গঙ্গা দূষণ রোধে প্রচার শুরু পুরসভার

প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় গঙ্গাদূষণ রুখতে গঙ্গার বুকেই নৌকাযোগে প্রচার চালাল বহরমপুর পুরসভা। প্রতি বছরের মতো এ বারেও জঙ্গিপুরের আহিরণ ব্যারাজ ঘাট থেকে শুরু করে বহরমপুর শহরের কৃষ্ণনাথ কলেজ লাগোয়া উমাসুন্দরী পার্ক ঘাট পর্যন্ত ৮১ কিলেমিটার দীর্ঘ সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। গত রবিবার একই সঙ্গে জিয়াগঞ্জ সদর ঘাট থেকে শুরু করে উমাসুন্দরী পার্ক ঘাট পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার সাঁতার প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:২৬
Share:

প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় গঙ্গাদূষণ রুখতে গঙ্গার বুকেই নৌকাযোগে প্রচার চালাল বহরমপুর পুরসভা।

Advertisement

প্রতি বছরের মতো এ বারেও জঙ্গিপুরের আহিরণ ব্যারাজ ঘাট থেকে শুরু করে বহরমপুর শহরের কৃষ্ণনাথ কলেজ লাগোয়া উমাসুন্দরী পার্ক ঘাট পর্যন্ত ৮১ কিলেমিটার দীর্ঘ সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। গত রবিবার একই সঙ্গে জিয়াগঞ্জ সদর ঘাট থেকে শুরু করে উমাসুন্দরী পার্ক ঘাট পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার সাঁতার প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়। জলের ভিতর তুফান তোলা সেই লড়াই দেখতে নদীর দু’ পাড়ে কয়েক লক্ষ মানুষের ঢল নামে। নদী পাড়ের সেই ভিড়ই হয়ে উঠেছিল গঙ্গা দূষণ রোধের অন্যতম অস্ত্র।

বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য জানান, দুর্গা পুজোয় প্রতিমা বিসর্জনের সময় গঙ্গা দূষণমুক্ত রাখতে জনতাকে সচেতন করা জরুরি। প্রচারের সেই কাজটি শুরু হয়েছে সাঁতার প্রতিযোগিতার দিন। নৌকায় সুদৃশ্য ট্যাবলো তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিযোগী সাঁতারুদের সঙ্গে নৌকার সেই ট্যাবলোও ভাসিয়ে দেওয়া হয় গঙ্গাবক্ষে। প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় গঙ্গা দূষণমুক্ত রাখতে ট্যাবলোর মাইক থেকে বার্তা পৌঁছে দেওয়া মুর্শিদাবাদ (লালবাগ), বহরমপুর ও জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ মিলে ৩টি পুরসভা ও একটি পঞ্চায়েত এলাকায় নদীর দু’ পাড়ে সমবেত দর্শকের কাছে। প্রতিমা নিরঞ্জন করার বিষয়ে বহরমপুর পুরসভার পক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে।

Advertisement

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গোরাবাজার, বহরমপুর, খাগড়া ও কাশিমবাজার মিলিয়ে এই পুরসভা এলাকায় প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য ১৪টি ঘাট নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ১৪টি ঘাটেই বৈদ্যুতিন আলো ছাড়াও থাকবে জেনারেটর। থাকবে অস্থায়ী ডাস্টবিনের ব্যবস্থাও। ফুল, মালা, বেলপাতা, ডাব, ঘটের মতো পুজোর উপকরণ নদীতে না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। পরদিন সকালে পুরসভার সাফাই গাড়ি ওই আবর্জনা সংগ্রহ করে ধাপার মাঠে ফেলে দেবে।

নদীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের পরেই কাঠখড়ের কাঠামো নদীপাড়ে তুলে রাখারও নির্দেশ জারি করা হয়েছে বলে পুরপ্রধান জানান। নির্দেশিকা ঠিকঠাক পালন করা হচ্ছে কি না দেখভাল করতে পুরকর্মী মোতায়েন করা হবে। নিরঞ্জনের সময় নদীপাড়ে পুরসভার পক্ষ থেকে পানীয় জল, প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেওয়া হবে।

বহরমপুর শহরে বারোয়ারি দুর্গাপুজোর সংখ্যা ১৬০। পারিবারিক পুজোর সংখ্যা প্রায় ৮০। বহরমপুর শহর লাগোয়া পঞ্চায়েত এলাকার আরও প্রায় ১৫০টি সর্বজনীন দুর্গাপুজো বহরমপুর শহরের ভাগীরথীর ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে মোট প্রায় ৪০০টি পুজোর বির্সজন হয় বহরমপুর পুরসভা এলাকার ১৪টি ঘাটে। বহরমপুর শহরের জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ। পুজোর ক’দিন দেবীদর্শনে দৈনিক প্রায় ৩ লক্ষ গ্রামীণ মানুষের ঢল নামে শহরের রাজপথে। অর্থাৎ দৈনিক মোট প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের ঢল সামলাতে পুলিশের পাশাপাশি পুরসভার পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

নীলরতনবাবু বলেন, “সাধারণ সময় শহরের যানজট সামল দেয় কয়েক জন পুলিশের নেতৃত্বে ১২৮ জন ওয়ার্ডেন। তাঁদের পরিচালনার ভার পুলিশের হাতে থাকলেও ওয়ার্ডেনদের আর্থিক ব্যয়ভার বহন করে পুরসভা। ওয়ার্ডেন ছাড়াও পুজোর কয়েক দিন মোতায়েন থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী। এ ছাড়াও পুরসভার পক্ষ থেকে মোতায়েন করা হবে শ’ খানেক স্বেচ্ছাসেবী।”

পুজোর জন্য ইতিমধ্যে পথের ধারের আগাছা সাফাই ও রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে পুরসভার দাবি। শারদোৎসবের আনন্দ যাতে সবাই নির্বিঘ্নে উপভোগ করতে পারে তার জন্য গত সোমবার বহরমপরের মহকুমাশাসক, পুরপ্রধান, থানার আইসি এবং আরটিও মিলে যৌথ বৈঠক করেন। পুজোর ক’দিন কোন রাস্তা ‘ওয়ান ওয়ে’ হবে সে বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন সরেজমিনে শহর ঘুরে দেখার পর। পুরপ্রধান জানান, আগুন নেভানোর ব্যবস্থা, যানজট মুক্ত রাখা, বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা, পুজো মণ্ডপের সার্বিক পরিবেশ সুস্থ ও সুন্দর রাখার বিষয়েও পুজো কমিটির কর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুরপ্রধান বলেন, “পুজোর সময় টুকটুক ও রিকশা চালকদের সচিত্র পরিচয়পত্র এবং ভাড়ার তালিকা সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বহরমপুর শহরে পুজোর ভিড়ের আড়ালে কোনও ভাবেই যাতে পলিথিন ব্যবহার করা না হয় সে দিকে কড়া নজর রাখা হবে। জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “পুজোর সময়ের আইন শৃঙ্খলা, যানজট ও উৎসবের আনন্দ উপভোগ নিয়ে একটি খসড়া পুলিশি ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। শীঘ্রই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement