নেতাদের মহাজোট, তবু জিতল পুলিশই

মাঝ মাঠ থেকে উড়ে আসা বলটা ‘রিসিভ’ করতে না পেরে যে এমন বকুনি জুটবে কে জানত! ফরোয়ার্ড ব্লকের যুবনেতা কাবাতুল্লা শেখ খেলছিলেন মিড ফিল্ডে। দলের ক্যাপ্টেন রানিনগর ১ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি নারায়ণ দাস বললেন, “কাবাতুল্লা, এ রকমটা চলতে থাকলে কিন্তু গো-হারা হারতে হবে।” সিপিএম, বিজেপি, এসইউসিআই, আরএসপি, পিডিসিআই, মুসলিম লিগ, তৃণমূলের নেতারা অবশ্য পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললেন, “লড়ে যাও। আমরাই জিতব।”

Advertisement

সুজাউদ্দিন

ডোমকল শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৬
Share:

মাঝ মাঠ থেকে উড়ে আসা বলটা ‘রিসিভ’ করতে না পেরে যে এমন বকুনি জুটবে কে জানত!

Advertisement

ফরোয়ার্ড ব্লকের যুবনেতা কাবাতুল্লা শেখ খেলছিলেন মিড ফিল্ডে। দলের ক্যাপ্টেন রানিনগর ১ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি নারায়ণ দাস বললেন, “কাবাতুল্লা, এ রকমটা চলতে থাকলে কিন্তু গো-হারা হারতে হবে।” সিপিএম, বিজেপি, এসইউসিআই, আরএসপি, পিডিসিআই, মুসলিম লিগ, তৃণমূলের নেতারা অবশ্য পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললেন, “লড়ে যাও। আমরাই জিতব।”

১৫ অগস্ট মুর্শিদাবাদের ইসলামপুরের নসিপুর মাঠে ডান-বাম সব দলের নেতারা খেললেন একটাই দলে। রাজনৈতিক একাদশ। উল্টো দিকে ছিল ইসলামপুর থানার পুলিশ। শেষ হাসিটা অবশ্য পুলিশই হেসেছে। নেতাদের এক গোলে হারিয়ে পুলিশের ফুর্তি দেখে কে! গোল খেয়ে আরএসপি নেতা সরিফুল ইসলাম কিছুটা বিমর্ষ। টিপ্পনি শুনতে হয়েছে, “নেতারাই চিরকাল পুলিশের উপর ছড়ি ঘোরায়, আর আপনি মশাই পুলিশের কাছে গোল খেয়ে গেলেন?”

Advertisement

শুক্রবার টানা বৃষ্টিতেও নেতা-পুলিশের লড়াই দেখতে ছাতা মাথায় ভিড় উপচে পড়েছিল। দর্শকরা অবাক হয়ে দেখলেন, কখনও আনন্দে তৃণমূলের নেতাকে জড়িয়ে ধরছেন সিপিএমের নেতা। কখনও আবার গোল ‘মিস’ করা কংগ্রেসিকে সান্ত্বনা দিয়ে গেলেন বিজেপি নেতা। রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক সৌজন্য যখন তলানিতে, তখন এ রকম একটা ফুটবল ম্যাচ করে অন্য বার্তা দিতে পেরে খুশি ইসলামপুর।

স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রতি বছরই সংহতি কাপের আয়োজন করে ইসলামপুর বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি। দু’বছর খেলা বন্ধ থাকার পরে, ১২ অগস্ট প্রশাসনের ডাকা এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সংহতি কাপ এ বার হবে। ইসলামপুর থানার বনাম সব দলের নেতাদের নিয়ে তৈরি রাজনৈতিক একাদশ।

রানিনগর-১ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি নারায়ণ দাস বলছেন, “প্রথমে মনে হয়েছিল কাজটা খুব কঠিন হবে। সাহস করে একে একে নানা দলের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে দেখি, সকলেই আগ্রহী। এরপর সব দলের লোকজনকে নিয়ে ইসলামপুর বাসস্ট্যান্ডে একটি বৈঠক করে দল তৈরি করেছিলাম।” সিপিএমের স্থানীয় জোনাল কমিটির সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, “রাজনীতিতে তো এমনটাই হওয়া উচিত।” একই মত আরএসপির সংযুক্ত কিষাণ সভার রাজ্য কমিটির সদস্য সরিফুল ইসলামেরও। রানিনগর ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মফিজুল ইসলাম বলেন, “আগামী দিনেও এরকম কোনও খেলা হলে আমরা যোগ দেব।”

শুক্রবার মাঠে খেলা দেখতে উপস্থিত ছিলেন ভগীরথপুর হাসপাতালের চিকিৎসক আতিকুর রহমান। আতিকুর বলেন, “ডোমকলের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে রাজনীতির অনেক খেলা দেখেছি। নিবার্চনের সময় একদিনে ১৪ জনকে খুন হতেও দেখেছি। মাইকে এক দলের বিরুদ্ধে অন্য দলকে বিষোদগারও করতে শুনেছি। কিন্তু এক মাঠে সব দলের নেতারা একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছেন, এমনটা এর আগে কখনও দেখিনি।”

আর নেতাদের হারিয়ে পুলিশ কী বলছে? ডোমকলের এসডিপিও অরিজিৎ সিংহ বলেন, “মহাজোট করে নেতারা খেলেছেন ভালই। তবে পুলিশের সঙ্গে পেরে ওঠা যে কঠিন সেটাও ওঁরা বিলক্ষণ বুঝেছেন।” আর জবাবে নেতারা বলছেন, “আসুক ফের ১৫ অগস্ট। আমরাও বুঝিয়ে দেব কত বলে কত গোল।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement