পরিচালন সমিতির কাছে পাঠানো ছাত্র সংসদের নেতার চিঠি। নিজস্ব চিত্র
কলেজে ভর্তির জন্য ফের টাকা নেওয়ার অভিযোগ। ফের সেই নদিয়ায়। তবে, এ বার জাল মার্কশিটে নম্বর বাড়িয়ে কলেজে ভর্তি করানোর চক্রের কথাও সামনে এল।
নদিয়ারই ভক্তবালা বিএড কলেজে টাকা নিয়ে ছাত্র ভর্তির অভিযোগ ঘিরে তদন্ত চলছে। এ বার ওই জেলারই শান্তিপুর কলেজে ৩০-৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে নকল মার্কশিট বানিয়ে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে বলে পরিচালন সমিতির কাছে লিখিত অভিযোগ করলেন ওই কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক। আর এই ঘটনাকে ঘিরে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দ্বন্দ্বও সামনে এসেছে।
ফিরোজ আলি শেখ ওই টিএমসিপি নেতার অভিযোগ, কলেজেরই কিছু ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষাকর্মী এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত। এমনকী, উচ্চ মাধ্যমিকে অকৃতকার্য ছাত্রকেও জাল মার্কশিটে পাশ করিয়ে ভর্তি নেওয়ার নজির আছে বলে অভিযোগ তাঁর। নিজের সংগঠনেরই প্রভাবশালী এক ছাত্রনেতার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। কলেজে ফিরোজের বিরুদ্ধ-গোষ্ঠীর বলে পরিচিত ওই নেতা অভিযোগ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিলেও বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়েছে কলেজে। সম্প্রতি কলেজ পরিচালন সমিতির বৈঠকে এই নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর বেশ কিছু কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
শান্তিপুর কলেজে টিএমসিপি-রই দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গণ্ডগোল চলছে। কলেজ চত্বরে বোমা পড়েছে মুড়ি-মুড়কির মতো। খুনের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন ছাত্র সংসদের দুই নেতা। এক নেতা আগে জামিন পাওয়ায় অন্য নেতার সমর্থকেরা কলেজ বন্ধ করে দিয়ে নাগাড়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। পরে ওই নেতাও জামিন পান। এর পর থেকে টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে। অভিযোগকারী ফিরোজ দ্বিতীয় নেতাটির ঘনিষ্ঠ। ছাত্র সংসদের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি-সহ নানা অভিযোগ লিখিত ভাবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন ফিরোজ। তাঁর দাবি, “ওই ছাত্রনেতা যে স্কুলে পড়তেন, সেখানে তাঁর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার কোনও তথ্য নেই বলেই আমরা জানতে পেরেছি।” ফিরোজের আরও অভিযোগ, গত বছর বেশ কিছু কম নম্বর পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীকে জাল মার্কশিটে নম্বর বাড়িয়ে ভর্তি করা হয়েছে মোটা টাকার বিনিময়ে। এই গোটা ঘটনার সঙ্গে কলেজেরই কিছু ছাত্র ও কলেজের কর্মীদের একাংশ জড়িত। এ বছরও একই কারবার চলছে। শান্তিপুর এলাকাতেই একাধিক জায়গায় অত্যন্ত গোপনে এই জাল সার্টিফিকেট তৈরি হচ্ছে বলেও ফিরোজের দাবি।
শান্তিপুর কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক মনোজ সরকারের অবশ্য দাবি, ‘‘আমাদের কলেজে এমন কোনও ঘটনা ঘটে না। যারা এ সব বলছে, তারা আমাদের দলকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছে। আর এমন কোনও কাজ কেউ করে থাকলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিক।”
নির্দিষ্ট প্রমাণের অভাবে আইনাননুগ ব্যবস্থা না নিলেও সাবধানতা হিসাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলেজে ভর্তির জন্য মার্কশিট ছাড়াও এ বার থেকে স্কুলের শংসাপত্র আবশ্যিক করেছি আমরা। কাউন্সেলিংয়ের সময় প্রার্থী ছাড়া আর কেউ থাকতে পারবেন না। যে-সব মার্কশিট নিয়ে সন্দেহ হবে, সেই প্রার্থীদের ডেকে পাঠিয়ে তদন্ত করা হবে। আমার হাতে এ বছরই সন্দেহজনক একটি মার্কশিট এসেছে। সেটিকে কাউন্সিলে যাচাই করতে পাঠাব।” কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চয়ন ভট্টাচার্য বলেন, “গত বছর আমাদের কলেজে প্রায় ২৪০০ জন ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে কোথায় জাল হচ্ছে, যাচাই করা সম্ভব নয়। নির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগও আসছে না।”
এই গুরুতর অভিযোগের মধ্যেই কাল, মঙ্গলবার থেকে কলেজের প্রথম কাউন্সেলিং শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু, এখনও মেধা তালিকা টাঙানো হয়নি। অভিযোগ, শনিবার ছাত্র সংসদের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীই মেধা তালিকা টাঙাতে দেয়নি।
ভর্তি নিয়ে অনিয়ম, দুর্নীতির কালো ছায়ায় ঢেকেছে শান্তিপুর কলেজ।