নয়া ক্যাডার কারা, প্রস্তাব ঘিরে ক্ষোভ

বাংলার জন্য আরও দরদ দিয়ে কাজ করবেন, এমন আমলা-অফিসার চাই। সেই জন্য গত ৮ জুন ডব্লিউবিসিএস এবং আইএএসের মাঝখানে আরও একটি ক্যাডার তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

অত্রি মিত্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:১৮
Share:

হবে তো নতুন ক্যাডার। কিন্তু তাতে ঠাঁই হবে মূলত কাদের? শুরু হয়েছে বিতর্ক। ধূমায়িত হচ্ছে ক্ষোভ।

Advertisement

বাংলার জন্য আরও দরদ দিয়ে কাজ করবেন, এমন আমলা-অফিসার চাই। সেই জন্য গত ৮ জুন ডব্লিউবিসিএস এবং আইএএসের মাঝখানে আরও একটি ক্যাডার তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ওই ক্যাডার সার্ভিস কী রকম হবে, তা ঠিক করতে মুখ্যসচিব মলয় দে-র নেতৃত্বে কমিটি গড়েন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি সেই কমিটি পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ প্রশাসনিক পরিষেবা (ওয়েস্ট বেঙ্গল হায়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস) সংক্রান্ত প্রস্তাব জমা দেয় কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতরে। সেখান থেকে প্রস্তাবটি আইন দফতরের কাছে। এর পরে বিষয়টি অনুমোদনের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। কিন্তু তার আগেই সংশ্লিষ্ট কমিটির দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে।

Advertisement

বিসিএস অফিসারদের একাংশের দাবি, ওই প্রস্তাব কার্যকর হলে উপকৃত হওয়ার বদলে মাঝের সারির অফিসারেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

কী রয়েছে প্রস্তাবে?

নবান্ন সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, কোনও পরীক্ষা নয়, পাবলিক সার্ভিস কমিশনে তৈরি হবে একটি উচ্চপদস্থ কমিটি। তারা প্রতি বছর তিনটি স্তর থেকে পাঁচ জন করে ১৫ জন অফিসার বেছে নেবে হায়ার সার্ভিসের জন্য। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘যে-সব অফিসার ১৭ (সহসচিব), ১৮ (ডেপুটি সচিব) এবং ১৯ (যুগ্মসচিব) নম্বর স্কেলে রয়েছেন, তাঁদের থেকেই হায়ার সার্ভিসের জন্য অফিসার নেওয়া হবে। নতুন সার্ভিসে গিয়ে তাঁদের স্কেল এক ধাপ বাড়বে। ১৭ এবং ১৮ নম্বর স্কেলে থাকা অফিসারদের নতুন স্কেল হবে যথাক্রমে ১৮ এবং ১৯। ১৯ নম্বর স্কেলে থেকে অফিসারদের নয়া স্কেল হবে ২১ (বিশেষ সচিব)।’’ ন্যূনতম ১৪ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অফিসার নেওয়া হবে নতুন সার্ভিসে। ঠিক হয়েছে, এ ভাবে একটানা ১২ বা ১৫ বছর ধরে ১৫ জন করে অফিসার বাছা হবে হায়ার সার্ভিসের জন্য।

নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পদোন্নতির ভিত্তিতে বিসিএস-রা যেমন হায়ার সার্ভিসে যেতে পারেন, হায়ার সার্ভিসের অফিসারেরাও পারবেন। বিসিএস-রা এত দিন আইএএস-দের যে-সব খালি আসন পূরণ করতেন, এ বার থেকে তার ৮০% আসন পূরণ করা হবে তাঁদের দিয়ে। আর বাকি ২০% আসনে নিয়োগ হবে হায়ার সার্ভিস থেকে।

এই সব প্রস্তাবে তুমুল আলোড়ন তৈরি হয়েছে নবান্ন-সহ রাজ্য প্রশাসনে। এক বিসিএস অফিসার বলেন, ‘‘আমাদের সার্ভিসে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই এই প্রস্তাব তৈরি হয়েছে। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি হবে বেশি। স্বল্প মেয়াদে কিছু সিনিয়র অফিসারকে সুবিধে পাইয়ে দিতেই এই প্রস্তাব তৈরি হয়েছে।’’ ওই অফিসারের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন এই সার্ভিসে আসুন কিছু কমবয়সি, চনমনে অফিসার। কিন্তু প্রস্তাবে প্রবীণ অফিসারদের নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তার উপরে ১৮, ১৯ এবং ২১ নম্বর গ্রেডে যে-সব অফিসার রয়েছেন, তাঁরা তো বটেই, সিনিয়রিটির ভিত্তিতে আইএএস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন যাঁরা, তাঁদেরও অগ্রগতি আটকে যাবে বলেও দাবি ওই সব অফিসারের।

এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ডব্লিউবিসিএস সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সৌমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে নবান্নের এক শীর্ষ অফিসারের কথায়, ‘‘এই সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। জুনিয়র অফিসারদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই নতুন প্রস্তাব তৈরি হয়েছে।’’

রাজ্যে তিনশোর বেশি আইএএস এবং আইপিএস অফিসার আছেন। তাঁদের অধিকাংশই ভিন্ রাজ্যের। তাঁরা অনেক সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজে যেতে চান, যা পছন্দ নয় রাজ্যের। মুখ্যমন্ত্রী এমন অফিসার চান, যাঁরা শুধু চাকরি নয়, বাংলার জন্য আবেগ দিয়ে পরিষেবা দেবেন। মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, এ রাজ্যের অফিসারদের সেই দরদ বেশি। সেই জন্যই এমন সার্ভিস তৈরির ভাবনা। কিন্তু কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী হায়ার সার্ভিসের অফিসার বেছে নেওয়ার পদ্ধতি চালু হলে প্রশাসনের অন্দরে ক্ষোভ বাড়বে। তাতে সরকারের কাজেও ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের একাংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement