রেল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীরা। সোমবারের ওই অবরোধের জেরে পূর্বরেলের কাটোয়া-ব্যান্ডেল শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যহত হয়। খবর পেয়ে রেলের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে এসে দফায় দফায় আলোচনা করলেও বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। শেষে রেল পুলিশের হস্তক্ষেপে বেলা ১১টা নাগাদ অবরোধ ওঠে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র নবদ্বীপের অন্যতম ব্যস্ত রেলস্টেশন বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট যাত্রীদের জন্য ক্রমশ মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। শুধু ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে ওই হল্ট ষ্টেশনে ছোট বড় মিলিয়ে দশটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমনকী দুই যাত্রীর মৃত্যু পর্যম্ত হয়েছে। অভিযোগ, রেল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থার কারণেই ওই দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। স্টেশনে একের পর এক দুর্ঘটনা সত্ত্বেও রেল কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। গত শুক্রবার আরও একটি দুর্ঘটনা ঘটলে মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারই প্রতিবাদে এ দিন সকালে অবরোধ করেন নিত্যযাত্রীরা।
তাঁদের অভিযোগ, শহরের মাঝখানে হওয়ায় নবদ্বীপ ধাম স্টেশনের থেকে তিন গুণ বেশি যাত্রী দৈনিক বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট ষ্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন। তার উপরে পূর্ণাঙ্গ স্টেশন না হওয়ায় লোকাল ট্রেনের চালকরা ‘স্টপ অ্যান্ড স্টার্ট’ পদ্ধতি অনুসরণ করেন। ফলে ট্রেন দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই ছেড়ে দেয়। অন্য দিকে, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে সেই সময়ের মধ্যে অনেকে ট্রেনে উঠতে পারেন না। যার ফলে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। যাত্রীদের আরও অভিযোগ, ডবল লাইনের কাজের জন্য সম্প্রতি বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টে নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। সেই প্ল্যাটফর্ম এত নিচু যে ওঠানামা করতে গিয়ে সেখানেও দুর্ঘটনা ঘটছে।
গত বছর ১ এপ্রিল যুগলে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। ট্রেনের ধাক্কায় দু’জনেই রেল লাইনে পড়ে যান। এরপর একাধিক ট্রেন মৃত যুবতী এবং আহত যুবকের উপর দিয়ে চলে যায়। মারা যান যুবকটিও। স্টেশনে জিআরপির উপস্থিতিতেই এমন ঘটনা ঘটায় তুলকালাম বেধে যায়। তখনও রেলের পদস্থ আধিকারিকেরা এসে আশ্বাস দিয়েছিলেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সে সব কিছুই হয়নি।
গত শুক্রবার সকাল ন’টা নাগাদ ব্যান্ডেলগামী ট্রেনে এগারো মাসের শিশুকন্যাকে নিয়ে উঠতে গিয়ে পড়ে যান প্রতিমা হালদার। কোল থেকে ছিটকে রেল লাইনের ধারে পড়ে যায় এগারো মাসের শিশুকন্যা। অল্পের জন্য মা ও মেয়ে রক্ষা পান। মাসখানেক আগে একই ভাবে পড়ে মারা গিয়েছিলেন একজন। রেলের চাকায় খণ্ড খণ্ড হয়ে গিয়েছিল তাঁর দেহ। স্থানীয় বাসিন্দা নির্মল দেবনাথ বলেন, “১৯৭৫ সালে চালু হওয়ার পর থেকে ক্রমশ ভিড়ের চাপ বাড়ছে। তবুও বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টকে কেন পূর্ণাঙ্গ স্টেশনে উন্নীত করা হচ্ছে না বুঝতে পারছি না।”
নিত্যযাত্রী করুণাশঙ্কর রায়, সঞ্জিত কুণ্ডুু বা এলাকার বাসিন্দা অভিজিত্ হালদারদের ক্ষোভ, “হাজার হাজার যাত্রী প্রতিদিন এই দিক দিয়ে যাতায়াত করেন। অথচ প্ল্যাটফর্মে কোনও ব্যবস্থাই নেই।” চৈতন্যদেবের পত্নী বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীর নামাঙ্কিত এই স্টেশন নদিয়া ও বর্ধমান জেলার বাসিন্দারাই ব্যবহার করেন। আর একজন নিত্যযাত্রীর কথায়, “শুধু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। এলাকার সবচেয়ে বেশি মানুষ যাতায়াত করেন যে স্টেশন দিয়ে, সেই স্টেশন কেন ঠিকাদারের হাতে বছরের পর বছর থাকবে? যাত্রীরা এই সাধারণ প্রশ্ন তুলতেই কর্তৃপক্ষ রেলপুলিশ ডেকে ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। আমরা এর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হব।”
নবদ্বীপের স্টেশন ম্যানেজার রমেন্দ্রলাল সরকার বলেন, “আমরা যাত্রীদের যাবতীয় দাবিদাওয়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি।” নবদ্বীপ নাগরিক কমিটির সম্পাদক দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টের মাসিক টিকিট বিক্রির পরিমাণ গড়ে ১২ লক্ষ টাকা। তারপরেও ওই স্টেশন কেন ঠিকাদারের হাতে থাকবে? এর মধ্যে কোনও অসাধু যোগ রয়েছে বলে আমাদের ধারণা। এই বিষয়ে উপযুক্ত তদন্তের দাবি করছি।”