কেএলও প্রধান জীবন সিংহ। নিজস্ব চিত্র।
গত কয়েক মাসে একাধিক ভিডিয়ো বার্তা এবং কেন্দ্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ঘিরে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন দীর্ঘ দিন আড়ালে থাকা কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও) প্রধান জীবন সিংহ। অসম রাজ্য সরকারের মধ্যস্থতায় কেন্দ্রের সাথে শান্তি আলোচনার আড়ালে তিনি যে নতুন করে সংগঠন শক্তিশালী করতে চাইছেন, সে বিষয়ে আগেই আভাস মিলেছিল। এবারে সেই জল্পনাকে বাস্তব রূপ দিয়ে নতুন করে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করল কেএলও।
গত ১৫ থেকে ২০ জুন জীবনের উপস্থিতিতে কেএলওর সাধারণ সভায় ৩২ জনের এই নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে ছ’দিনের ওই সাধারণ সভা ভারত না কি প্রতিবেশী কোনও দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা জানানো হয়নি। ওই সাধারণ সভায় মোট কত জন অংশ নিয়েছিলেন, তা-ও স্পষ্ট করে জানায়নি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনটি। তবে সূত্রের খবর, উত্তর-পূর্ব ভারতের মায়ানমার সীমান্তের এক গোপন ডেরায় হয়েছিল সাধারণ সভা। তাতে কয়েক দফায় তিনশোর বেশি সক্রিয় কেএলও নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
কয়েক বছর পরে কেএলও কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন করল। সংগঠনের তথ্য ও প্রচার দফতরের সহসচিব দাওসার লাঙকাম কোচের তরফ জারি করা এক বিবৃতিতে নয়া কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন এই কমিটিতে সব থেকে বড় চমক— প্রথম বার কেএলও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছেন দুই মহিলা। নতুন কমিটিতে নারী কল্যাণ বিভাগের সচিব ও সহসচিব করা হয়েছে মতেশ্বরী অধিকারী এবং উর্বশী কোচকে। কিছু দিন আগে সংগঠনের তরফে জারি করা ভিডিয়োতে সামরিক পোশাকে সশস্ত্র নারীদের দেখা গিয়েছিল। এ বার সংগঠনের শীর্ষ স্তরে দু’জন মহিলার অন্তর্ভুক্তি হল।
কেএলওর বিবৃতিতে এই প্রথম সংগঠনের বদলে ‘পার্টি’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। এর ফলে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে, তা হলে কি সাংগঠনিক বিস্তারের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে মূলস্রোতের রাজনীতিতে অংশ নিতে চাইছে কেএলও? লিখিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কামতাপুরি জনগণকে সংগঠিত করা এবং পার্টির কর্মসূচিকে প্রসারিত করার লক্ষ্যেই এই কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতেও সভাপতি হয়েছেন জীবন সিংহ। রয়েছেন পাঁচ জন সহ-সভাপতি।
কেএলওর নতুন মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন কৈলাস কোচ এবং সহকারি মহাসচিব হয়েছেন নৃপেন্দ্রনারায়ণ কোচ। মহাসচিবের সঙ্গে রয়েছেন পাঁচ জন বিভাগীয় উপসচিব। এঁদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র বিভাগের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুভাষ প্রধাকে। যৌথ ভাবে সংগঠনের সামরিক বাহিনীর উপসচিব হয়েছেন ক্যাপ্টেন সূর্য কোচ এবং ক্যাপ্টেন হরেন্দ্র কোচ। কেএলওর অর্থ উপসচিবের যৌথ দ্বায়িত্ব পেয়েছেন মদন রাই এবং অনির্বাণ কোচ। নতুন বিদেশ সচিব এবং সংগঠন সচিবের দ্বায়িত্ব পেয়েছেন যথাক্রমে পাভেল কোচ এবং নরেন কোচ।
আর একটি চমকপ্রদ ঘটনা হল, কোচ-রাজবংশী জনজাতি গোষ্ঠীর বাইরেও বেশ কিছু মুখকে আনা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্বে। এর মধ্যে কেএলও’র নতুন বাণিজ্য সচিব এবং তার সহকারীর দ্বায়িত্ব পেয়েছেন যথাক্রমে মহেশ মণ্ডল এবং তাপস চক্রবর্তী। তেমনই শ্রম সচিব নির্বাচিত হয়েছেন মার্টিন কুজুর, সংস্কৃতি সচিবের দ্বায়িত্ব পেয়েছেন অসীম রাভা এবং সহকারী সংগঠন সচিবের দ্বায়িত্ব পেয়েছেন আনারুল হক। অনেকে মনে করছেন, কোচ-রাজবংশী জনগোষ্ঠীর বাইরে অন্যান্য ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়কে সংগঠনে জুড়ে আখেরে বিশেষ রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইছেন জীবন। তবে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলির দাবি কেএলওর সাংগঠনিক নিয়ম হল, আসল নাম ও পরিচয় গোপন রেখে সাংগঠনিক নাম প্রকাশ। সেই হিসাবে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোচ-রাজবংশী ছাড়াও বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত ভাবে এখনই বলা সম্ভব নয়।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।