জঙ্গিপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) ও লালবাগে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (ডান দিকে)। ছবি দু’টি তুলেছেন অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায় ও গৌতম প্রামাণিক।
আর মাত্র তিনটে দিন। তারপরেই মুর্শিদাবাদের দু’টি আসনে ভোট গ্রহণ। তার আগে শেষ রবিবারে দক্ষিণবঙ্গের সংখ্যালঘু প্রধান পিছিয়ে পড়া এই জেলায় দাপিয়ে বেড়ালেন রাজ্য রাজনীতির রথী-মহারথীরা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সকলেই রোদ-গরম উপেক্ষা করে নিজেদের প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার করলেন। শানালেন একে অপরের বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণও। এ দিন মুর্শিদাবাদের তিন জায়গায় দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে ভোট চাইলেন তৃণমূূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সভা করলেন লালবাগে। সূর্যকান্ত মিশ্র ডোমকলে প্রচার সারলেন।
ষোড়শ সাধারণ নির্বাচনে জঙ্গিপুরে তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুলের সমর্থনে দুই জায়গায় প্রচার করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে গফুরপুর বরজের মাঠে ও পরে খড়গ্রামে সভা করেন মমতা। গফুরপুরের সভায় অভিনেতা দেবের হাজির থাকার কথা ছিল। কিন্তু শেষমেশ তিনি আসেননি। তবে দর্শকরা পুরোপুরি বঞ্চিত হননি। মঞ্চে হাজির ছিলেন অভিনেত্রী মুনমুন সেনের দুই কন্যা রিয়া ও রাইমা। ভাটিয়ালির সুরে দর্শকদের মন কাড়লেন বহরমপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী গায়ক ইন্দ্রনীল সেন। গানের পরই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নির্ভেজাল রাজনৈতিক বক্তৃতা শুরু করেন। কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “২০১১ সালে আমাদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ‘বিশ্বাসঘাতক’ কংগ্রেস গোঁজ প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল। তার বদলা চাই। দীর্ঘদিন ধরে এখানে গুন্ডারাজ চলছে। এতদিন সিপিএম ও কংগ্রেস ‘গট আপ’ ম্যাচ খেলে এসেছে। বিধানসভায় বামেরা, লোকসভায় কংগ্রেস জিতে এসেছে। পঞ্চায়েতও ওদের দখলে। আমরা কী করে কাজ করব? জেলায় উন্নয়নের স্বার্থে এ বারের ভোটটা আমাদের দিন।’’ জঙ্গিপুর কেন্দ্রে সরকারি হিসেবেই প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত। তাই তিনি সংখ্যালঘুদের জন্য রাজ্য সরকারের গত তিন বছরের কাজের ফিরিস্তি দেন।
জঙ্গিপুরে প্রচার সেরে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী মহম্মদ আলির সমর্থনে ডোমকলের গোবিন্দপুর কলেজ মাঠের সভা করেন তৃণমূলনেত্রী। এই সভায় তিনি বার কয়েক পরিবর্তনের কথা বললেন। তিনি বললেন, “সিপিএমের অপশাসন থেকে মুক্তি পেতে ডোমকলে পরিবর্তন চাই।” মাস খানেক ধরে একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ডোমকলের বিধায়ক সিপিএমের আনিসুর রহমান ‘কটূক্তি’ করেছিলেন। এ দিন মমতা তাঁর বক্তৃতায় প্রত্যাশামাফিক আক্রমণ শানান আনিসুরকে। মমতা বলেন, ‘‘এখানকার বিধায়ক কংগ্রেসের দয়ায় জিতে মুখে বড় বড় কথা বলছেন। এদের পরিবর্তন করুন’’ মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চে হাজির ছিলেন অভিনেত্রী মুনমুন সেনের দুই তনয়ারিয়া-রাইমা। তাঁদের দেখতে দর্শকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর নিশানা থেকে বাদ পড়েনি কংগ্রেসও। রাজ্যের মধ্যে কার্যত মুর্শিদাবাদেই ‘শিব রাত্রির সলতের মতো টিমটিম করে জ্বলতে থাকা’ কংগ্রসকে উদ্দেশ্য করে মমতা বলেন, ‘‘এ বার আর কেন্দ্র রাজ্যকে আর্থিক বঞ্চনা করতে পারবে না।” অভিনেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ মিঠুন চক্রবর্তীর কায়দায় মমতা বলেন, “বোতাম টিপুন এখানে, আর সরকার গড়ুন দিল্লিতে।”
মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে প্রায় একই সময়ে সভা ছিল সিপিএমের। সেখানে হাজির ছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ও আনিসুর রহমান। এ দিনও আনিসুর ছিলেন চেনা মেজাজেই। মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘উনি সভাটা অন্য দিন করলে আমরাও যেতাম। বিনা পয়সায় কিছু নায়ক-নায়িকার দেখা মিলত।’’ সূর্যবাবুরও আক্রমণের কেন্দ্রস্থলে ছিলেন তৃণমূলনেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আর যাই হোক নারী নির্যাতনে উনি ‘গোল্ড মেডেল’ পাবেন। কংগ্রেস বিজেপি’র হাত ধরে দিল্লিতে ছিলেন। ধৈর্য্য করে পাঁচটা বছর এখানে থাকুন।” বক্তৃতার শেষ লগ্নে সূর্যবাবু বলেন, ‘‘হিরা লালের লাশ, আপনার সর্বনাশ।’’
অন্যদিকে রবিবার বিকেলে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বদরুদ্দোজা খানের সমর্থনে লালবাগ আস্তাবল ময়দানে সভা করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “তৃণমূল সরকারকেও শিক্ষা দেওয়া দরকার ভোটের মধ্যে দিয়ে। মস্তানরাজ নারী নির্যাতন, বেকারত্বের প্রতিবাদে এ বারের ভোটে তৃণমূলের বিরোধিতা করুন।” বেকারত্ব ইস্যুতে সরকারকে এক হাত নিয়ে বুদ্ধবাবু বলেন, “লক্ষ লক্ষ বেকার প্রাথমিকে নিয়োগের পরীক্ষায় বসেছিল। কিন্তু কোনও ফল হল না।”
চুরির টাকায় হেলিকপ্টার ভাড়া করে চড়ছে বলে অভিযোগ তুলে তৃণমূলনেত্রীকে কটাক্ষ করেন বুদ্ধদেববাবু। তাঁর বক্তব্য, “আমরা চুরির টাকায় হাত দিই না। উনি কার টাকায় হেলিকপ্টারে চড়ছেন?”