মোদী জ্যাকেট। ফাইল চিত্র।
দশ বছরের ছেলেটা দোকানের ভিতরেই কেঁদে গড়াগড়ি। এবার ঈদে তার চাই ‘মোদী জ্যাকেট’। নরেন্দ্র মোদীকে এখনও ভাল করে চিনে বা জেনে ওঠা হয়নি, তবু মোদী জ্যাকেট চাই-ই। অনেক চেষ্টা করেও মা বাবা মন ঘোরাতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত হাজার টাকা খরচ করে কিনে দিতেই হল মোদী জ্যাকেট। দেশের প্রধানমন্ত্রীর পোশাকে নিজের ছেলেকে দেখতে কোন বাবা-মার না ভাল লাগে!
শুধু কী দশ বছরের ছেলেটা! মোদী জ্যাকেটে আপ্লুত আট থেকে আশিসকলেই। এবার ঈদের বাজার মেতেছে ওই পোশাকেই।
বাজারে ঢুকলেই চোখে পড়ছে রঙ-বেরঙের মোদী জ্যাকেট, বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্য। কোনটা হাত কাটা, কোনটা ফুল-হাতা। লাল, নীল, সবুজ, হলুদপছন্দের রঙটা বেছে নিলেই হল। তবে সঙ্গে চাই মানানসই কুর্তা-পাজামা। ছোটদের জন্য অবশ্য পুরো সেটটাই পাওয়া যাচ্ছে একসঙ্গে। বড়দের সে সুযোগ নেই। তাই আবার আলাদা করে বানাতে হচ্ছে কুর্তা-পাজামা। তাতেই আক্ষেপ করছেন অনেকে। বিপুল শেখ নামে স্থানীয় এক যুবক তেমনই কুর্তা তৈরি করতে এসেছিলেন দর্জির কাছে। তিনি বললেন, “ছোটদের মতো পুরো সেটটা পাওয়া গেলেই ভাল হত। আলাদা করে বানাতে গিয়ে খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে।”
সে কথা সত্যি। বাজারে মোদী জ্যাকেট যথেষ্ট মহার্ঘ্য। ১২০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০০, ৩০০০ পর্যন্ত দাম চড়ছে। তবে ক্রেতারা খুব একটা পরোয়া করছেন না দামের ভ্রূকুটি। অন্তত তাঁদের কথায় সেরকমই মনে হল। বিপুল শেখই বললেন, “যখন যেটা চলছে, তখন সেটা না পরলে মানাবে? আমার সব বন্ধুরাই এবার ঈদে মোদী জ্যাকেট কিনেছে। আমিই বা বাদ থাকি কী করে?”
দশ বছরের ছোট্ট রনির মুখেও একই কথা। মোদীকে সে চেনে না। কিন্তু বন্ধুরা কিনেছে মোদী জ্যাকেট। তাই তারও চাই। ব্যবসায়ী জগবন্ধু পোদ্দার ও মহীতোষ দত্তরা জানালেন, অন্যান্য পোশাকের থেকে এবার ঈদের বাজারে মোদী জ্যাকেটের চাহিদা বেশি। কিন্তু কেন ওই পোশাকের এত চাহিদা সেটা বুঝতে পারছেন না তাঁরা। হয়তো এটাও ‘মোদী ক্যারিশ্মা’।
ভারতবর্ষে অবশ্য এ পোশাক আগেও ছিল। আর সে পোশাকের উদ্গাতা ছিলেন আর এক প্রধানমন্ত্রী। এক বছর আগেও এই জ্যাকেটকেই সকলে ‘জওহর কোট’ বলে চিনতেন। মোটামুটি ১৯৪০ সাল নাগাদ এর জন্ম। বাঁ পকেটে গোঁজা গোলাপ নিয়ে বিদেশেও সে পোশাক বিখ্যাত হয়েছিল ‘নেহরু জ্যাকেট’ নামে। হলিউডি ছবিতেও দু’একবার দেখা গিয়েছে তাকে। গত শীতেও বিয়ে বাড়ি যেতে হলে বাঙালি পুরুষের ভরসা ছিল ওই জওহর কোটেই। তবে হ্যাঁ, সেই জ্যাকেট আবদ্ধ ছিল খদ্দরের পরিচিত রঙে। মোদী জ্যাকেট যে তাকে মুক্ত করে দেদার রঙিন করে তুলেছে সে কথা মানতেই হবে।
এ দেশে পোশাকের ট্রেন্ড তৈরি হয় সাধারণত কোনও উৎসবের সময়। দুর্গাপুজো, দীপাবলি অথবা ঈদে। আর এই ট্রেন্ড সরাসরি তৈরি করেন বলিউডে নায়ক-নায়িকারা। ইদানীং টলিউডও পিছিয়ে নেই। তবে অনেকদিন পর দেশের প্রধানমন্ত্রী তৈরি করলেন ট্রেন্ড। লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই মোদী জ্যাকেটের বাজার তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এখন সেই বাজারই সরগরম। ঈদের আগে শেষ রবিবার দুপুর থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে কান্দি বাজারে। কেনাবেচাও হয়েছে ভালই।