তমলুক সংশোধনাগারের পথে তপন ঘোষ (উপরে) ও সুকুর আলি। বৃহস্পতিবার পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।
ফের জেলে গড়বেতার দুই সিপিএম নেতা তপন ঘোষ ও সুকুর আলি। ছোট আঙারিয়ার পরে, এ বার নন্দীগ্রামে খুনের জন্য অপহরণের মামলায়। ঘটনায় শাসক দলের ‘রাজনৈতিক মতলব’ দেখছে সিপিএম।
নন্দীগ্রামের আন্দোলন পর্বের এই মামলায় বাম আমলে অব্যাহতি পেয়েছিলেন তপন, সুকুর-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের ন’জন সিপিএম নেতা-কর্মী। দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে সেই মামলাতেই বৃহস্পতিবার তমলুকে পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (তৃতীয়) সুজয় সেনগুপ্তের এজলাসে আত্মসমর্পণ করেন তাঁরা। তাঁদের ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। আপাতত তাঁদের ঠাঁই হয়েছে তমলুক সংশোধনাগারে।
সিপিএমের নন্দীগ্রাম ‘পুনর্দখল’ পর্বে ২০০৭-এর ১০ নভেম্বর গোকুলনগরে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সমর্থকদের মিছিলে হামলার পরে, আহতদের গাড়িতে চাপিয়ে অপহরণের অভিযোগ রয়েছে তপন-সুকুরদের বিরুদ্ধে। সোনাচূড়ার কল্পনা মুনিয়ান, যাদব পাল, ভিকেন গায়েনকে গুরুতর জখম অবস্থায় পশ্চিম মেদিনীপুরের দিকে নিয়ে যাওয়ার পথে, এগরা শহরের কাছে স্থানীয় লোকজন গাড়ি আটকায়। আহতদের উদ্ধার করে এবং সিপিএম নেতা-কর্মীদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তপন-সুকুর-সহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করে এগরা থানার পুলিশ। খুনের জন্য অপহরণ-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়। পরে তদন্ত-ভার নেয় সিআইডি।
২০০৮ সালে সিআইডি যে চার্জশিট দেয়, তাতে অবশ্য নাম ছিল না তপন ঘোষ, সুকুর আলি, মেঘনাদ ভুঁইয়া, সনাতন মাজি, অভিরাম মাহাতো-সহ ন’জনের। বাকি পাঁচ জনও পরে জামিন পান। কিন্তু চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি সরকার পক্ষ চার্জশিট থেকে বাদ যাওয়া ন’জনের নাম ফের মামলায় জোড়ার জন্য তমলুক জেলা আদালতে আবেদন জানান। ১১ মার্চ সেই আবেদন মঞ্জুর হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন তপন-সুকুররা। তবে গত এপ্রিলে হাইকোর্ট তাঁদের আবেদন নাকচ করে দেয়।
এর পরে বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অভিযুক্ত ন’জনকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁরা না আসায় বুধবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। তারপরেই এ দিন সবাই আত্মসমর্পণ করেন।
এর আগে ছোট আঙারিয়া মামলায় জেল খেটেছেন তপন-সুকুর। ২০০১-এ গড়বেতার ছোট আঙারিয়া গ্রামে তৃণমূল কর্মী বক্তার মণ্ডলের বা়ড়িতে বেশ কয়েকজনকে গুম-খুনের অভিযোগ ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালে অবশ্য ওই মামলা থেকে দু’জনই বেকসুর খালাস পান। তপন-সুকুর দু’জনেই বর্তমানে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য। নন্দীগ্রামের মামলায় আর এক অভিযুক্ত মেঘনাদ ভুঁইয়া আবার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের ঘটনায় আমাদের জেলার নেতাদের অন্যায় ভাবে জড়ানো হয়েছিল। দিঘা থেকে ফেরার পথে এগরায় তৃণমূলের লোকজন ওঁদের ঘিরে ধরে মিথ্যা অপবাদ দেয়। তৃণমূল সরকারের আমলে রাজনৈতিক অভিসন্ধি থেকেই ফের ওঁদের ফাঁসানো হল।’’
তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর অবশ্য দাবি, ‘‘আহতদের অপহরণে তপন-সুকুরেরাই মূল অভিযুক্ত। বাম আমলে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। আশা করি, এ বার যথাযথ বিচার হবে।’’