লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশ হয়েছে সবে। রাজ্য জুড়ে ভোটব্যাঙ্কে ধস নামায় উদ্বেগে বাম নেতৃত্ব। এরই মধ্যে তাঁদের কপালের ভাঁজ বাড়িয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার খবর আসতে শুরু করেছে। এই প্রেক্ষিতে রাজ্যে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করে সংগঠন গোছাতে নেমে পড়েছেন বিজেপি নেতৃত্বও। বিজেপি-র নদিয়া জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দী বলেন, ‘‘২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখেই আমরা এগোচ্ছি। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিপিএম-এর নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা অমাদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করছেন।’’
সোমবারই সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র এলাকা কল্যাণী থেকে বেশ কিছু কর্মী বিজেপিতে যোগ দেন। কৃষ্ণনগরে জেলা কার্যালয়ে দলের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকার তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে বলেন, ‘‘কল্যাণী থেকে প্রায় পাঁচশো সিপিএম নেতা-কর্মী আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন। এদের অনেকেই ওখানকার সিপিএম নেতা অলোকেশ দাসের অনুগামী। এছাড়াও তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান-সদস্যরা আমাদের দলে যোগ দিতে চলেছে।’’ অন্দরের খবর তিনটি পঞ্চায়েতই করিমপুর ২ ব্লকের। এ ছাড়াও নাকাশিপাড়া ও চাপড়া ব্লকের কয়েকটি পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্যরা বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন।
কিন্তু সিপিএম কর্মীদের এই মোহভঙ্গ কেন? কেনই বা তারা রাজ্যের শাসকদলে যোগ না দিয়ে বিজেপিতে যাচ্ছেন? যোগদানকারীদের বক্তব্য, তৃণমূল বিরোধিতার পথ ছাড়তে চান না তাঁরা। কিন্তু এই মুহূর্তে বামেদের চেয়ে বিজেপি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গে। এই প্রেক্ষিতে তৃণমূল বিরোধিতা করতে গেলে বিজেপি-র ছাতার তলায় আসা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া, কল্যাণীর চঞ্চল পাল (প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ অলোকেশ দাসের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত) বলেন, ‘‘বাম নেতৃত্ব যে ব্যর্থ তা লোকসভা ভোটে আবারও প্রমাণিত হয়ে গেল। কেবল মাত্র নরেন্দ্র মোদীই পারেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।’’
বস্তুত নদিয়া জেলায় সাংগঠনিক ভাবে অনেকটাই পিছিয়ে থাকা বিজেপির ভিত যে ক্রমশ মজবুত হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছিল লোকসভা ভোটের আগেই। ১৬ মে লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, পঞ্চায়েত ভোটে যেখানে নদিয়া জেলায় বিজেপি-র ভোট ছিল মাত্র ৬ শতাংশ, সেখানে এ বার সামগ্রিক ভাবে ভোট বেড়ে হয়েছে ২২ শতাংশ। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগরের প্রার্থী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় পেয়েছিলেন প্রায় ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ভোট, আর রানাঘাট কেন্দ্রের প্রার্থী সুকল্যাণ রায় পেয়েছিলেন হাজার সাতান্ন ভোট। এবার সেখানে রানাঘাটের প্রার্থী সুপ্রভাত বিশ্বাস পেয়েছেন প্রায় ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ভোট আর কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী জলুবাবু পেয়েছেন প্রায় ৩ লক্ষ ২৯ হাজার ভোট, সিপিএমের থেকে মাত্র ৩৮ হাজার কম। উত্থানের যে গতি, তাতে আগামী দিনে বিজেপি রাজ্যে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা নেবে বলে মনে করছে রাজনীতির কারবারিরা। সিপিএম থেকে বিজেপিতে যোগদান এরই একটা দিক বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। তবে, সিপিএম প্রকাশ্যে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, ‘‘আমাদের দলের কেউ বিজেপিতে যোগ দেয়নি। বিজেপি নিজের ভোটারকে সিপিএম সাজিয়ে এসব করছে।”