প্রাপ্ত নম্বরে সন্তুষ্ট হতে না পেরে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে পরীক্ষার খাতা দেখতে চেয়েছিলেন বাংলা অনার্সের ছাত্রী। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এর জন্য পাঁচশো টাকা চাওয়া ছাড়াও আরও বিভিন্ন শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে রাজ্য তথ্য কমিশনে আইনি লড়াইয়ে নামে ছাত্রী। দীর্ঘ টালবাহানার পর তথ্য কমিশনের নির্দেশে পরীক্ষার্থীকে বিনামূল্যে উত্তরপত্রের ‘কপি’ পাঠাতে বাধ্য হল বিশ্ববিদ্যালয়।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের বাংলা অনার্সের ছাত্রী অঙ্কনা রায় ২০১২ সালে পার্ট টু পরীক্ষা দিয়েছিলেন। অনার্সের তৃতীয় পত্রে প্রাপ্ত নম্বর তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। প্রাপ্ত নম্বর যাচাই করার জন্য মূল্যায়িত উত্তরপত্রের ‘কপি’ চেয়ে অঙ্কনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার তথা জন তথ্য আধিকারিকের কাছে ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে আবেদন করে। উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট দেখতে বলা হয় অঙ্কনাকে। সেখানে উত্তরপত্র না পেয়ে অঙ্কনা তথ্যের অধিকার আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রথম আপিলটি করেন। তা বিবেচনাধীন থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্ধারিত তথ্য চাওয়ার আবেদনপত্র ও ছ’দফা নিয়ম সম্বলিত একটি নির্দেশিকা পাঠানো হয়। ওই নির্দেশিকায় বলা ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্ধারিত আবেদন পত্রের সঙ্গে একটি উত্তরপত্রের জন্য ৫০০ টাকা করে জমা দিতে হবে এবং পরীক্ষার্থীকে উত্তরপত্রটি একবার দেখানো হবে মাত্র। কোনও ‘কপি’ দেওয়া যাবে না।
তখন অঙ্কনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের তৈরি করা আবেদন পত্র এবং নির্দেশিকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রেজিস্ট্রারের কাছে পুরনো আপিলের অনুসারী আর একটি আপিল করেন। এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেন মামাতো বোন, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়েরই চতুর্থ বর্ষের আইনের ছাত্রী সায়নী সাহা। তিনি বলেন, “তথ্যের অধিকার আইনে কোনও অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম, বা নিয়মাবলী তৈরি করার ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। তাছাড়া বিধি অনুসারে প্রতি পৃষ্ঠা তথ্যের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ২ টাকা করে নিতে পারেন মাত্র। তা-ও আবেদন করার দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে তথ্য দিতে না পারলে অথবা ৩০ দিন পরে তথ্য দিলে অর্থ নেওয়া যায় না।”
নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় আপিলের নিষ্পত্তি না করায় ২০১৩’র ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য তথ্য কমিশনে দ্বিতীয় আপিল করেন অঙ্কনা। এরই মধ্যে তিনি অনার্স পাশ করে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। গত ২২ এপ্রিল রাজ্য তথ্য কমিশনে অঙ্কনার আপিলের শুনানি হয়। শুনানি শেষে কমিশন অঙ্কনা রায়কে মূল্যায়িত উত্তরপত্রের ‘কপি’ দেওয়ার জন্য কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেয়। অবশেষে গত ২৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় মূল্যায়িত উত্তরপত্রের প্রত্যায়িত কপি পাঠায় টাকা ছাড়াই।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন তথ্য আধিকারিক তথা ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রসেনজিৎ দেব বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরপত্র দেখাবে না এমনটা নয়। প্রতি বছর লক্ষ-লক্ষ খাতা হয়। ওই খাতা দুই জেলার বিভিন্ন জায়গায় সংরক্ষিত থাকে। ফলে যখন কেউ খাতা দেখতে চায় তখন একজন লোককে আলাদা ভাবে সেই নির্দিষ্ট জায়গা থেকে নির্দিষ্ট খাতাটি আনার জন্য পাঠাতে হয়। খাতা দেখানোর জন্য যে ৫০০ টাকা নেওয়া হয় তা ধার্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল। খাতা আনার খরচ হিসেবে ওই টাকা নেওয়া হয়। যদিও এ বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বেশি টাকা খরচ হয়।”
তাহলে কি এবার থেকে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা সকলেই চাইলে বিনামূল্যে উত্তরপত্র দেখতে পাবেন? প্রসেনজিৎবাবুর জবাব, “প্রশ্নই ওঠে না। এক্ষেত্রে রাজ্য তথ্য কমিশনের নির্দেশ পালন করা হয়েছে মাত্র। শুধু কল্যাণী বলে নয় রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরপত্র দেখাতে ফি নিয়ে থাকে।”
যদিও তথ্যের অধিকার আন্দোলনের কর্মী অশোক কুমার সাহা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উত্তরপত্র দেখানোর জন্য ইচ্ছামতো অর্থ নিতে পারেন না। ২০০৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ তথ্যের অধিকার বিধি অনুসারে প্রতি পৃষ্ঠার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ ২ টাকা নিতে পারেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোথায়, কি ভাবে খাতা রাখছেন তা দেখার এবং তার ব্যয় আবেদনকারীর বহন করার কথা নয়।”