দলের কোন্দলকেই দুষলেন মন্ত্রী

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যে ১০ হাজার মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়া হবে। সেই ঘোষণাকে কার্যত খারিজ করে দিলেন রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক রাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৪০
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যে ১০ হাজার মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়া হবে। সেই ঘোষণাকে কার্যত খারিজ করে দিলেন রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক রাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা। মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ রবীন্দ্র ভবনে আসন্ন পুর নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সংখ্যালঘু শাখা আয়োজিত এক কর্মী সভায় সংখ্যলঘু সেলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি নিজামউদ্দিন মণ্ডলকে পাশে রেখে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “রাজ্যে যে ২৩৪টি মাদ্রাসাকে ইতিমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সেগুলির উন্নয়নের জন্য কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। তাই আর নতুন করে কোনও মাদ্রাসাকে রাজ্যে অনুমোদন দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে না।” তিনি বলেন, “ওই ২৩৪টির মধ্যে থেকে আমরা ১৭২টি মাদ্রাসাকে বেছে নিয়েছি। সেগুলোর পরিকাঠামো ও শিক্ষাগত উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে তিন কোটি টাকা বরাদ্দও করেছে।”

Advertisement

এ দিন সংখ্যালঘু সংগঠনের জেলা সভাপতি মন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদে ৫১টি মাদ্রাসার অনুমোদন চেয়ে আবেদন দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে। সেগুলি যাতে অনুমোদন পায় তার জন্য মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন তিনি। এ দিন পুর-নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত তৃণমূলের এই সংখ্যালঘু সভায় জেলা নেতাদের মধ্যে হাজির ছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি ও সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য কার্য্যকরী সভাপতি মহম্মদ আলি। যদিও স্থানীয় নেতাদের তেমন কাউকে ওই সভায় দেখতে পাওয়া যায়নি।

তিনি এ দিন বলেন, “মুর্শিদাবাদে সংখ্যালঘু গরিষ্ঠ দু’টি পুরসভা হল জঙ্গিপুর ও ধুলিয়ান। এই দু’টি পুরসভাকে দখল করতে হলে সংখ্যালঘু সংগঠনকে আরও সুসংহত ও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।” তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, “কারও কোনও গোষ্ঠী নয়, মান্নান হোসেনকে সামনে রেখেই লড়তে হবে পুর-নির্বাচন।” তাঁর কথায়, “দলের নির্দেশ কোনও শাখা সংগঠন জেলায় সমান্তরাল সংগঠন হিসেবে কাজ করতে পারবেন না। এতে ভুল বার্তা যাচ্ছে জেলার মানুষের কাছে। জেলা সভাপতি হিসেবে মান্নান হোসেনের অনুমতি ছাড়া কোথাও কোনও নেতা দলীয় কর্মসূচী নিতে পারবেন না।”

Advertisement

প্রসঙ্গ টেনে এ দিন মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের চলতে থাকা নেতাদের গোষ্ঠী কোন্দলকে এক হাত নিয়েছেন রাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন। তিনি বলেন, “সারা রাজ্যে যখন দলের শ্রীবৃদ্ধি ঘটছে, তখন এ জেলায় ‘জোড়াফুল’ ফুটছে না শুধুমাত্র নেতাদের কোন্দলের জন্য। মনে রাখতে হবে রাজনীতিটা ব্যবসা নয়। জেলায় পিছন থেকে ছুরি মারার চেষ্টা করছেন একে অন্যকে।” তাঁর নির্দেশ, “এই লবিবাজি ছাড়ুন। কংগ্রেসের লবিবাজি করে এই অবস্থা হয়েছে। শুধু মঞ্চে বসে ভাষণ দিয়ে দল চলে না। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। দলাদলি ছাড়তে হবে। নেতা বা মন্ত্রী হয়ে কেউ বিরাট কিছু হয়ে যাননি।” কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, বামেদের কথায় পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ৩৮টা মামলা করেছিল। সাড়ে ৪ মাস জেল খেটেছিলেন তিনি। কিন্তু কখনও তিনি মানুষের পাশ থেকে সরে যাননি।

মুর্শিদাবাদে পুর নির্বাচন যে খুব সহজ হবে না তা তিনি এ দিন মেনে নিয়েছেন। তবে তাঁর বিশ্বাস “এক হয়ে জেলায় দলের কাজ করুন। তবেই জোড়াফুল ফুটবে। নিজেদের স্বার্থে কাজ করলে হবে না।”

বিজেপির উত্থানকে কালো দিন বলে বর্ণনা করে জেলায় সংখ্যালঘুদেরও এক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “খুনোখুনি করে সংখ্যালঘুরা নিজেদের সমাজের ক্ষতি করছেন।” দলের এক নেতার নাম উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “গত লোকসভা নির্বাচনের সময় ওই নেতা বহরমপুরে দলের হয়ে যেভাবে প্রচার করেছিল দল তা সমর্থন করেনি। আমি নিজে বার বার ওই নেতাকে বেশি কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম। তিনি তা শোনেননি।” তাঁর ফলেই বহরমপুরে তৃণমূল হেরেছে বলে তিনি মনে করেন। তাই দলের নেতাদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, “এই দাদাগিরি চালচলন জেলায় বদলাতে হবে।”

দলের নেতাদের চালচলন নিয়ে মন্ত্রী এ দিন যত বারই সোচ্চার হয়েছেন তত বারই কানায় কানায় ভরা রবীন্দ্রভবন সাধারণ কর্মীদের হাততালিতে ফেটে পড়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement