পঞ্চায়েতের অনুমোদন নেওয়ার ‘রেওয়াজ’ই নেই, কবুল প্রধানের

গ্রাম পঞ্চায়েতের কোনও অনুমতি ছাড়াই তৈরি হয়েছিল লালগোলার মকিমনগরের অননুমোদিত মাদ্রাসা। বর্ধমান কাণ্ডের সুতোয় জড়িয়ে পড়া ওইমাদ্রাসার ঠিকুজি কুলুজির খোঁজ নিতে গিয়ে এমনই তথ্য পাচ্ছেন গোয়েন্দারা। তবে, মকিমনগর একা নয়। মুর্শিদাবাদের আনাচকানাচে এ ধরনের মাদ্রাসার সংখ্যা যে কম নয়, তদন্তে উঠে এসেছে তা-ও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৩৪
Share:

গ্রাম পঞ্চায়েতের কোনও অনুমতি ছাড়াই তৈরি হয়েছিল লালগোলার মকিমনগরের অননুমোদিত মাদ্রাসা।

Advertisement

বর্ধমান কাণ্ডের সুতোয় জড়িয়ে পড়া ওইমাদ্রাসার ঠিকুজি কুলুজির খোঁজ নিতে গিয়ে এমনই তথ্য পাচ্ছেন গোয়েন্দারা। তবে, মকিমনগর একা নয়। মুর্শিদাবাদের আনাচকানাচে এ ধরনের মাদ্রাসার সংখ্যা যে কম নয়, তদন্তে উঠে এসেছে তা-ও।

শুধু মাদ্রাসা নয়, গোয়েন্দা সূত্রে খবর, খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, জেলার বিভিন্ন এলাকায় বহু বাড়ি, প্রেক্ষাগৃহ এমনকী দু-তিনতলা ভবনও গড়ে উঠেছে স্থানীয় পঞ্চায়েতের অনুমতির তোয়াক্কা না করে। এ ব্যাপারে পঞ্চায়েতগুলির নজরদারির অভাবও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে গোয়েন্দা রিপোর্ট। অনেক ক্ষেত্রে ওই বাড়ি বা ভবনগুলি গড়ে উঠেছে কৃষি জমির উপরেই। সে ক্ষেত্রে ভুমি ও ভুমি সংস্কার আইনের নিয়ম না মেনেই তা গড়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সরকারি নিয়মানুযায়ী যা কিন্তু একেবারে বেআইনি।

Advertisement

পঞ্চায়েত আইন বলছে, টালি, টিনের ছাউনি-সহ ১৮ বর্গ মিটারের বেশি যে কোনও বাড়ি তৈরির জন্য পঞ্চায়েতের অনুমতি প্রয়োজন। তার জন্য নির্মাণকারীকে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকাও জমা রাখতে হয় সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতে। করের হার, ১০০ বর্গ মিটারের পাকা ঘর তৈরির জন্য ৩০ থেকে ১০০০ টাকা। ৩০০ বর্গ মিটারের বেশি এলাকা জুড়ে বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে আবার পঞ্চায়েত কোনও অনুমতিই দিতে পারে না। সে ক্ষেত্রে পরিকল্পনা-সহ আবেদন পাঠাতে হবে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির কাছে। পঞ্চায়েত সমিতি তা ভেটিং করার জন্য পাঠাবে জেলা পরিষদের কাছে। সশ্লিষ্ট আইনে পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপ প্রধানকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তাঁরা যে কোনও নির্মীয়মান বাড়ি পরিদর্শন করতে পারবেন। অনুমতি ছাড়া বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে পুলিশের সাহায্য নিয়ে তা রুখতেও পারবেন তাঁরা বলে জানা গিয়েছে।

গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতে এই ক্ষমতা থাকা সত্বেও বাস্তবে তা বাস্বায়িত হচ্ছে না কেন? মকিমনগর লালগোলার ময়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে। ওই পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের দিপীকা সাহা স্পষ্টই বলছেন, “এই পঞ্চায়েতে দীর্ঘদিন ধরে প্ল্যান এস্টিমেট পাশ করানোর ব্যাপারে আইন মানার রীতি নেই। এটাই রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে। অনুমতি না নিয়েই বহু বাড়ি তৈরি হয়েছে।” তবে মকিমনগর মাদ্রাসা তৈরির ক্ষেত্রেও পঞ্চায়েত কিছুই জানত না বলে তাঁর দাবি। গোয়েন্দাদের আনাগোনা শুরু হওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েতে আলোচনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে এলাকায় অবৈধ নির্মাণ নিয়ে নজরদারিও এ বার বানানো হবে। রঘুনাথগঞ্জ ২ ব্লকের বড়শিমুল দয়ারামপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএম-এর কাইজার হোসেন বলেন, “এ ব্যাপারে আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। নানা কাজের চাপে নজরদারির ব্যবস্থাও প্রায় নেই বললেই চলে।”

জেলার সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদারও মানছেন, “এই ব্যাপারে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির ঢিলেমি রয়েছে। ফলে অবৈধ নির্মাণ বাড়ছে, নিরাপত্তার ঘাটতিও দেখা দিচ্ছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “পঞ্চায়েতে বিধিবদ্ধ আইন থাকলেও ভবন নির্মাণের ব্যাপারে পঞ্চায়েতগুলি পুরোপুরি উদাসীন। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপও রয়েছে কোথাও কোথাও।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement