প্রতীকী ছবি।
সবে নমাজ শেষ হয়েছে। ইমামের কাছে এগিয়ে এলেন এক বৃদ্ধ। হাতে একটি স্মার্টফোন। ইমামকে বললেন, ‘‘কী করে এই ফোন চালাতে হয় আমি জানি না। কিন্তু বারবার মোবাইলে একটা ছবি ভেসে উঠছে। কিছু লেখাও আসছে। তা আমি পড়তে পারছি না।’’ থতমত ইমামও। তিনিও স্মার্টফোন ব্যবহারে একেবারেই সিদ্ধহস্ত নন। তিনি বৃদ্ধকে বললেন, ‘‘আপনি এটা কোনও ভাল দোকানে নিয়ে যান। ওরা আপনাকে শিখিয়ে দেবে।’’ কিন্তু বৃদ্ধ নাছোড়। তিনি ইমামকেই কেবল বিশ্বাস করেন। অন্য কারও কাছে এই ফোন দিতে চান না। এই ফোন তাঁর ছেলে ব্যবহার করত। এই ফোনের মাধ্যমে ছেলে টাকা লেনদেনও করত। এখন ফোনটি সে বাবাকে দিয়ে ভিন রাজ্যে গিয়েছে। তাই বৃদ্ধ পিতা ইমাম ছাড়া আর কাউকে ফোন দেবেন না।
রানিনগরের একটি মসজিদের এক ইমাম এই কাহিনি শুনিয়ে বললেন, ‘‘দিনকাল বদলেছে। তাই স্মার্টফোন, কম্পিউটার সম্পর্কে আমাদেরও জানতে হবে। তা জানার জন্যই প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে হবে।’’
এই চিন্তা আরও বেশি করে বেড়েছে এনআইএ এবং এসটিএফ-এর অভিযানের পরে। জেলা থেকে ১০ যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের সকলেরই মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। স্মার্টফোনের মাধ্যমে সোশ্যাল সাইটে যোগাযোগ রক্ষা করা হত, এমন অভিযোগ উঠেছে। তার পরপরই ডোমকল ও জলঙ্গির অনেকেই নানা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ভুল করে কোনও বিপজ্জনক গ্রুপে ঢুকে পড়ছেন কি না, তা পর্যন্ত তাঁরা বুঝতে পারছেন না। কোথায় ফাঁদ পাতা রয়েছে, তা বোঝা শক্তও।
সেই ভয় থেকেই যাঁরা স্মার্টফোন একেবারেই ব্যবহার করতে জানেন না, তাঁরা আরও চিন্তায় পড়েছেন। তাঁদের অনেকে আবার ইমামদের ছাড়া কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাই ইমামরাও বলছেন, তাঁরা বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হলে তবেই সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে বলতে পারবেন। জেলা পুলিশের কর্তারা বলছেন, ইমামদের পক্ষ থেকে খুব ভাল প্রস্তাব এসেছে। আমরা জেলার বিভিন্ন থানা গুলিকে বলব এলাকা ভিত্তিক ইমামদের নিয়ে সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সতর্ক করতে।
রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের প্রতিনিধি জেলার ইমাম নিজামুদ্দিন বিশ্বাস বলছেন, ‘‘বেশ কিছু দিন থেকেই সাইবার অপরাধ নিয়ে আমাদের সামনে মানুষ নানা প্রশ্ন তুলছিলেন, তারপরে এনআইএ কাণ্ডের পরে সেই জানতে চাওয়ার বিষয়টি অনেক গুন বেড়ে গিয়েছে। সাইবার অপরাধ সম্পর্কে আমাদের তেমন কোনও ধারণা নেই, ফলে উত্তর দেওয়া কঠিন হচ্ছে। আর সেই জন্যই জেলা পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছি আমাদের ইমামদের সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সচেতন করা হোক বলে।’’
জেলার পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘এটা খুব ভাল উদ্যোগ, পুলিশের কাজ অনেক সহজ হবে। প্রয়োজনে আমরা জেলার বিভিন্ন এলাকার থানাগুলিকে বলব এলাকার ইমামদের নিয়ে আলোচনা শিবির করতে। এটা করতে পারলে সমাজ উপকৃত হবে।’’ জলঙ্গির বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলছেন, ‘‘আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে যদি ইমামরা জ্ঞান রাখেন তা হলে কিছুটা হলেও তারা সাধারণ মানুষের কাছে সে সম্পর্কে বার্তা পৌঁছাতে পারবেন। সমাজে ইমামদের অনেক গুরুত্ব। তাঁদের অনেকেই বিশ্বাস করেন। তাঁরা জানলে সেই বার্তা সমাজের জন্য কাজে লাগবে।’’