স্থানীয় প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে জোর করে জমি দখলের অভিযোগ তুলে নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানায় গিয়েছিলেন চিচুড়িয়া গ্রামের এক বিধবা মহিলা ও তাঁর বছর আঠাশের মেয়ে। পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় নদিয়া জেলা আদালতে গিয়ে ওই প্রোমোটারদের নাম করে বাড়িতে হামলা চালানো, মারধর ও শ্লীলতাহানির মামলা দায়ের করে এসেছেন মা-মেয়ে। তারপরেও অভিযুক্তরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন বহাল তবিয়তে। উপরন্তু তাঁরা ওই দুই মহিলার বাড়িতে পুনরায় হামলা চালিয়ে সামনে থেকে গাছ কেটে নিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ।
জেলা পুলিশের ডিএসপি (সদর) অভিষেক মজুমদার বলেন, ‘‘কোর্টে মামলা হয়েছে। পুলিশ কেন অভিযোগ নেয়নি তা খতিয়ে দেখা হবে।’’
চিচুড়িয়া গ্রামের অভিযোগকারী ওই মহিলার স্বামী ও তাঁর এক আত্মীয় বেশ কয়েক দশক আগে গ্রামেই ২২১ শতক জমি কেনেন। ওই জমির ৭০ শতকের মধ্যে রয়েছে একটি বাড়ি আর বাগান, বাকিটা আবাদি। গত বছর ডিসেম্বরে স্বামীর মৃত্যু হয় হৃদরোগে। এরপরই ওই জমি নিয়ে জট বাধে। নাকাশিপাড়া থানা এলাকার জমি বেচাকেনায় যুক্ত কয়েকজন ওই জমি কিনে নিয়েছেন দাবি করে দখল নেওয়ার চেষ্টা করেন। মহিলার বক্তব্য, ‘‘আমার স্বামী কাউকে জমি বিক্রি করেননি। ওরা ভুয়ো কাগজপত্র দেখিয়ে ওই দাবি করছে বলে জেলা আদালতে দেওয়ানি মামলা করেছি। কিন্তু এরই মধ্যে প্রোমোটাররা পুলিশের সক্রিয় সহযোগিতায় জমির দখল নিতে মরীয়া হয়ে উঠেছে।”
অভিযোগ, চলতি মাসের ৩ তারিখে বেলা ১১টা নাগাদ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে জমির দখল নিতে ওই মহিলার বাড়িতে চড়াও হন জমি বেচাকেনায় যুক্ত আট ব্যক্তি। তাঁদের চমকানিতে বাড়ি ছেড়ে পালান মহিলার ছেলে। বাড়িতে ওই মহিলা ও তাঁর এক মেয়ে ছিলেন। অভিযোগ, তাঁদের দু’জনকেই মারধর করেন হামলাকারীরা। ভাঙচুর চলে বাড়িতে। হামলাকারীরা বাগান থেকে গোটা তিরিশেক মেহগনি ও সেগুন গাছ কেটে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। মেয়ের কথায়, ‘‘ওরা আমাকে ধর্ষণের হুমকি দেয়। ভয়ে চুপ করে থাকি। ঘটনাস্থলে নাকাশিপাড়া থানার তিনটি পুলিশ ভ্যান উপস্থিত ছিল। পুলিশ এই ভাঙচুরে বাধা তো দেয়নি-ই, উল্টে এক পুলিশ আধিকারিক অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন।” ঘটনার পরপরই থানায় যান মহিলা। পুলিশ জেনারেল ডায়েরি করে দায় সারে। থানায় ঘুরে প্রতিকার না পেয়ে মহিলার মেয়ে চলতি মাসের ১৪ তারিখে জেলা আদালতে মামলা দায়ের করেন। মা-মেয়ের পক্ষের আইনজীবী অচিন্ত্য প্রামাণিকের দাবি, ‘‘ বিচারক সেদিনের হামলায় অভিযুক্ত আট জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭ (অনধিকার প্রবেশ), ৩৭৯ (চুরি), ৩৫৪ (শ্লীলতাহানি)-সহ একাধিক ধারায় নাকাশিপাড়া থানাকে মামলা রুজু করার নির্দেশ দিয়েছেন।” কিন্তু তারপরেও ধরা পড়েনি কেউ। মঙ্গলবার সকালে পুনরায় ওই আট অভিযুক্ত বাড়িতে হামলা চালায়। কেটে নিয়ে যায় বাগানের অবশিষ্ট গাছ। এ দিন ফের নাকাশিপাড়া থানায় গিয়েছিলেন মা- মেয়ে। এ বারও পুলিশ জেনারেল ডায়েরি করেই দায় সেরেছে। বাধ্য হয়ে মা-মেয়ে জেলার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত নালিশ জানিয়েছেন।
নাকাশিপাড়া থানার পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, জমি বিক্রির দলিল দেখার পরেই দখল নিতে সাহায্য করেছিলেন তাঁরা। ওসি রাজা সরকারের অভিযোগ, “সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত আমাদের পুলিশ কর্মী-আধিকারিকের উপর উল্টে হামলা চালান ওই মহিলারা।”