম্পে জায়গা হবে— এ বারের প্রচারে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার এ কথা বলেছেন। হাবড়ার বাসিন্দা এক মতুয়া ভক্তের কথায়, “ভয়ে এত দিন আবেদন করিনি। করলে এত দিনে নাগরিকত্ব পেয়ে যেতাম হয়তো। আর সময় নষ্ট করব না।” তবে সবাই সংশয়মুক্ত নন। কেউ কেউ আর একটু দেখে নিতে চাইছেন।

তৃণমূল নাগরিকত্ব শংসাপত্র প্রদান ভুয়ো বলেই মনে করছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, “কে বা কারা নাগরিকত্ব শংসাপত্র পেয়েছেন, তা আমার জানা নেই। গত ১০ বছর ধরে নাগরিকত্ব নিয়ে বিজেপি মতুয়াদের ভাঁওতা দিয়ে আসছে। এ বার ভোটে মতুয়ারা জবাব দেবেন।” তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “এখন দেশে নির্বাচনের আচরণবিধি চলছে। এখন কোনও নাগরিকত্ব শংসাপত্র দেওয়া যায় না। শেষ দফা ভোটের আগে কেন্দ্র ভুয়ো নাগরিকত্ব শংসাপত্র দিচ্ছে মতুয়া উদ্বাস্তুদের বিভ্রান্ত করতে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement