বছরের শেষ রবিবার কোমর বেঁধে প্রচার

বাংলা বছরের শেষ রবিবার দিনভর প্রচারে ব্যস্ত থাক লেন প্রার্থীরা। মুর্শিদাবাদ জেলার তিনটি লোকসভা কেন্দ্র মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর ও বহরমপুর এবং নদিয়ার কৃষ্ণনগর, রানাঘাটে প্রায় সমস্ত দলের প্রার্থীরাই প্রচারে বেরিয়ে পড়েন সকাল-সকাল। বহরমপুরের বিষ্ণুপুর কালীবাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে ভোট প্রচারে বের হন ইন্দ্রনীল সেন। সেখান থেকে তিনি যান মধুপুর বাজারে। বাজার করতে আসা এলাকার মানুষের সঙ্গে পরিচয় করেন তিনি। ‘হ্যান্ডশেক’ করার জন্য কেউ কেউ তাঁর দিকে হাত এগিয়ে দেন। এক গাল হেসে হাত ছুঁয়ে পথ চলতে শুরু করেন ইন্দ্রনীলবাবু। মধুপুর-বিষ্ণুপুরের বিস্তৃত এলাকা ঘুরে বেড়ান তৃণমূলের প্রার্থী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১৫
Share:

বাংলা বছরের শেষ রবিবার দিনভর প্রচারে ব্যস্ত থাক লেন প্রার্থীরা। মুর্শিদাবাদ জেলার তিনটি লোকসভা কেন্দ্র মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর ও বহরমপুর এবং নদিয়ার কৃষ্ণনগর, রানাঘাটে প্রায় সমস্ত দলের প্রার্থীরাই প্রচারে বেরিয়ে পড়েন সকাল-সকাল।

Advertisement

বহরমপুরের বিষ্ণুপুর কালীবাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে ভোট প্রচারে বের হন ইন্দ্রনীল সেন। সেখান থেকে তিনি যান মধুপুর বাজারে। বাজার করতে আসা এলাকার মানুষের সঙ্গে পরিচয় করেন তিনি। ‘হ্যান্ডশেক’ করার জন্য কেউ কেউ তাঁর দিকে হাত এগিয়ে দেন। এক গাল হেসে হাত ছুঁয়ে পথ চলতে শুরু করেন ইন্দ্রনীলবাবু। মধুপুর-বিষ্ণুপুরের বিস্তৃত এলাকা ঘুরে বেড়ান তৃণমূলের প্রার্থী।

বহরমপুর কেন্দ্রের আরএসপি প্রার্থী প্রমথেশ মুখোপাধ্যায় এ দিন সকাল সাড়ে সাতটায় বহরমপুরের বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যান নওদা এলাকায়। সেখানে এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক জয়ন্ত বিশ্বাস, মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের প্রাক্তন সহকারি সভাধিপতি সিরাজুল ইসলাম, নওদা পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি আবদুল বারি মোল্লা-সহ বামফ্রন্টের বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নওদা থানার বালি-১ পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে বেড়ান।

Advertisement

দুপুরের পাতে...

মান্নান হোসেন: আম-ডাল, লালতে পাটের শাক, ডাঁটা চচ্চড়ি, উচ্ছে ভাজা,

আলু-পটলের সব্জি ও জিয়ল মাছের পাতলা ঝোল। শেষ পাতে টক দই।

প্রমথেশ মুখোপাধ্যায়: আম-ডাল, ডাঁটা চচ্চড়ি, হালকা মাছের ঝোল, চাটনি।

বদরুদ্দোজা খান: মসুরির ডাল, ভাত, ডাঁটা চচ্চড়ি, উচ্ছে ভাজা, মাছের ঝোল।

মহম্মদ আলি: ভাত, ট্যাংরা মাছের ঝোল, আম-ডাল, আলু-পটলের সব্জি, টক দই।

সুজিতকুমার ঘোষ: ডাল, ভাত, আলু ভাজা, লাউ-চিংড়ি, চারাপোনার ঝোল।

ইন্দ্রনীল সেন: ভাত, আলু ভাজা, সবজি, পোনা মাছের হালকা ঝোল।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রমথেশবাবু রোদ মাথায় এক টানা ঘুরে বেড়ানোর পরে একটু জিরিয়ে নিতে ডাকাতিয়াপোতা গ্রামের একটি বটগাছের নিচে গাজনের মেলার মণ্ডপে বসেন। তিনি বলেন, “রোদের যা তেজ বেড়েছে, তার উপরে খালি মাথায় ঘুরে বেড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। প্রচারে বেরিয়ে কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে ভোট চাইতে গিয়ে লবণ-জল চেয়ে খাচ্ছি। কারও বাড়িতে লেবু গাছ থাকলে সেই লবণ জলে একটু লেবুর রসও দিয়ে দিতে বলছি।”

এদিন সকাল সাড়ে ৭টায় ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে বহরমপুর লাগোয়া খাগড়াঘাটের বাড়ি থেকে বের হন মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী মান্নান হোসেন। বাড়ি থেকে সোজা চলে তিনি চলে যান ডোমকলের গোবিন্দপুরে। সেখানে একটি ধর্মীয় সভায় যোগ দেন তিনি। সেখান থেকে ডোমকলের নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বসে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন।

ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মহম্মদ আলি সকাল ৮টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে ইসলামপুরের দলীয় কার্যালয়ে যান। সেখানে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেন। সেখান থেকে গোবিন্দপুরের ওই ‘ইসলামিক মহাসভা ইস্তেমাতে’ যোগ দেন। পরে জলঙ্গির কালীগঞ্জ থেকে শুরু করে সাদিখাঁরদিয়াড় বাজার ঘুরে ঘোষপাড়া অঞ্চল ছুঁয়ে চোঁয়াপাড়ায় যান তৃণমূলের ওই প্রার্থী। পায়ে হেঁটেই ঘোরেন এলাকার বিভিন্ন গ্রাম। মহম্মদ আলি বলেন, “এই গরমে ডাবের জলের প্রতি আস্থা রাখছি আমি। যাতায়াতের পথে কোথাও ডাব দেখলে সংগ্রহ করে নিচ্ছি।”

মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী সুজিতকুমার ঘোষ বহরমপুর থেকে সকাল ১০টায় বের হয়ে পৌঁছন মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লকে। সেখানে বিভিন্ন গ্রাম তিনি পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ান। তাঁর কথায়, “ভোটারদের কাছে দলের বিভিন্ন নীতি-আদর্শের কথা বলার চেষ্টা করেছি।” সুজিতবাবুও ভরসা রাখছেন ডাবের জলে। সঙ্গে রয়েছে লেমন-বার্লির প্যাকেটও।

মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বদরুদ্দোজা খান অবশ্য রবিবাসরীয় সকালে রানিতলা থানার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চষে বেড়িয়েছেন। তেষ্টা মেটাতে যখন যেখানে পাচ্ছেন সেখানকার জল খেয়ে ফেলছেন। বাড়ি থেকে সকাল ৭টায় রওনা হয়ে রানিতলার আমডহরা ঘাট, হাজিগঞ্জ, বানডারা গ্রাম পায় হেঁটে ঘুরে সেখান থেকে গাড়িতে নারায়ণপুর। এর পরে সোনাডাঙা, পলাশি, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, কোলানের রমনাপাড়া-বেলজারপাড়া-তপিডাঙা-ফরিদপুর হয়ে বালিগ্রাম অঞ্চলে গিয়ে সন্ধ্যায় কর্মীদের নিয়ে সভা করেছেন।

অন্য দিকে রবিবার কৃষ্ণনগরের নাগাদিতে মৌলবীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তৃণমূলের প্রার্থী তাপস পাল। পরে দেবগ্রামে একটি দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে স্থানীয় একটি গাজনের উৎসবে যোগ দেন তিনি। মূলত রবিবার দিনভর তিনি কালীগঞ্জ বিধানসভা এলাকাতেই ছিলেন। তাপসবাবু বলেন, “ছুটি কিংবা উৎসবের আনন্দে থাকার কোনও জায়গা নেই। ছুটির দিনে বেশিরভাগ মানুষ যেহেতু নিজের এলাকেই থাকেন তাই এই সময় টানা প্রচারের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।”

কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ওরফে জলুবাবু এ দিন কৃষ্ণনগরের পাত্রবাজার, বড়বাজার, বেলেডাঙা বাজার, স্টেশন অ্যাপ্রোচ রোডে পায়ে হেঁটে প্রচার করেন। দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য ইস্কনে চলে যান। বিকেলে হুডখোলা জিপে জলুবাবু মিছিলে বেরিয়েছিলেন।

জঙ্গিপুরের কংগ্রেস, সিপিএম ও তৃণমূলের প্রার্থীরা জানিয়েছেন, পয়লা বৈশাখ ঘুনাথগঞ্জ ও জঙ্গিপুর শহরে প্রচার করবেন তাঁরা। কারণ বছরের প্রথম দিন হালখাতা উপলক্ষে ওই দুই শহরে ভাল ভিড় হয়। গ্রাম থেকেও ওই দিন বহু মানুষ আসেন। প্রচারের এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নন কেউই। রবিবর কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় দিনভর প্রচার সারলেন লালগোলার গ্রামগুলিতে। সিপিএম প্রার্থী মুজাফ্ফর হোসেন রবি ও সোমবার দু’দিনই প্রচার সারছেন সুতিতে। বসে নেই তৃণমূল প্রার্থী শেখ নুরুল ইসলামও। রবিবার তিনি সুতি ১ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে ভোট প্রচারে ঘুরেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement