উপ নির্বাচন

কৃষ্ণগঞ্জ বড় ‘চ্যালেঞ্জ’, মানছে তৃণমূল

দলীয় প্রার্থীর হয়ে নানা উদাহরণ টেনে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব কার্যত বুঝিয়ে দিলেন যে, প্রার্থী নিয়ে দলের একাংশের ক্ষোভ এখনও প্রশমিত হয়নি। বিজেপিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না জেলা তৃণমূল। অথচ বৈঠকে জেলা নেতারা জিজ্ঞাসা করলেন, “বিজেপির কর্মিসভায় নাকি আট হাজার লোক হয়েছিল! এত লোক ওরা কোথায় পেল?” বৈঠকে বুথ নিয়ে চুলচেরা হিসেব করলেন এক জেলা নেতা। বললেন, “প্রতি বুথে বুথ কমিটি তৈরি করা হবে।” প্রসঙ্গত, কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় ইতিমধ্যেই বুথ রক্ষা কমিটি তৈরি করে ফেলেছে বিজেপি।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

হাঁসখালি শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২৫
Share:

দলীয় প্রার্থীর হয়ে নানা উদাহরণ টেনে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব কার্যত বুঝিয়ে দিলেন যে, প্রার্থী নিয়ে দলের একাংশের ক্ষোভ এখনও প্রশমিত হয়নি।

Advertisement

বিজেপিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না জেলা তৃণমূল। অথচ বৈঠকে জেলা নেতারা জিজ্ঞাসা করলেন, “বিজেপির কর্মিসভায় নাকি আট হাজার লোক হয়েছিল! এত লোক ওরা কোথায় পেল?”

বৈঠকে বুথ নিয়ে চুলচেরা হিসেব করলেন এক জেলা নেতা। বললেন, “প্রতি বুথে বুথ কমিটি তৈরি করা হবে।” প্রসঙ্গত, কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় ইতিমধ্যেই বুথ রক্ষা কমিটি তৈরি করে ফেলেছে বিজেপি।

Advertisement

চকিতে হাঁসখালির হাটচালা মাঠে তৃণমূলের কর্মী বৈঠকের নির্যাস এটাই। কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপ নির্বাচনকে মাথায় রেখে সোমবার বিকেলে বুথ কর্মীদের চাঙ্গা করতেই এই বৈঠকের আয়োজন করেছিল হাঁসখালি ব্লক তৃণমূল কমিটি। চূর্ণির পাশে একটি মন্দিরের সামনে ছোট মাঠ। দুপুর থেকেই কর্মীরা সেখানে জমতে শুরু করেছিলেন। চারটে বাজতে না বাজতেই ধুলো উড়িয়ে ওই মাঠে ঢুকতে শুরু করে একটার পর একটা জেলা নেতাদের গাড়ি। যা দেখে কিঞ্চিত্‌ বিস্মিত হয়েই দলের কর্মীদের বলতে শোনা গেল, “এ কী রে! ভেবেছিলাম জেলা থেকে বড়জোর দু’-চারজন আসবেন। কিন্তু এখন তো দেখছি জেলার কোনও নেতাই আর বাকি নেই।” পাশ থেকে আর এক কর্মীর ফুটনোট, “বিজেপি যা খেল দেখাচ্ছে, তাতেই জেলা নেতারাও বুঝে গিয়েছে যে, এ বারের লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে।”

কী হল এ দিনের বৈঠকে? সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন দলের নেতারা। যেমনটা করে থাকেন। তুলোধোনা করলেন কেন্দ্র সরকারকে। সেটাও নতুন কিছু নয়। কিন্তু প্রার্থী নিয়ে বলতে গিয়ে আর অস্বস্তি লুকোতে পারলেন না জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। তাঁকে বলতে হল, “এখানে নেতা, দাদা ধরে কিছু হয় না। কাজ করলে মর্যাদা পাওয়া যায়। সত্য (সত্যজিত্‌ বিশ্বাস, যাঁকে প্রার্থী করা নিয়ে দলের একাংশের ক্ষোভ রয়েছে) এলাকায় কাজ করেছে। দলের একনিষ্ঠ কর্মীকে প্রার্থী করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে খোঁজখবর নিয়ে তাকে প্রার্থী করেছেন। সে এলাকার মানুষের সঙ্গে থেকে কাজ করে।”

