গুলি করে খুন তৃণমূল নেতাকে

বাড়ির কাছেই চায়ের দোকানে তৃণমূলের এক নেতাকে গুলি করে খুন করল দুষ্কৃতীরা। শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ নদিয়ার নাকাশিপাড়ার হরনগর গ্রামে পূর্ব পাড়ায় ঘটনাটি ঘটে। মৃত আশরাফুল মণ্ডল নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য। তাঁর বাবা নীহাজউদ্দিন মণ্ডল গ্রামেরই জব্বর শেখ-সহ সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

Advertisement

মনিরুল শেখ

নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৪ ০০:২৩
Share:

মৃত আশরাফুল।

বাড়ির কাছেই চায়ের দোকানে তৃণমূলের এক নেতাকে গুলি করে খুন করল দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ নদিয়ার নাকাশিপাড়ার হরনগর গ্রামে পূর্ব পাড়ায় ঘটনাটি ঘটে। মৃত আশরাফুল মণ্ডল নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য। তাঁর বাবা নীহাজউদ্দিন মণ্ডল গ্রামেরই জব্বর শেখ-সহ সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। যে চায়ের দোকানে ঘটনাটি ঘটেছে তার মালিক সিরাজ মণ্ডলের নামও রয়েছে অভিযোগে। পুলিশ সিরাজকে শনিবারই রাতে গ্রেফতার করে। রবিবার জেলা আদালতের বিশেষ বিভাগে তোলা হলে তাঁর তিন দিনের পুলিশি হেফাজত হয়।

মূল অভিযুক্ত জববর পলাতক। আগে তিনি সিপিএম করলেও সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর নামে পুলিশে প্রচুর অভিযোগ আছে। এলাকা দখল নিয়ে আশরাফুলের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বেধেছিল। আবার লোকসভা ভোটের আগে এই জব্বরেরই এক অনুগামী মনসুর শেখকে পুলিশ গ্রেফতার করে। যে ঘটনার পিছনে ‘পুলিশ মহলে ঘনিষ্ঠ’ আশরাফুলের যোগ আছে বলে এলাকায় রটেছিল। জেলা পুলিশের ডিএসপি ডিএনটি (ভারপ্রাপ্ত) অভিষেক মজুমদার বলেন, “খুনের কারণ স্পষ্ট নয়। সমস্ত সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই তদন্ত চলছে।”

Advertisement

আশরাফুল আগে মুম্বইয়ে ঠিকাদারির কাজ করতেন। দশ বছর সেখানে থাকার পর বছর তিনেক আগে তিনি দেশের বাড়ি ফিরে আসেন। এখানে টুকটাক কাজ করতেন। আর ছিলেন তৃণমূলের সর্বেক্ষণের কর্মী। নাকাশিপাড়ার হরনগর পঞ্চায়েতটি বরাবরই সিপিএমের দখলে। পরিবর্তনের জোয়ারেও ২০১১ সালে স্থানীয় পলাশিপাড়া বিধানসভা এলাকায় জেতেন সিপিএমের এস এম সাদি। কিন্তু আশরাফুলের নেতৃত্বে এলাকায় ক্রমশই শক্তিশালী হয়ে উঠছিল তৃণমূল। ২০১৩তে পঞ্চায়েতটির দখল নেয় তারা। সম্প্রতি সিপিএম থেকে জব্বরও তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ঠোকাঠুকি শুরু হয়। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, জব্বর ও তাঁর স্ত্রী ফতেমা সিপিএমে ফিরে গিয়েছিলেন। নাকাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক কল্লোল খান বলেন, “আশরাফুলের নেতৃত্বে রাজনৈতিক সংগঠন চাঙ্গা হচ্ছিল ওই এলাকায়। রাজনৈতিক কারণেই সিপিএমের লোকেরা তাঁকে খুন করেছে।”

শোকার্ত স্ত্রী ও মেয়ে।

যদিও সিপিএমের দাবি, জব্বর তৃণমূলেই ছিলেন। পলাশিপাড়ার সিপিএম বিধায়ক তথা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এস এম সাদি বলেন, “জব্বর আমাদের লোক নয়। তৃণমূলের অর্ন্তকলহে ঘটনাটি ঘটেছে।”

রাজনৈতিক চাপানউতোর চলতেই থাকবে। কিন্তু এলাকায় গিয়েও তার বাইরে কিছু পাওয়া গেল না। গ্রামের লোক মুখে কুলুপ এঁটেছেন। গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় মৃতের বাড়িতে স্ত্রী বিলকিশ বেগম ঘনঘন মুর্ছা যাচ্ছেন। কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছে কলেজ পড়ুয়া ছেলে পলাশ ও স্কুল পড়ুয়া মেয়ে হাসনাহিনা। দোতলা বাড়িতে কান্নার রোল উঠেছে। পরিবারের লোকেরা জানালেন, শনিবার সকালবেলা বেথুয়াডহরি থানার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান আশরাফুল। বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ কাটোয়ার মোড় সংলগ্ন এলাকায় একটি নার্সিংহোমে এক আত্মীয়াকে দেখতে গিয়েছিলেন। রাত পর্যন্ত কাটোয়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় তাঁকে দেখা গিয়েছিল। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ গ্রামে পূর্বপাড়ায় একটা চায়ের দোকানে জনা পাঁচেক দলীয় কর্মীর সঙ্গে গল্প করছিলেন। সেই সময় মুখে গামছা ঢাকা গিয়ে জনা চারেক সশস্ত্র দুষ্কৃতী হামলা চালায়। কাছ থেকে পরপর পেটে, পায়ে পাঁচটা গুলি করে তারা। আশরাফুল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে দুষ্কৃতীরা ভোজালি গিয়ে ডান হাত ক্ষতবিক্ষত করে। এরপর পালিয়ে যায় তারা। বাড়ি থেকে মাত্র দু’শো মিটারের মধ্যে ঘটনাটা ঘটলেও দেবগ্রামে এক পূর্ব পরিচিতের কাছ থেকে দুঃসংবাদটা প্রথম পান বলে জানিয়েছেন মৃতের ভাই রফিকুল। খবর পেয়ে গ্রামে যায় পুলিশ। রবিবার ময়না-তদন্তের পরে বেলা ৩টে নাগাদ কবর দেওয়া হয় আশরাফুলকে।

এ দিন সকাল থেকে মৃতের বাড়িতে ভিড় করেছিলেন স্থানীয় ও জেলা নেতৃত্ব। কৃষ্ণনগর দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক উজ্জ্বল বিশ্বাস, নাকাশিপাড়ার কল্লোল খান, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বানীকুমার রায় দুপুরবেলা মৃতের বাড়িতে গিয়ে সাহায্যের আশ্বাস দেন।

ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement