কংগ্রেসের ৯ জন সদস্যের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থন করলেন সিপিএমের চার জন ও তৃণমূলের একজন সদস্য। আর তার জেরেই সোমবার ২৭ সদস্যের সামশেরগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদ থেকে ১৪-০ ভোটে অপসারিত হলেন সিপিএমের সিমি খাতুন। সিপিএম সদস্যদের দলত্যাগকে ঘিরে এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা থাকায় এ দিন সামশেরগঞ্জ ব্লক অফিসকে ঘিরে ছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। ব্লক অফিসকে ঘিরে ছিল কংগ্রেস সমর্থকদের ভিড়ও। সভায় হাজির ছিলেন বিডিও পার্থপ্রতিম দাস। বিডিও বলেন, “ সভায় ১৪ জন সদস্য হাজির ছিলেন। ১৪ জনই অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়ে সভাপতি পদ থেকে সিমি খাতুনের অপসারণে সমর্থন জানিয়েছেন।” দলের হুইপ অমান্য করে এ দিনের অনাস্থা সভায় হাজির হয়ে দলীয় সভাপতির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার জন্য দলের চার পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে সিপিএম। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদ থেকে সিপিএমের এই অপসারণকে ঘিরে কংগ্রেস শিবিরে ছিল খুশির হাওয়া। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস ওই পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভাপতির বিরুদ্ধেও অনাস্থার নোটিস জমা দিয়েছে। মঙ্গলবার সেই অনাস্থা নোটিসের স্বাক্ষর ভেরিফিকেসন করার কথা বিডিও-র। তারপরেই সেই অনাস্থা সভার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে। তবে সিপিএম ও তৃণমূলের ৫ জন সদস্যের সমর্থন পেয়ে সিপিএমের পঞ্চায়েত সভাপতিকে সোমবার অপসারণ করা গেলেও মাত্র এক ভোটের সুতোয় ঝুলে রয়েছে এই রাজনৈতিক সমীকরণ। স্বভাবতই তা চিন্তায় রেখেছে কংগ্রেসকে। যদিও সামশেরগঞ্জ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি আমিরুল ইসলাম বলেন, “নয়া সভাপতি নির্বাচনে আরও অন্তত দু’জন সদস্যের সমর্থন আশা করছি আমরা। কারণ সকলকে নিয়ে আমরা সামশেরগঞ্জে এক উন্নয়নমুখী পঞ্চায়েত গড়তে চাই।”
২৭ সদস্যের সামশেরগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিএমের সদস্য সংখ্যা ১৬ জন। কংগ্রেসের ৯ এবং তৃণমূলের ২ জন। পঞ্চায়েত বিধি অনুসারে দলীয় হুইপ অমান্য করে ১৬ জন সদস্যের মধ্যে যৌথ ভাবে এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৬ জন সদস্যের দলত্যাগের মান্যতা রয়েছে। কিন্তু এ দিন যেহেতু দলের ৪ জন সদস্য দলের হুইপ অমান্য করে সভায় যোগ দিয়েছেন তাই ৪ সদস্যই দলত্যাগ আইনের আওতায় আসবেন এবং তাঁদের সদস্য পদ খারিজ হবে বলে দাবি সিপিএমের। তাই সিপিএম চাইছে নতুন সভাপতি নির্বাচন ও সহকারি সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা সভার আগেই বিদ্রোহী ৪ সদস্যের সদস্য পদ খারিজের জন্য প্রশাসনিক স্তরে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়ে রাখতে। সেক্ষেত্রে আদালতে আইনের সাহায্য নেওয়ার সুযোগ পাবে দল।
জঙ্গিপুরের সরকারি আইনজীবী অশোক সাহা বলেন, “২৭ জন সদস্যের মধ্যে ৪ জনের সদস্য পদ খারিজ করতে পারলে সিপিএম তাদের ১২ জন সদস্য নিয়েই অনায়াসে সামশেরগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতি ফের দখল করতে পারবে। কারণ তখন পঞ্চায়েতের বোর্ড হবে মোট ২৩ জন সদস্যের হিসেবে।’’ বিদ্রোহী ওই চার সিপিএম সদস্যের অবশ্য অভিযোগ, “গত এক বছর ধরে দলীয় নিয়ন্ত্রণে থাকা পঞ্চায়েত সমিতিতে চলছে চরম স্বেচ্ছাচারিতা। সাধারণ সদস্যদের কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অথচ নির্বাচিত সদস্য হিসেবে এলাকার উন্নয়নে দায়বদ্ধতা রয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের। তাই দলের নেতাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলাম পঞ্চায়েত সমিতির কাজকর্মের বিরুদ্ধে। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। তাই সভাপতির অপসারণে অনাস্থাকে সমর্থন করেছি।”
ওই চার সদস্যের দাবি, “লিখিত ভাবে দলত্যাগের কথা জানিয়ে আমরা মোট ছয় জন স্বাক্ষর করে তিন সপ্তাহ আগেই চিঠি পাঠিয়ে দিই দলনেতা আসাদুল হকের কাছে। সেই চিঠিতেই দল ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলাম। তাই আইনত দলের কোনও হুইপ আমরা মানতে বাধ্য নই।” কিন্তু এ দিনের অনাস্থা সভায় সেই ৬ সদস্যের মধ্যে ২ জন শেষ পর্যন্ত হাজির না হওয়ায় অবশ্য কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়লেন সিপিএমের বিদ্রোহী ৪ সদস্য।
সিপিএমের ধুলিয়ান লোকাল কমিটির সম্পাদক মহম্মদ আজাদ বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির দলনেতা আসাদুল হক দলীয় সদস্যদের এ দিনের অনাস্থা সভায় গরহাজির থাকতে হুইপ জারি করেন। তা অমান্য করেছেন দলের ওই চার জন সদস্য। তাঁদের বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দল। সদস্য পদ খারিজের জন্যও প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে।’’ সামশেরগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতিতে দু’জন সদস্য রয়েছে তৃণমূলের। তাঁদের মধ্যে এক সদস্য হাজির হয়ে কংগ্রেসের আনা অনাস্থাকে সমর্থন করলেও অন্যজন সভায় হাজির হননি। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি কাওসার আলি বলেন, “এ ব্যাপারে দলের কোনও নির্দেশ ছিল না। পরিস্থিতি বুঝে সদস্যরা যা ভাল মনে করেছেন, তাই করেছেন।”