Thakurnagar

হিংসার আশ্রয়ে দিদি: ঠাকুরনগর থেকে আক্রমণে মোদী, বাংলা থেকেই বাজিয়ে দিলেন ভোটের দামামা

ঠাকুরনগরের জনসভা থেকে তৃণমূলকে সরাসরি মোদীর বার্তা— নাগরিকত্ব বিল আটকাবে না, এই বিলকে সমর্থন করুন, রাজ্যসভায় পাশ হতে দিন। তৃণমূল অবশ্য একাধিক বার এই বিলের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঠাকুরনগর শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৫:২২
Share:

ঠাকুরনগরে মোদী। নিজস্ব চত্র।

রাজনীতির হাওয়া-বাতাস অনেক দিন ধরেই আভাস দিচ্ছিল, আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির অন্যতম টার্গেট বাংলা। ঠাকুরনগরের জনসভায় শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ সেই আভাসকে আরও স্পষ্ট করে দিল। শুক্রবার পেশ হওয়া বাজেট যদি ভোটে ঝড় তোলার জন্য বিজেপির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হয়, তা হলে সেই হাতিয়ারের প্রথম প্রকাশ্য প্রয়োগটা মোদী করলেন বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়েই।

Advertisement

‘‘দেশের ইতিহাসে প্রথম বার কৃষক এবং শ্রমিকদের জন্য খুব বড় প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে,’’— ঠাকুরনগরের সভা থেকে এ দিন এমনই দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী। হিংসার প্রশ্নে তীব্র কটাক্ষ করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে। আক্রমণ করলেন সিন্ডিকেট প্রশ্নেও। তবে জমায়েত ক্রমশ বিশৃঙ্খল হতে থাকায় দ্রুত ভাষণ শেষ করে দিতে বাধ্য হলেন তিনি।

স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে প্রখ্যাত ভূমিপুত্রদের শ্রদ্ধা জানিয়েই এ দিনের সভায় নিজের ভাষণ শুরু করেন মোদী। মতুয়া ধর্মগুরু হরিচাঁদ ঠাকুর এবং বড়মা-র বংশধরদের মাঝে আসতে পেরে তিনি গর্বিত— বলেন মোদী।

Advertisement

এর পরেই সরাসরি বাজেট প্রসঙ্গে চলে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘‘গত কাল একটা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে প্রথম বার কৃষক এবং শ্রমিকদের জন্য খুব বড় প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।’’ কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপে ১২ কোটি ক্ষুদ্র কৃষক, ৩০-৪০ কোটি শ্রমিক এবং তিন কোটি মধ্যবিত্ত সরাসরি উপকৃত হবেন বলে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন।

