সদ্যোজাত খুনের ঘটনায় পিংলার করকাই গ্রামের বাসিন্দাদের বিক্ষোভ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
প্রথম দু’বার তাও না হয় মেনে নেওয়া গিয়েছিল। তৃতীয় বারও শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই নিকেশ করা গিয়েছিল। কিন্তু চতুর্থ বারও কি না কন্যা সন্তান। তাই নিজের হাতে ২১ দিনের কন্যা শিশু স্নেহাকে শ্বাসরোধ করে খুন করল বাবা-মা। না, এটা কোনও গল্প নয়। একবিংশ শতকেও এমন ঘটনা ঘটে, এটাই যা অবাক করা।
কন্যা সন্তান বাঁচাতে প্রচারের জৌলুস যতই বাড়ুক না কেন, প্রদীপের নীচে অন্ধকার যে আজও একইরকম রয়ে গিয়েছে, এই ঘটনা তারই প্রমাণ দিল। এমন মর্মান্তিক ঘটনার নিন্দায় সরব পিংলার করকাই গ্রামের বাসিন্দারাও। গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক শ্রীকান্ত ভুঁইয়া বলছেন, “এখন মেয়েরা শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ মানসিক দিক দিয়ে সহস্র যোজন পিছিয়ে থাকা কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে একটা নিষ্পাপ প্রাণকে শেষ করল।”
চাষ করে কোনওমতে মেয়েকে পড়াশোনা শেখাচ্ছেন ওই গ্রামেরই বাসিন্দা কার্তিক মাণ্ডি। এই ঘটনায় তিনিও শিহরিত। কার্তিকবাবুর কথায়, ‘‘কষ্টের সংসারেও মেয়েকে আঁকড়ে দশ বছর ধরে লড়াই করছি। আমি মনে করি আমার মেয়েই একদিন সংসারে আলো জ্বালবে। কিন্তু এই মণ্ডল পরিবার টাকার কথা ভেবে এমন নৃশংস কাণ্ড ঘটাল, ভাবলেও ভয় লাগে।”
পেশায় চাষি দুর্গাপদ মণ্ডলের স্বচ্ছল সংসার। দুই ভাইয়ের পরিবারে দুর্গাপদ ছোট। দুর্গাপদ ও রিঙ্কুর আগেই দু’টি কন্যা সন্তান রয়েছে। বছর কয়েক আগে অন্তঃস্বত্ত্বা হয় রিঙ্কু। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্তানধারণের প্রায় সাত মাসের মাথায় ‘আল্ট্রাসোনোগ্রাফি’ করে জানা যায়, সেটি কন্যা সন্তান। তারপরেই গর্ভপাত করানো হয়। গত বছর রিঙ্কু ফের অন্তঃস্বত্ত্বা হয়। চতুর্থ বারও কন্যা সন্তান হওয়ায় দুর্গাপদ ও রিঙ্কুর মধ্যে অশান্তি চলত।
স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার সকালে মৃত সদ্যোজাতকে কবর দেওয়ার আগে গ্রাম কমিটির সভাপতি ভীমচরণ সাহুর কাছে অনমুতি চাইতে যায় দুর্গাপদ। ভীমচরণবাবুর দাবি, ‘‘সদ্যোজাত কন্যা মারা গিয়েছে বলে কবর দেওয়ার অনুমতি নিতে ওই দিন সকালে দুর্গা আমাকে ডাকতে এসেছিল। কিন্তু মেয়ের মৃত্যুর কারণ বলতে পারছিল না, তখনই সন্দেহ হয়। এরপরে দুর্গাপদর দাদা বাদল জানায়, ওর ভাই ও বৌমা মিলে শিশুটিকে খুন করেছে।’’
স্থানীয়দেরও দাবি, শনিবার রাতে ঘটনার কথা কেউ টের পাননি। রবিবার সকালে দুর্গাপদ ও রিঙ্কুকে ঘিরে ধরে গ্রামবাসী। তখন চাপের মুখে মেয়েকে খুনের কথা স্বীকার করে তারা। পিংলা থানায় ঘটনার অভিযোগ করেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা নন্দিতা শাসমল। দুর্গাপদ ও রিঙ্কুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার ধৃতদের মেদিনীপুর আদালতে তোলা হলে সাত দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। তবে ধৃতেরা নিজেদের দোষ স্বীকার করে নেওয়ায় তাঁদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়নি বলে খবর।