গৌরীবাবুর এই কথা শুনে উপস্থিত কর্মীদের একাংশ নিজেদের মধ্যে কথা বলতে শুরু করেছেন। ফের নিজের কথার খেই ধরেন গৌরীবাবু। সত্যজিত্‌বাবুর দলে গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে মুকুল রায়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “কাজের মধ্যে দিয়ে দলের দ্বিতীয় জায়গায় রয়েছেন মুকুল রায়। দক্ষতার জোরেই তিনি রেলমন্ত্রী হয়েছিলেন।”

গত ১৬ জানুয়ারি তৃণমূল সত্যজিত্‌ বিশ্বাসের নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণার পরেই চাপানউতোর শুরু হয় দলের অন্দরে। ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি দলের সিংহভাগ নেতা-কর্মীরা। অভিমানে দল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার কথাও বলেছেন জেলা তৃণমূলের সম্পাদক বিধান পোদ্দার। বিধানবাবু নিজেও বলেছেন, “আমি মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ বলেই আমাকে প্রার্থী করা হল না।” অন্য দিকে সত্যজিত্‌বাবু গৌরীবাবুর ঘনিষ্ঠ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, “দাদা ধরা মানে যে গৌরীবাবু উজ্জ্বল বিশ্বাসের কথাই বলছিলেন সেটা আমরা ভালই বুঝতে পেরেছি। তবে এই প্রার্থী নিয়ে মান-অভিমান না মিটলে সমস্য বাড়বে বই কমবে না।”

প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও একান্তে নেতাদের বলতে শোনা গিয়েছে, “কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা এ বার নিজেদের দখলে রাখাটা বেশ কঠিন।” গৌরীবাবু এ দিন সাকুল্যে ঘণ্টা দেড়েকের বৈঠকে দু’বার বক্তব্য রেখেছেন। বলেছেন, “বিধানসভার ২৮৮টি বুথেই ভাল ভোটে এগিয়ে থাকতে হবে। যে সব বুথ পিছিয়ে থাকবে সেই সব বুথের নেতৃত্বকে কৈফিয়ত দিতে হবে। গত লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভার ৩৬ টি বুথে আমরা পিছিয়ে ছিলাম। এ বার সব বুথে এগিয়ে থাকতে হবে। যে সব বুথে গত বারের চেয়ে খারাপ ফল হবে, সেই বুথের নেতৃত্ব পরিবর্তন করা হবে। আর ভাল ফল হলে নেতাদের পুরস্কৃত করা হবে।” যা শুনে দলের কর্মীরাও বলাবলি করছিলেন, “বিজেপির মতো আমাদের দলও তো দেখছি বুথ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল!”

শান্তিপুরের বিধায়ক অজয় দে বলেন, “সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। অন্যের বুথে খবরদারি করলে হবে না।” রানাঘাটের (দক্ষিণ) বিধায়ক আবির বিশ্বাস বলেন, “এই নির্বাচনে আমরা বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে আছি।” রানাঘাটের (উত্তর পশ্চিম) বিধায়ক পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও বনগাঁ এবং কৃষ্ণগঞ্জ চ্যালেঞ্জ। তাই, আমাদের কাছেও এটা একটা চ্যালেঞ্জ।”

স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও এদিন বলেছেন, “চ্যালেঞ্জ বলে চ্যালেঞ্জ! এর আগে অনেক নির্বাচন দেখেছি মশাই। কিন্তু সামান্য কর্মী বৈঠকে এত নেতা, এত গাড়ি এর আগে দেখিনি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement