লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের গাঢ় অন্ধকারেও আশার আলো দেখছে সিপিএম। লোকসভা ভোটে নদিয়ার বিভিন্ন এলাকায় এমন কিছু কর্মীর সন্ধান পেয়েছে তারা, যাঁরা শাসকদলের হুমকি-সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে মাটি আঁকড়ে লড়াই করেছেন। সক্রিয় এই কর্মীদের তুলে এনে সাংগঠনিক ভাবে নেতার মর্যাদা দেওয়ার দাবি উঠল সিপিএমের জেলা কমিটির বৈঠকে।
গত পঞ্চায়েত ভোটে নদিয়া জেলায় সিপিএম ভোট পেয়েছিল ৩৯ শতাংশ। এবার লোকসভা ভোটে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। দশ শতাংশ ভোট কমল কী ভাবে, তা নিয়ে মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরে নদিয়া জেলা কার্যালয়ে সূর্যকান্ত মিশ্রের উপস্থিতিতে দীর্ঘ পর্যালোচনা হয়। সেখানে দলের সম্পাদকমণ্ডলী থেকে শুরু করে শাখা কমিটিগুলিতে একশ্রেণির নেতার জনবিচ্ছিন্নতা ও নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সরব হন জেলা কমিটির অনেক সদস্য। প্রস্তাব ওঠে সংগঠনের সর্বস্তরে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে দিতে হবে। জেলা কমিটির এক নেতা বলেন, ‘‘সব কিছুরই খারাপের পাশাপাশি ভাল দিক থাকে। এই বিপর্যয়ে যেমন আমাদের দলের সংগঠনে বেশ কিছু দুর্বলতার দিক ধরা পড়েছে তেমনই একটা আশার আলোও দেখা গিয়েছে। অনেক জায়গাতেই সন্ত্রাস, হুমকি এমনকী প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বহু কমরেড মাটি কামড়ে লড়াই করেছেন। আমরা চাই এই ভূমিকায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মূল্যায়ণ করে বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্বে তুলে আনা হোক।’’
বস্তুত বয়স ও শারীরিক কারণে সেভাবে সক্রিয় নন এমন অনেকেই সিপিএমের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতেই ১৪ জনের মধ্যে ছয় থেকে সাত জন আছেন, যাঁদের বয়স সত্তরের কাছাকাছি। একই অবস্থা জেলা কমিটিতেও। বিপর্যয়ের দিনে এই সব নেতারা তেমন ভাবে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারেননি বলেই মনে করছে দলের একাংশ। অনেক নেতা আবার রাজনৈতিক কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে আছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই সব নিষ্ক্রিয় নেতাদের সরিয়ে দিয়ে সক্রিয় কর্মীদের তুলে আনার দাবি ওঠে এ দিনের বৈঠকে।
সিপিএম-এর জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে মূল্যায়ণ হওয়া দরকার। বৈঠকে যেমন কিছু দুর্বলতার কথা উঠে এসেছে তেমনই কিছু সম্ভাবনার কথাও উঠে এসেছে। যাঁরা বিভিন্ন রকম ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করলেন তাঁদের নেতৃত্বে তুলে আনার কথা উঠেছে বৈঠকে।”
যদিও বৈঠকের এই সব কথা বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে দলের নিচু তলায়। এক কর্মী বলেন, “নেতৃত্বে তরুণ প্রজন্মকে তুলে আনার কথা কবে থেকে শুনে আসছি। কিন্তু হচ্ছে কই। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর একই চর্বিতচর্বণ আর ভাল লাগে না।”