অভাবি তরুণী দেখলেই প্রথমে আলাপ জমাত ওরা। আলাপ গভীর হলেই কথার ফাঁকে দেওয়া হত কাজের টোপ। পুলিশ বলছে, তারপর সেই তরুণীদের কাজের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ছুতোয় বেরতো তারা। মাঝপথে গল্পের ফাঁকে খাবার বা পানীয়ের সঙ্গে মাদক মিশিয়ে খাইয়ে দেওয়া হত। জ্ঞান ফিরলে তাঁরা দেখতেন, কর্মস্থল নয়, ঠাঁই হয়েছে আমদাবাদ বা পুণের যৌনপল্লিতে।
সম্প্রতি একাধিক রাজ্য জুড়ে এই পাচারচক্রের দুই মহিলা-সহ তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে পাচারের এই ছকের কথা জানতে পেরেছে সিআইডি। কলকাতার কাছাকাছি কাজের টোপ দিয়ে এ ভাবে বছর দুয়েক আগেও পাচার করা হয়েছে বহু যুবতীকে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, বনগাঁ, বসিরহাট, গাইঘাটা, কাকদ্বীপের মতো এলাকার অনেক তরুণীদের পাচার করেছে এই চক্র।
কী ভাবে এই চক্রের হদিস পেল পুলিশ?
সিআইডি সূত্রের খবর, পুণের একটি যৌনপল্লিতে পাচার করা হয়েছিল বসিরহাটের এক তরুণীকে। বছর খানেক আগে কাকদ্বীপ থানার পুলিশ অন্য একটি পাচারের ঘটনার তদন্তে গিয়ে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। তাঁর সঙ্গে কথা বলেই সিআইডি একাধিক রাজ্য জুড়ে এই নারী পাচার চক্রের সদস্যদের সন্ধান পায়। ওই তরুণী তদন্তকারীদের জানান, ২০১৬ সালের মাঝামাঝি রফিকুল লস্কর নামে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। তাঁকে বারাসতের একটি নার্সিংহোমে চাকরি দেবে বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যায় সে। অভিযোগ, মাঝপথে রফিকুলের কিনে দেওয়া খাবার খেয়েই হুঁশ হারান তিনি। হুঁশ ফিরতে দেখেন, তিনি আমদাবাদের যৌনপল্লিতে। পরে পুণেতে পাচার করা হয় তাঁকে।
ওই তরুণীর বয়ান অনুযায়ী রফিকুলের ছবি আঁকায় তদন্তকারীরা। সম্প্রতি তামিলনাড়ুতে রফিকুলের খোঁজ মেলে। তাকে পাকড়াও করে খোঁজ মেলে গৌরী ও প্রীতি তামাঙ্গ নামে দুই মহিলার। পুণে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হলেও পালিয়ে যায় পূজা নামে অন্য এক জন। পুলিশের দাবি, পূজাই এই চক্রের চাঁই। পুণে থেকে সে এই কারবার চালায়। তাকে পাকড়াও করতে পারলেই এই চক্রের সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাবে। গোয়েন্দারা জানান, বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরুণীদের অচেতন বা নেশাচ্ছন্ন করে হাওড়ায় এনে চক্রের সদস্যদের হাতে তুলে দিত আড়কাঠিরা।