ঈদের কেনাকাটা বহরমপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
এক দিকে ছেলের গোঁ, অন্য দিকে বিবির বায়না। কতক্ষণ আর নিজের জেদ বজায় রাখা যায়! ঈদের বাজার করতে কিছুটা নিমরাজি হয়ে ডোমকলের পিন্টু শেখকে সেই শপিং মলেই যেতে হয়েছিল। ডোমকল থেকে বাসে সোজা বহরমপুর। সেখান থেকে রিকশায় স্থানীয় একটি শপিং মল। পেল্লাই কাচের দরজা ঠেলতেই ভিতর থেকে আসা ঠাণ্ডা বাতাস যেন সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দিয়েছিল। তারপর সেখানকার কর্মীদের আন্তরিক ব্যবহার, এক ছাদের তলায় এত কিছুর সম্ভার দেখে পিন্টু বলছেন, “ছেলে-বিবির পাল্লায় পড়ে এখানে না এলে শপিং মল নিয়ে ভুল ধারনাটা দূর হত না।”
পিন্টু একা নন, এ ভাবেই গ্রাম ও মফস্সলের বহু মানুষ ভিড় করছেন কাছাকাছি শপিং মলগুলোতে। বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি শপিং মলের ম্যানেজার অভয়কুমার পাণ্ডে বলেন, “প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও শপিং মলে আসার প্রবণতা বাড়ছে। গ্রাম হোক কিংবা শহর, মানুষ এখন ভাল পরিষেবা চান। আর সেদিকে যাতে কোনও খামতি না থাকে তার জন্য আমরা সবসময় নজর রাখি।”
গ্রাম থেকে এখন যাঁরা শপিং মলে ভিড় করছেন তাঁদের অনেকেরই কিন্তু শপিং মল নিয়ে একটা ভীতি ছিল। কী রকম? পিন্টু যেমন বলছেন, “শপিং মল শুনলেই আমার মনে হত ওটা বড়লোকদের বাজার। জিনিসপত্রের দামও অনেক বেশি। তার থেকে বাড়ির কাছেই ডোমকল বাজারই ভাল। পিন থেকে পাজামা সবই মেলে সেখানে। কিন্তু এখন মলে যাওয়ার পরে দেখলাম সেখানে সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। দামও নাগালের মধ্যে।”
জলঙ্গির সাইমা আকতারের কথায়, “ঈদে আমরাও স্থানীয় বাজারেই কেনাকেটা করতাম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে আমরা মল থেকেই বাজার করছি। এক ছাদের নীচে সব পাওয়া যায়। ব্যাগপত্তর নিয়ে এ দোকান সে দোকান ঘুরতে হয় না। হাতে অনেক সময় নিয়ে নিজের মতো করে বাজার করা যায়।” লালগোলার কুইন বিবি বলছেন, “মলে ক্রেতাদের স্বাধীনতা অনেক বেশি। যা দোকানে কল্পনাই করা যায় না।” কখনও সপরিবারে, কখনও আবার বেশ কয়েকটি পরিবার একসঙ্গে গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ছেন শপিং মলে বাজার করতে। বাজার করাও হল, একটা দিন সবাই মিলে হইহই করে বাইরে কাটানোও হল।
শপিং মলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ার ফলে গ্রামীণ বাজারগুলো কি মার খাচ্ছে? এমনটা অবশ্য মানতে নারাজ ডোমকল মহকুমার চেম্বার অফ কর্মাসের সভাপতি পার্বতীশঙ্কর নন্দী। তিনি বলছেন, “মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। এই এলাকার বহু মানুষ কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। বাইরে থাকার সুবাদে তাঁরা এই মল-সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। ছুটিতে বাড়ি ফিরে তাঁরা কোনও শপিং মলে গিয়েই কেনাকেটা করছেন। কিন্তু তার জন্য আমাদের এই বাজার যে মার খাচ্ছে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।”
ডোমকলের ইফতিকার আলি বলেন, “শপিং মল নিয়ে ভয় আমাদেরও ছিল। কিন্তু ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়ে কেনাকেটা করতাম শপিং মলে। সেখানে গিয়েই ভয়টা কাটে। তারপর বাড়ি ফিরে সপরিবারে ঈদের বাজারটা তো বহরমপুরের একটি মলেই করেছি।” বহরমপুরের একটি মলের ডিরেক্টর অলক চৌরাসিয়া বলেন, “গ্রামীণ ক্রেতাদের মলমুখী করাটা আমাদের কাছে একটা অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই কাজে আমরা অনেকটাই সফল হয়েছি।”