একটা সময় এ জেলায় যখনই কোনও বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র ধরা পড়েছে তখন প্রথমেই উঠে এসেছে বিহারের মুঙ্গেরের নাম। আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির দক্ষ কারিগর ওই এলাকায় যথেষ্ট বেশি। পুলিশের কাছেও বার বার উঠে এসেছে মুঙ্গেরের বাড়দা গ্রামের নাম। পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৬ সালে ওই গ্রাম থেকে এক হাজার বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়। ২০১৭ সালে আটক হয় ৫৮৬টি বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র। বাড়দাই নয়, একই ভাবে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র রমরমিয়ে তৈরি হয়েছে বৈসার, দৌলতপুর, বড় মাকসাসপুরের মতো গ্রামগুলোতেও।
সেই সব বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রই একসময় মুঙ্গের থেকে ঝাড়খণ্ড পেরিয়ে চোরাপথে আসত মুর্শিদাবাদে। পুলিশ সূত্রের খবর, মুঙ্গেরে ধরপাকড় বাড়ায় কাজ হারিয়ে সেই সব কারিগরদের একটা অংশ এখন কালিয়াচকে চলে এসেছে।
কালিয়াচকের দেবীপুর গ্রামে পুলিশ হানা দেয় এক বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র কারখানার খবর পেয়ে। সেখান থেকে উদ্ধার হয় ৪৮টি সম্পূর্ণ ও বহু অসম্পূর্ণ নাইন এমএম ও সেভেন এমএম পিস্তল। বাড়ির মালিক সহ-সাত জনকে গ্রেফতার করে কালিয়াচক থানার পুলিশ। যাদের মধ্যে ছ’জনেই মুঙ্গেরের বাসিন্দা ও আগ্নেয়াস্ত্রের কারিগর।
মালদহের নলডুবিতেও একই ঘটনা ঘটেছে। আগ্নেয়াস্ত্রের কারখানার খবর পেয়ে সেখানেও হানা দেয় পুলিশ। উদ্ধার হয় ২২টি পিস্তল, ড্রিলিং মেশিন, গান পাউডার, বুলেট। গ্রেফতার হয় ১০ জন। এক জন বাড়ির মালিক ছাড়া ৯ জনের বাড়িই মুঙ্গেরে। কালিয়াচকের বালিয়াডাঙার আনসারপাড়ার গাফফারের বাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তিন কারিগর। তারা সকলেই মুঙ্গেরের বাসিন্দা।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, একটা সময় মুঙ্গের থেকে বহু লুকিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র আসত। ধরা পড়ার ভয়ে অনেক সময় আলাদা আলাদা ভাবে আগ্নেয়াস্ত্রের যন্ত্রাংশ আসত। কিন্তু ধরপাকড় বেড়ে যাওয়ায় এখন মুঙ্গেরের উপরে ভরসা কমেছে। কিন্তু অন্য পথ বের করেছে দুষ্কৃতীরা। মুুঙ্গের থেকে আগ্নেয়াস্ত্র আনার ঝুঁকি বেশি বলে তারা কারবারিদেরই সেখান থেকে তুলে আনছে। তার পরে কোনও একটি ঘরে নিশ্চিন্তে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তাতেও যে সবসময় শেষরক্ষা হচ্ছে, এমনটাও নয়।
এ ভাবেই কালিয়াচক হয়ে উঠেছে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির ঘাঁটি। মুঙ্গের থেকে কারিগররা গিয়ে সেই সব কারখানায় আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করছে। সেই সব আগ্নেয়াস্ত্র মুঙ্গেরের থেকে দামেও সস্তা। ফলে সেই সব আগ্নেয়াস্ত্রের চাহিদাও রয়েছে। তবে আগ্নেয়াস্ত্র কারবারিদের কাজ কারবার যত বেড়েছে, জেলার পুলিশের নজরদারিও তত বেড়েছে। আর তাতেই ধরা পড়ে যাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্রের বেআইনি কারবারিরা।