বাধা সেই ডেঙ্গি, ছুটি পায়নি মা-হারা নবজাতক

চিকিৎসকেরা জানান, শিশুটিও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। তবে তার অবস্থা এখন কিছুটা স্থিতিশীল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:০৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

জন্মের পরে মাকে মাত্র দু’দিন পেয়েছিল সে। তার পরে আচমকাই মায়ের জ্বর আসায় আলাদা হতে হয়েছিল সদ্যোজাত ছেলেকে। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত মায়ের সঙ্গে তারও স্থান হয়েছিল মিন্টো পার্কের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই গত রবিবার রাতে মারা যান মা। সেই থেকে একাই রয়েছে শিশুটি। চিকিৎসকেরা জানান, শিশুটিও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। তবে তার অবস্থা এখন কিছুটা স্থিতিশীল।

Advertisement

বেলুড়ের গিরিশ ঘোষ রোডের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা জয়সওয়াল ২৭ অক্টোবর স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। দু’দিন পরে জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। রক্তপরীক্ষায় এনএস-১ পজিটিভ (ডেঙ্গির জীবাণু) ধরা পড়ে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২ নভেম্বর প্রিয়াঙ্কা এবং তাঁর সন্তানকে কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দু’টি আলাদা ওয়ার্ডে চিকিৎসা শুরু হয় দু’জনের। ১১ নভেম্বর রাত পৌনে ১২টায় মারা যান প্রিয়াঙ্কা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ফুসফুসে অতিরিক্ত মাত্রায় রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যু হয় বেলুড়ের ওই গৃহবধূর।

গর্ভস্থ অবস্থায় শিশুটির দেহে ডেঙ্গির জীবাণু ঢুকল কী ভাবে?

Advertisement

পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী জানান, গর্ভাবস্থায় মায়ের রক্তই শিশুর শরীরে বইতে থাকে। তাই মায়ের সংক্রমণ রক্তস্রোতের সঙ্গে শিশুর শরীরে ঢুকে পড়ে। পরে মায়ের গর্ভে থাকাকালীন বা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেও শিশুটি সেই রোগে আক্রান্ত হয়। এটাকে বলা হয় ‘ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন’। তিনি আরও বলেন, ‘‘ডেঙ্গির ইনকিউবেশন পিরিয়ডকে মাথায় রাখলে এটা ভাবা যেতেই পারে যে, প্রসবের আগে মা ডেঙ্গিতে সংক্রমিত হন এবং সেই কারণে গর্ভাবস্থাতেই শিশুটি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছে।’’ সাধারণত জ্বর আসার কয়েক দিন আগেই মানুষের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু সংক্রমিত হয় বলে জানান অমিতাভবাবু।

শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ জানান, গর্ভস্থ অবস্থায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সচরাচর ঘটে না। তাই এ বিষয়ে গবেষণাও বেশি হয়নি। তবে প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডের প্রথম পর্যায়ে মায়ের যদি ডেঙ্গি হয়, তা হলে গর্ভস্থ শিশুরও সংক্রমণে মৃত্যু বা নির্ধারিত সময়ের আগে জন্মের মতো সমস্যা হতে পারে। আর

প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডের একেবারে শেষ পর্যায়ে যদি মায়ের ডেঙ্গি হয়, তা হলে জন্মের পরে বাচ্চারও ডেঙ্গি হতে পারে। সেটি তার ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে আবার না-ও পারে। তবে এটা বাচ্চাটির প্রথম ডেঙ্গি। এখন কিছু না-হলেও দ্বিতীয় বারের ডেঙ্গিতে অবস্থা খারাপ হতে পারে।

কলকাতার ওই হাসপাতাল সূত্রের খবর, শিশুটির প্লেটলেট বেড়েছে। এ দিন তাকে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও আরও কিছুটা পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন থাকায় শেষ পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়নি। প্রিয়াঙ্কার কাকা কানাইলাল জয়সওয়াল বলেন, ‘‘মেয়েটা তো চলে গেল। এই শিশুটিই এখন ওর শেষ চিহ্ন। একে হারাতে চাই না। তাই চিকিৎসককে অনুরোধ করেছি, একেবারে সুস্থ করে তবেই যেন একে ছুটি দেওয়া হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement