উদ্বোধনের পরে ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও চালু হয়নি মুর্শিদাবাদ জেলার একমাত্র ইংরেজি মাধ্যমের সরকারি মাদ্রাসা স্কুল। পঠন-পাঠন তো দূর অস্ত্! পূর্ত দফতরের কাছ থেকে জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর এখনও পর্যন্ত ওই ভবনের দায়িত্বভারই গ্রহণ করেনি।
২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফরে এসে নদিয়ার পলাশি থেকে ওই স্কুলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, বামফ্রন্টের আমলেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাজ্যে ইংরেজি মাধ্যমের সরকারি মাদ্রাসা স্কুল তিনটে হয়েছে---নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর ২৪ পরগণা জেলায়।
সংখ্যালঘু দফতরের পরিকল্পনা খাতে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বহরমপুর বানজেটিয়া এলাকায় ২০১১ সালের মে মাসে ওই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তার আগে পূর্ত দফতর বহরমপুর ডিভিশন-১ ওই বছরই ফেব্রুয়ারি মাসে দরপত্র ঘোষণার পরে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়। আড়াই বছরের মধ্যে তিন তলা ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। এখন পূর্ত দফতরের কাছ থেকে ওই ভবনের দায়িত্ব নেওয়ার কথা জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের।
কিন্তু স্কুল শিক্ষা দফতর ‘নিরাপত্তার’ কারণ দেখিয়ে ওই ভবনের দায়িত্বভার নিতে অস্বীকার করছে বলে অভিযোগ। জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের মাদ্রাসা বিষয়ক সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রশান্ত দাস বলেন, “তিন তলা ওই ভবনের দায়িত্ব নেওয়া স্কুল শিক্ষা দফতরের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা, ভবন ও ভিতরের জিনিসপত্রের নিরাপত্তা ও দেখভালের প্রশ্ন রয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ-প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।”
প্রায় তিন একর জমির উপরে তিন তলা ভবন নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি তলা প্রায় ১৪ হাজার স্কোয়ার ফুটের। ক্লাসরুম ছাড়াও রয়েছে চারটে ল্যাবরেটরি, বিশাল বড় একটা প্রার্থনা সভাঘর, লাইব্রেরি-সহ বসে পড়ার জায়গা। আগামী দিন সেখানে দুটো লিফট্ বসানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। ভবিষ্যতে ছাত্রাবাসও তৈরি হবে। ওই স্কুল ভবন ঢোকার মুখে মার্বেল পাতা রয়েছে। প্রতি তলায় রয়েছে অত্যাধুনিক ঝকঝকে পাথর বসানো মেঝে। ভবন জুড়ে রয়েছে প্রায় দেড়শো ফ্যান, কয়েকশো টিউবলাইট। এছাড়াও পানীয় জলের ব্যবস্থা ও শৌচালয়ে দামী উপকরণ লাগানো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রশাসন দায়িত্বভার গ্রহণ করেনি বলে ভবন অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ঠিকাদারের অধীনে থাকা এক জন কর্মী দিন-রাত পাহারা দেয়। কিন্তু যে কোনও সময়ে চুরি যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পূর্ত দফতরের বহরমপুর ডিভিশন-১ এর নির্বাহী বাস্তুকার বীরেন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “আমাদের কাজ ছিল ভবন নির্মাণ করে দেওয়া। ভবন নির্মাণের পরে তার দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার কথা। কিন্তু আমরা ভবনের দায়িত্বভার ছেড়ে দিতে চাইলেও তা নিতে অস্বীকার করছে বলে এখনও পড়ে রয়েছে।”
সংখ্যালঘু দফতরের জেলা আধিকারিক অশোকপ্রাণ চৌধুরী বলেন, “ইংরেজি মাধ্যমের সরকারি ওই মাদ্রাসা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা হবে। ভবন নির্মাণ হলেও এখনও পড়াশোনার জন্য পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর ওই ভবনের দায়িত্বভার নিয়ে পরিকাঠামো তৈরি করলেই স্কুলের পঠনপাঠন শুরু হবে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্প্রতি ওই স্কুলে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের জন্য সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের পরে অবিলম্বে ওই স্কুল চালু হবে। প্রশান্তবাবু বলেন, “ইংরেজি মাধ্যমের ওই মাদ্রাসা স্কুলের নতুন সিলেবাস অনুযায়ী পড়ানোর জন্য শিক্ষক নিয়োগ জরুরি। অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগের পরে ওই স্কুল চালু হবে।”
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “অবিলম্বে ওই স্কুল চালু করা যায়, সে ব্যাপারে প্রশাসন চেষ্টা করছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ওই স্কুলে পঠনপাঠন শুরু হয়ে যাবে।”