ধারাবাহিক ব্যর্থতার পরে পিতা-পুত্রের হাত ধরে ‘অধীর-গড়’ দখলে মরিয়া পিসি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধায়। ‘পিতা’, অর্থাৎ সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রাক্তন সাংসদ মান্নান হোসেন এখন মুর্শিদাবাদ তৃণমূলের সভাপতি। জেলায় কার্যত শেষ কথা এখন তিনিই বলবেন। আবার মান্নান-পুত্র সৌমিক হোসেন এখন রাজ্য যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক। যুব তৃণমূলের সভাপতি পদে অভিষেকের পর মুর্শিদাবাদ জেলা থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য সফর শুরু করতে চলেছেন। সৌমিক বলেন, “আগামী ১২ নভেম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সফর শুরু করছেন। সেই সফরের প্রথম যুব সমাবেশটাই হবে ডোমকলে।”
উল্লেখ্য, গত বিধানসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ডোমকল কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তৎকালীন সাংসদ-পুত্র সৌমিক হোসেন। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতা রাহুল গাঁধীর মনোনীত প্রার্থী হিসাবে তিনি ভোটে লড়েছিলেন। সিপিএম প্রার্থী, তথা তৎকলীন মন্ত্রী আনিসুর রহমানের কাছে সৌমিক পরাজিত হন। গত লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৎকালীন কংগ্রেস সাংসদ মান্নান হোসেনও পরাজিত হন সিপিএমের প্রার্থী বদরুদ্দোজা খানের কাছে। দু’টি ক্ষেত্রেই পরাজয়ের জন্য কংগ্রেসের অন্তর্ঘাতকে দায়ী করে পিতা-পুত্র বরাবরের দল ছেড়ে তৃণমূলে
যোগ দেন।
ফলে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে অনিবার্য ভাবেই ডোমকল কেন্দ্রটি মান্নান-সৌমিকের কাছে পাখির চোখ। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতায় তৃণমূল ভবনে রাজ্য যুব তৃণমূলের কর্মিসভার পর সন্ধ্যায় অভিষেক কালীঘাটে তাঁর কার্যালয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার দুই যুবনেতাকে নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক করেন। ওই দু’ জনের এক জন রাজ্য যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সৌমিক হোসেন। অন্যজন মুর্শিদাবাদ জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি অশেষ ঘোষ। দলীয় সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে অভিষেক আক্ষেপ করেন যে, রাজ্যের সব জেলায় তৃণমূল সফল। ব্যতিক্রম শুধু মুর্শিদাবাদ। সেখানে দল সে ভাবে সংগঠিত হতে পারেনি। সেই কারণেই অভিষেকের কাছে মুর্শিদাবাদ জেলা বড় চ্যালেঞ্জ!
বছর খানেক আগে বহরমপুর শহরের সুইমিং পুলের মাঠের যুব সমাবেশে অভিষেকের মুখে এই একই আক্ষেপ শোনা গিয়েছিল। দলীয় সূত্রে খবর, কালীঘাটের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবারের ঘরোয়া বৈঠকে সৌমিককে অভিষেক পরামর্শদেন যে, মুর্শিদাবাদে সৌমিককেই অধীর চৌধুরীর বিকল্প হতে হবে। তার জন্য দরকার হলে মুর্শিদাবাদে প্রতি মাসে আসবেন অভিষেক।
যা শুনে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাসের কটাক্ষ, “রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে অভিষক বন্দ্যোপাধ্যায় নেতা হননি। তিনি নেতা হয়েছেন তাঁর পিসি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৌলতে। ফলে তাঁর মুখ থেকেই তো এরকম বালখিল্য কথা বের হওয়ায় স্বাভাবিক।”
ওই বৈঠকের পরেই ১২ নভেম্বর ডোমকলে জেলা যুব সমাবেশ থেকে অভিষেকের রাজ্য সফরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সমাবেশ সফল করার জন্য প্রাথমিক শর্তই হল প্রতিটি ব্লক কমিটির তৎপরতা। কিন্তু অশেষ ঘোষ জেলা সভাপতি হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত যুব তৃণমূলের কোনও ব্লক কমিটি গঠন করা হয়নি। অশেষ বলেন, “সপ্তাহ খানেক হল জেলা সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছি। তারপর ২৬টি ব্লকের মধ্যে ১৩টি ব্লকে কর্মিসভা করেছি। আগামী ৯ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিটি ব্লক কমিটি গঠন করা হয়ে যাবে। ফলে ডোমকলের যুব সমাবেশ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার মতো কোনও কারণ নেই।”
ফলে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে পিসি-ভাইপোর কাছে ক্রমশ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন মুর্শিদাবাদের পিতা-পুত্র।
বইমেলা। শনিবার মুর্শিদাবাদ জেলার দু’টি এলাকায় দু’টি বইমেলার উদ্বোধন হতে চলেছে। বিকাল চারটেয় নবগ্রাম থানার পাঁচগ্রাম উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল লাগোয়া একটি মাঠে বইমেলার উদ্বোধন হবে। ৩ দিনের ওই মেলা চলবে শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত। ভাই-বোন ঝংকার সঙ্গীত বিদ্যালয় আয়োজিত প্রথম পাঁচগ্রাম বইমেলায় কবিতা পাঠ ও সঙ্গীত পরিবেশন- সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও রয়েছে। আজ, শনিবার হরিহরপাড়া ফুটবল মাঠে উদ্বোধন করা হবে চতুর্থ বছরের হরিহরপাড়া বইমেলা। হরিহরপাড়া জনকল্যাণ সমিতি আয়োজিত চার দিনের ওই মেলা চলবে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলার দিনগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি থাকছে আলোচনাচক্র।