এ ভাবেই বন্ধ নালা। —নিজস্ব চিত্র।
বহু চেষ্টা করেও বন্ধ করা যায়নি প্লাস্টিক প্যাকেটের ব্যবহার। শহর কৃষ্ণনগর তারই ফল ভোগ করছে এই বর্ষাতেও। হালকা বা মাঝারি বৃষ্টিতেই শহরের বেশ কিছু এলাকায় জল জমছে। হিসেব অনুযায়ী এখনও বর্ষা থাকবে আরও মাস খানেক। জমা জল, কাদায় অতিষ্ঠ শহরবাসী অভিযোগের আঙুল তুলছে পুরসভার দিকে।
এ দিকে পুরসভা আবার দায় চাপাতে চাইছে নাগরিকদের উপর। পুরসভার দাবি, কৃষ্ণনগর শহরের নিকাশি ব্যবস্থা আগের থেকে অনেক বেশি উন্নত হয়েছে। কিন্তু তাতে কী? প্রতিদিন জমে উঠা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে আটকে যাচ্ছে সেই সব নিকাশি নালার মুখ। বৃষ্টির জল বের হতে পারছে না।
এমনিতেই বহু প্রাচীন শহর কৃষ্ণনগর। আর সে কারণে নিতান্তই অপরিকল্পিত। নিকাশি ব্যবস্থাও অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক ভাবে গড়ে উঠেছে। তার উপর এই প্লাস্টিকের বাড়বাড়ন্ত। পাড়ার নালা থেকে বাজারের নর্দমা সর্বত্রই তার দাপট। বর্ষার আগামী দিনগুলোতে যে সমস্যা আরও বাড়বে, সে কথা পুরসভা থেকে শহরবাসী সকলেই জানেন। তবে পরিস্থিতির বিশেষ কোনও পরিবর্তন চোখে পড়েনি। পুরসভার অবশ্য দাবি তাদের তরফে চেষ্টার কোনও খামতি নেই। নিয়মিত নর্দমা পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু ঠিক তার পরমুহূর্তেই আবার এসে জড়ো হয় ক্যারিব্যাগের জঞ্জাল।
কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী যেখানে ৪০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ সেখানে পুরসভা কেন আইনি ব্যবস্থা নিতে পারছে না? পুরসভার দাবি, শুধু আইন করে পরিবেশ সুস্থ করা যায় না। তার জন্য নাগরিক সচেতনতাও খুব জরুরি। কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা বলেন, “ক্যারিব্যাগে ব্যবহারের বিরুদ্ধে আমরা লাগাতার অভিযান চালিয়েছি। সেই অভিযানে বাধা দিয়েছেন নাগরিকরাই। ক্রেতা, বিক্রেতা সকলেই আমাদের কর্মীদের বিরোধীতা করেছেন। বর্ষার সময় যাঁরা জল জমছে বলে পুরসভার নিন্দা করেন, সারা বছর তাঁরাই বাজারে গিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ দিতে বাধ্য করেন ব্যবসায়ীকে।”
অসীমবাবুর অভিযোগ, বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন পুরসভার কর্মীরা। পাত্রবাজারে একবার পুরকর্মীদের বঁটি নিয়ে তাড়া করেছিলেন মাছ বিক্রেতারা। সেদিন কোনও নাগরিক ওই অভিযানের পাশে দাঁড়াননি। এমনকী পুরবাসীর ন্যূনতম সচেতনতা নেই বলেও অভিযোগ করেন পুরপ্রধান। তাঁর কথায়, “প্রতিদিন সকালে পুরসভার গাড়ি ময়লা সংগ্রহ করতে যায় প্রত্যেকের দরজায়। তবু অধিকাংশ নাগরিকই পলিব্যাগে করে তাঁদের বাড়ির আবর্জনা ফেলে দিয়ে যান ঘরের পাশের নালায়। এ ভাবে চলতে থাকলে পুরসভা কী করবে?”
পলিব্যাগের ব্যবহার নিয়ে ক্রেতাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ব্যবসায়ীরাও। শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পাত্রবাজারে দেদার ব্যবহার পলিব্যাগের। ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্রেতাদের চাপেই তাঁরা ক্যারিব্যগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বাবসায়ী সমিতির সম্পাদক গোপাল বিশ্বাস বলেন, “আমরাও চাই না ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করতে। পরিবেশের কারণ ছাড়াও রয়েছে আর্থিক কারণ। ক্যারিব্যাগের জন্য আমাদের মাসে চার থেকে পাঁচশো টাকা খরচ হয়। সেটা বাঁচলে আমাদেরই ভাল। কিন্তু ক্রেতারা ক্যারিব্যগ না দিলে রাগারাগি করেন।”
ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পুরকর্মীরাও। গোপালবাবুই জানালেন, পুরসভার অনেক কর্মী এমনকী কাউন্সিলরকেও দেখা যায় ক্যারিব্যাগ দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে। তাঁর প্রশ্ন “তাহলে জনসাধারণকে সচেতনটা করবে কে?”