আরও পড়ুন: মেদিনীপুরের পর ঠাকুরনগরেও চরম বিশৃঙ্খলা, মোদীর সভায় আহত কয়েক জন

ঠাকুরনগরের জনসভা যে শুধু মাত্র স্থানীয় বা রাজ্যস্তরের ইস্যুভিত্তিক কোনও জনসভা ছিল না, তা এ দিন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাজেট সেরেই আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচনী প্রচারের শুরুটা যে বিজেপি ঠাকুরনগর থেকেই করে দিল, মোদীর ভাষণে তা পরিষ্কার। ভাষণ সংক্ষিপ্ত ছিল ঠিকই। কিন্তু সেই সংক্ষিপ্ত অবকাশেই বাজেটের প্রশংসার পঞ্চমুখ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, কংগ্রেসকেও তীব্র আক্রমণ করেছেন। কৃষকের জন্য কংগ্রেস কোনও দিনই কিছু করেনি বলে মোদী এ দিন দাবি করেন। বিভিন্ন সময়ে ভোট এলেই কংগ্রেস কৃষিঋণ মকুবের কথা ঘোষণা করত আর সেই ঋণ মকুবের সুবিধা মুষ্টিমেয় কৃষকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত বলে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন। তাঁর দাবি, কংগ্রেস এমন ঋণ মকুব করত, যে কিছু দিনের মধ্যেই কৃষক ফের ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়তেন। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ‘‘সম্প্রতি কয়েকটা রাজ্যে ঋণ মকুবের কথা বলে ভোট চাওয়া হয়েছিল। তার ফল কী হয়েছে আপনারা দেখছেন। আড়াই লাখ টাকা যাঁর ঋণ, তাঁর ১৩ টাকা মকুব হয়েছে। ... এটা মধ্যপ্রদেশের ঘটনা। কর্নাটকে ঋণগ্রস্ত কৃষকদের পিছনে পুলিশ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ মোদী সুর চড়িয়ে বলেন, ‘‘ এই হল কংগ্রেসের কৃষক ও কৃষি নীতি। আর এই কংগ্রেসকেই সমর্থন করেন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ’’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নরেন্দ্র মোদীর আক্রমণ অবশ্য শুধু কংগ্রেসকে সমর্থন করার প্রসঙ্গেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বাংলায় রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগ তুলেও এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেছেন নরেন্দ্র মোদী। মোদীর ভাষণ শুরু হওয়ার পাঁচ-সাত মিনিটের মধ্যেই এ দিন সভাস্থলে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছিল। সেই বিশৃঙ্খলা থামানোর চেষ্টা করতে গিয়ে মোদী প্রথমে জমায়েতে উদ্দেশে আবেদন জানান, ‘‘ আপনারা শান্ত থাকুন, মাঠ ছোট হয়ে গিয়েছে।’’ তার পরেই কটাক্ষের সুরে মোদীর মন্তব্য, ‘‘ এই দৃশ্য থেকে আমি বুঝতে পারছি, দিদি কেন হিংসার আশ্রয় নিচ্ছেন। গণতন্ত্র রক্ষা করার নাটক যাঁরা করেন, আপনাদের এই ভালবাসার ভয়েই তাঁরা নির্দোষ মানুষকে হত্যা করছেন।’’

আরও পড়ুন: ‘সন্ত্রাস থেকে সিন্ডিকেট ট্যাক্স’, ঠাকুরনগরের সভা থেকে দিদিকে বিঁধলেন মোদী

শুক্রবার যে বাজেট পেশ হয়েছে, সে প্রসঙ্গে ফিরে গিয়েও নাম না করে তৃণমূলকে আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ একর পর্যন্ত জমি রয়েছে যে সব কৃষকের, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ৬ হাজার টাকা করে ঢুকবে। কোনও সিন্ডিকেট ট্যাক্স দিতে হবে না। কোনও সিন্ডিকেট ট্যাক্স নয়, কোনও দালাল নয়, কোনও বাধা নয়। সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা।’’ মোদী আরও বলেন, ‘‘এ বার নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারছেন, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলাতে মোদী এত জোর দিচ্ছিলেন কেন।’’

মতুয়া মহাসঙ্ঘের ডাকে জনসভা করবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী আর উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গে মুখ খুলবেন না, এমনটা ভাবাই কঠিন ছিল। তেমন ভাবনার অবকাশও মোদী দিলেন না। দেশকে টুকরো টুকরো করে স্বাধীনতা আনার অভিযোগ তুলে প্রথম নাম করে কংগ্রেসের দিকে তোপ দাগলেন। তার পরে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হওয়া হিন্দু-বৌদ্ধ-জৈন-শিখ এবং পার্সি শরণার্থীদের জন্য। মতুয়াদের বড় অংশই এই উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর মধ্যে পড়েন। মতুয়া সমাবেশে দাঁড়িয়ে সেই জনগোষ্ঠীকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার পক্ষে জোরদার সওয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী। নাগরিকত্ব সংক্রান্ত ওই বিল লোকসভায় ইতিমধ্যেই পাশ করিয়ে নিয়েছে মোদী সরকার। রাজ্যসভায় পাশ হওয়া এখনও বাকি। ঠাকুরনগরের জনসভা থেকে তৃণমূলকে সরাসরি মোদীর বার্তা— নাগরিকত্ব বিল আটকাবে না, এই বিলকে সমর্থন করুন, রাজ্যসভায় পাশ হতে দিন। তৃণমূল অবশ্য একাধিক বার এই বিলের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement