যৌন নিগ্রহে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ

বহরমপুরের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের একটি স্কুলে ছাত্রীদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগ দায়ের হওয়ার তিন দিন পরেও গ্রেফতার হননি অভিযুক্ত সুশান্তকুমার দে। ওই ব্যক্তিকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বানজেটিয়া এলাকার ওই স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখাল এসএফআই। বিক্ষোভে সামিল হন এলাকার বাসিন্দারাও। পরে অভিযুক্ত ব্যক্তির কুশপুত্তলিকা দাহ করে স্কুলের পড়ুয়ারা। বিক্ষোভ সামাল দিতে এসে বিক্ষোভকারীদের হাতে ঘেরাও হয় বহরমপুর থানার পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২২
Share:

স্কুলের সামনে ঘেরাও পুলিশ। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

বহরমপুরের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের একটি স্কুলে ছাত্রীদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগ দায়ের হওয়ার তিন দিন পরেও গ্রেফতার হননি অভিযুক্ত সুশান্তকুমার দে। ওই ব্যক্তিকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বানজেটিয়া এলাকার ওই স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখাল এসএফআই।

Advertisement

বিক্ষোভে সামিল হন এলাকার বাসিন্দারাও। পরে অভিযুক্ত ব্যক্তির কুশপুত্তলিকা দাহ করে স্কুলের পড়ুয়ারা। বিক্ষোভ সামাল দিতে এসে বিক্ষোভকারীদের হাতে ঘেরাও হয় বহরমপুর থানার পুলিশ। বহরমপুর থানার আইসি অরুণাভ দাসকে বানজেটিয়া এলাকায় এসে অবিলম্বে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে বলে বিক্ষোভকারীরা দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে আইসি ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিলে বিক্ষোভ উঠে যায়। বহরমপুর থানার আইসি বলেন, “ছাত্রীদের উপরে যৌন নিগ্রহের ঘটনায় স্কুল মালিকের বিরুদ্ধে ‘৭/৮ প্রোটেকশন অফ চাইল্ড ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স’ ধারায় মামলা করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার পরেই ওই ব্যক্তি বহরমপুর ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।”

গত রবিবার স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী ওই স্কুলের কর্ণধার সুশান্তকুমার দে’র বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ করে। তার পরেই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে এবং ওই পড়ুয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েক জন ছাত্রীও তাদের সঙ্গে ওই ব্যক্তি একই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে জানায়। সেই মতো মঙ্গলবার সুশান্ত কুমারের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ দায়ের করে চার জন আবাসিক ছাত্রী। পাশাপাশি স্কুলের পক্ষ থেকে সহ-অধ্যক্ষও অন্য একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তার পরেও ওই ব্যক্তি গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে!

Advertisement

এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সন্দীপন দাস বলেন, “ছাত্রীদের যৌন নিগ্রহের মতো স্পর্শকাতর বিষয়েও পুলিশ এত নীরব থাকতে পারে কী ভাবে! অভিযুক্ত ব্যক্তি স্কুলের বিভিন্ন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ফোন করে হুমকি দিচ্ছে অথচ পুলিশ ফোন ট্যাপ করে তাকে ধরতে পারছে না। ওই ঘটনায় পুলিশের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে কোনও ভাবে ওই ব্যক্তিকে আড়াল করার চেষ্টা করছে।”

পুলিশ ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে ধারায় মামলা দায়ের করেছে, তাতে গোটা বিষয়টি ‘লঘু’ করে দেখানো হয়েছে বলে আইনজীবীদেরও মত। প্রবীণ আইনজীবী পীযুষ ঘোষ বলেন, “ওই ব্যক্তি নাবালিকা ছাত্রীদের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটিয়েছে, তাতে পুলিশ ‘৩/৪ প্রোটেকশন অফ চাইল্ড ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স’ ধারায় মামলা করতে পারত। তাতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাত বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। কিন্তু গোটা বিষয়টি পুলিশ লঘু করে দেখানোর জন্য ‘৭/৮ প্রোটেকশন অফ চাইল্ড ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স’ দায়ের করেছে। ওই মামলায় অপেক্ষাকৃত কম শাস্তি সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল হেফাজত হতে পারে।” এ ব্যাপারে যদিও আইসি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ দিকে স্কুলের ওই ঘটনা চাপা দিতে ছাত্রী থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মুখ বন্ধ রাখার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। শিক্ষিকা অনিন্দিতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ফোন করে, মেসেজ পাঠিয়ে মুখ বন্ধ রাখার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে ওই মালিক তার কাছের মানুষকে পাঠিয়ে ছাত্রীদের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ারও হুমকি দিচ্ছে।” আজ শুক্রবার বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় গোপন জবানবন্দি দেওয়ার জন্য চার জন ছাত্রীকে আদালতে হাজির করানোর কথা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement