কথা ছিল সাড়ে তিনটেয় শুরু হবে তাঁর সভা। কিন্তু তিনি যখন মঞ্চে উঠলেন তখন সবে তিনটে দশ। ২২শে শ্রাবণকে স্মরণ করে ইন্দ্রনীল সেন শুরুতেই ‘তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে’ গেয়ে সভার সুরটি বেঁধে দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তারপরে তাঁর প্রায় পঁয়ত্রিশ মিনিটের বক্তব্যে রাজ্য সরকারের তিন বছরের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন। বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনের তুলনায় মাত্র তিন বছরে তাঁর সরকার কত বেশি কাজ করেছে, সেই খতিয়ান এদিন তাঁর বক্তব্যের সিংহভাগ জুড়ে ছিল। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি কী বললেন তার নির্যাস দেওয়া হল নীচে।
সরকারি সহায়তা
নদিয়া জেলায় মোট জনসংখ্যা ৫১ লক্ষ ৬৮ হাজার। এর মধ্যে ২৪ লক্ষ ৫৩ হাজার মানুষ কোনও না কোনও ভাবে সরকারি সাহায্য পেয়েছেন। মুর্শিদাবাদে জনসংখ্যা ৭১ লক্ষ ৪ হাজার। সরকারি সাহায্য পেয়েছেন ৪২ লক্ষ ৮২ হাজার।
ন্যায্য মূল্যের দোকান
নদিয়া জেলায় মোট ৯টি ন্যায্য মূল্যের দোকান হয়েছে। খুব তাড়তাড়ি এর একটি হবে। এখানে সাত থেকে সত্তর শতাংশ কম দামে মানুষ ওষুধ কিনতে পারবেন। ১০০ টাকার ওষুধ চল্লিশ টাকায় পাবেন। দুটো ডায়াগন্যাস্টিক সেন্টার হয়েছে। যেখানে মানুষ খুব কম খরচে ডায়ালিসিস করাতে পারবেন। বাইরে যেখানে সাত থেকে আট হাজার টাকা খরচ হয়, ডায়ালিসিস করাতে এখানে মাত্র সাতশো টাকায় তা করানো যাবে। কল্যাণীতে এইমস হচ্ছে। তার জন্য ১৫০ একর জমির ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার।
স্বাস্থ্য পরিষেবা
রাজ্য সরকার প্রতি বছর ১ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের হৃদযন্ত্রের কোনও সমস্যা, যেমন ফুটো থাকলে তা বিনামুল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে কৃষ্ণনগরের সার্কিট হাউসের এক কর্মীর সন্তানের এমন সমস্যার কথা শুনে তিনি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। গর্ভবতী মা থেকে একবছর পর্যন্ত শিশুর জন্য বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে সব শিশুর জন্মের পরই তাদের মায়ের মৃত্যু হয়, তাদের মাতৃদুগ্ধ পানের জন্য পিজি হাসপাতালে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা করা হয়েছে। নাম মধুর স্নেহ।
কর্মতীর্থ
নাকাশিপাড়া, কৃষ্ণনগর ১, তেহট্টে কর্মতীর্থের উদ্বোধন হল। সারা রাজ্যে এমন পাঁচশোটি হাব বা কর্মতীর্থ হবে। সেখানে পাঁচ লক্ষ ছেলেমেয়ে বিনা পয়সায় ব্যবসা করতে পারবেন। ইতিমধ্যে ৪৮টি হয়ে গেছে, আজ তিনটে হল। মোট একান্নটি কর্মতীর্থ হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলি খুব তাড়াতড়ি হয়ে যাবে।
স্টেডিয়াম
শান্তিপুর, নবদ্বীপ, রানাঘাট স্টেডিয়ামের জন্য জেলাশাসককে দ্রুত পরিকল্পনা পাঠাতে বলেছি, আমি দেখে নেব।
শিক্ষা
কল্যাণীতে ট্রিপলআইটি হচ্ছে। কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজকে ইউনিভার্সিটি একসেলেন্স ইন্সটিটিউট করা হচ্ছে। শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী প্রকল্পে সারা রাজ্যের মেয়েরা সাহায্য পাচ্ছে। শিক্ষাশ্রী ক্লাস ফাইভ থেকে এইট এবং কন্যাশ্রী এইট থেকে বারো ক্লাস পর্যন্ত। বছরে ৫০০ টাকা করে পাবে। ১৮ বছরের পর যারা পড়াশোনা করবে, তাদের এককালীন ২৫০০০ টাকা দেওয়া হবে।
শিল্প
ফুলিয়ায় ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট ফর হ্যান্ডলুম গড়া হচ্ছে। যুবকদের জন্য বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে। এখানে দশ লক্ষ প্রশিক্ষণ পাবেন। তাদের বিভিন্ন কাজের ব্যবস্থা হবে। কী কাজ ভাববেন না। সরকারি-বেসরকারি দেখবেন না। যা পাবেন নিয়ে নেবেন। ক্যাম্পাসিং করে নিয়োগ হবে।
জাতীয় সড়ক
জেলায় সব ঠিক মতো হচ্ছে। হ্যাঁ, সমস্যা আছে রাস্তা নিয়ে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক নিয়ে। ওটা আমার হাতে নয়। দিল্লির হাতে। তাঁরা কেন করছেন না? আমাদের সাংসদেরা দিল্লিতে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। কাজ না হলে ব্যবস্থা নেব। বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা রাজ্য থেকে কর আদায় বন্ধ করুক কেন্দ্র। চ্যালেঞ্জ করে বলছি, দেখিয়ে দেব উন্নয়ন কাকে বলে। ওই রাস্তা তিন মাসে ঠিক করে দেব।
বাস ট্যাক্সির ভাড়াবৃদ্ধি
কিছু লোক বাস ভাড়া, ট্যাক্সির ভাড়া বাড়ানোর জন্য বলছে। কিছু লোক বদমাইশি করে ধর্মঘট করছে, রাস্তায় বসে পড়ছে। অবরোধ, ধর্মঘট এ রাজ্যে চলবে না। কমিটি হয়েছে তারা দেখছে। তবে তেলের দাম বাড়ছে এটাও ঠিক।
কন্যাশ্রী দিবস
এক সময়ে বাংলা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে ১৮, ২২, ২৬ নম্বরে থাকত। এখন বিভিন্ন বিষয়ে এক নম্বরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাঁর মধ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পে সারা বিশ্বে এক নম্বরে। আগামী ১৪ তারিখে আমরা কন্যাশ্রী দিবস পালন করব। মাদার, ফাদার, ব্রাদার কত ডে পালিত হয়, কন্যাদের জন্য কিছু নেই। সারা রাজ্যে আড়াই লক্ষ কন্যাকে অনলাইনে তালিকাভুক্ত করা হবে। তৈরি করা হয়েছে কন্যাশ্রী বালা। সোনার নয় ওই বালা হাতে থাকলেই বোঝা যাবে সে প্রকল্পভুক্ত।