কংগ্রেস দলে যোগ দেওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্য ফের সিপিএম দলে ফিরে গেলেন। গত ২৪ অগস্ট বহরমপুরের উত্তরপাড়া মোড়ে রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এক দলীয় সভার আয়োজন করে বহরমপুর ব্লক কংগ্রেস। ওই সভায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর উপস্থিতিতে কংগ্রেস দলে যোগ দেন বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সিপিএমের সুজাউদ্দিন শেখ। কংগ্রেস দলে যোগ দেওয়ার দু’দিনের মধ্যেই মঙ্গলবার দুপুরে সিপিএমের বহরমপুর গ্রাম জোনাল কমিটির কার্যালয়ে বসে সুজাউদ্দিন খান দাবি করেন, তিনি কংগ্রেস দলে যোগ দেননি।
তাহলে ওই সভায় অধীরবাবু তাঁর হাতে কংগ্রেসের পতাকা তুলে দিলেন কীভাবে? সুজাউদ্দিন খানের কথায়, “কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থক আমার কয়েক জন বন্ধু রয়েছে। ওই সভায় অধীরবাবুর বক্তব্য শুনতে আমি তাদের সঙ্গে গিয়েছিলাম। সেই সময়ে তারা আমাকে জোর করে মঞ্চে তুলে দেয় এবং অধীরবাবু আমার হাতে পতাকা ধরিয়ে দিলেন।” ওই সভা থেকেই সিপিএম থেকে কংগ্রেস দলে যোগ দেওয়ার কথা মাইকে ঘোষণাও করা হয়। এমনকী সভা শেষে মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের সভাধিপতি কংগ্রেসের শিলাদিত্য হালদারের সরকারি গাড়িতে চড়ে বহরমপুরে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়েও আসেন তিনি। মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের সভাধিপতি কংগ্রেসের শিলাদিত্য হালদার বলেন, “উনি মিথ্যে বলছেন। অধীর চৌধুরীর উন্নয়নে সামিল হতে চেয়ে ওই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য স্বেচ্ছায় কংগ্রেস দলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। এমনকী দলে যোগ দেওয়ার পরে বহরমপুরে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়েও আসেন তিনি।”
সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য ঘটনায় কংগ্রেসের ‘নোংরা রাজনীতি’ দেখছেন। সিপিএমের বহরমপুর গ্রাম জোনাল কমিটির সম্পাদক শ্যাম দে বলেন, “কংগ্রেসের এটা নোংরা রাজনীতি। কলকাতা থেকে কোচবিহার কংগ্রেসের তাবড় নেতারা তৃণমুল এবং বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে। অধীরবাবুর খাসতালুকেও বড় ভাঙন শুরু হয়েছে। রাজ্য যুব কংগ্রেস সভাপতি সৌমিক হোসেন তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। কংগ্রেসের নেতা মান্নান হোসেন দলীয় নেতৃত্বের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিচ্ছে। এই অবস্থায় সিপিএমের নির্বাচিত সদস্যকে জোর করে দলে টানার নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে কংগ্রেস।”
বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে ৫১ জন সদস্য রয়েছেন। তার মধ্যে সিপিএমের ২৫ জন, কংগ্রেসের ২৩ জন এবং তৃণমূলের তিন জন জয়ী প্রার্থী রয়েছেন। এখন ওই এলাকার সিপিএমের নির্বাচিত সদস্যকে জোর করে কংগ্রেস দলে নিয়ে আসতে পারলে মান্নান হোসেনকেও শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি দলের ভাঙন ঠেকানো যাবে বলে কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছে।”
শিলাদিত্যবাবু বলেন, “সিপিএমের ওই পঞ্চায়েত সদস্য কী দুগ্ধপোষ্য! কংগ্রেসের কয়েক জন জোর করে মঞ্চে ঠেলে তুলে দিল আর তিনি উঠে গেলেন। কংগ্রেসের পতাকা হাতে ধরানো হলো, তিনি তা ধরলেন। আমার গাড়িতেও তাঁকে জোর করেই তুলে দেওয়া হল, তিনি বসে জেলা কংগ্রেস কাার্যলয় পর্যন্ত চলে এলেন! গোটা বিষয়টি খুব অবাক ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে না!”
সিপিএমের দাবি, ওই রাতেই সুজাউদ্দিনবাবু দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শ্যাম দে বলেন, “ওই রাতেই আমরা রানিনগরের ওই পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে গেলে কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরা মদ্যপ অবস্থায় আমাদের ঘেরাও করে রাখে। তখন বহরমপুর থানার পুলিশকে খবর দিই। তারা ওই এলাকায় গেলেও কংগ্রেসের লোকজন পুলিশকে ভুল পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করে। তখন সাহস করে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি।” জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “সিপিএমের মিথ্যাচার মানুষ খাচ্ছে, কিন্তু গিলছে না।”