প্রতীকী ছবি।
বিকেল গড়িয়ে তখন সন্ধ্যা। বাড়ি ফিরছিলেন দুই যুবক। পথ আটকালেন এলাকার জনা কয়েক মহিলা। রীতিমতো পরীক্ষা চলল মদ্যপান করে ফিরছেন কিনা। মদ্যপান করেননি, তা নিশ্চিত হওয়ার পরেই মিলল যাওয়ার ছাড়পত্র। এলাকার বাসিন্দাদের মদ্যপান রুখতে এখন শান্তিপুরের চৌধুরীপাড়ায় এ ভাবেই ময়দানে নেমেছে প্রমীলা বাহিনী।
কেটে গিয়েছে প্রায় দু’মাস। অভিশপ্ত স্মৃতি এখনও টাটকা চৌধুরীপাড়ার মানুষের কাছে। বিষ মদ কাণ্ডে এই গ্রামেরই ১২ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন অনেকে। সেই বিষাক্ত স্মৃতি এখনও মন থেকে মোছেনি ওঁদের।
জানা গেল, গ্রামের সিংহভাগ মানুষই দিনমজুরি করেন। একে অভাবের সংসার, তার উপরে মদ্যপান করে পারিবারিক অশান্তি—দু’য়ে মিলে জেরবার এলাকার মেয়েরা। তাই দিনভর কাজের শেষে মদের দোকানে ছুটে যাওয়া পুরুষদের আটকাতে মেয়েরাই উদ্যোগী হন। গ্রামেই গড়ে উঠেছে প্রমীলা বাহিনী।
প্রথমে চৌধুরীপাড়ার জনা পঞ্চাশেক মহিলাকে নিয়ে এই বাহিনী গড়ে ওঠে। তবে, এলাকার পুরুষদের সঙ্গে মহিলারাও দিনমজুরির কাজ করেন। কেউ কেউ আবার আনাজ বিক্রির কাজে যুক্ত। তাই কাজের জন্য দিনভর গ্রামের বাইরেই থাকেন অনেকে। কিন্তু সারা দিন গ্রামে অন্তত জনা পঁচিশেক মহিলা থাকেন সব সময়ে। এঁরা পালা করে সকলে যে যখন পারেন, নজরদারির কাজ চালিয়ে যান।
স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, এই দলটি একজোট হয়ে যেমন বাড়ি বাড়ি ঘুরে খোজ নিচ্ছেন কোনও পুরুষ মদ্যপান করে বাড়ি ফিরেছেন কিনা, তেমনই রাস্তাঘাটেও নজরদারি করছেন।
গ্রামের বাসিন্দা আশা মাহাতো বলেন, “এলাকার মহিলারাই এখন একজোট হয়েছি। পুরুষদের উপরে নজরদারি চালাচ্ছি, যে যেমন ভাবে পারি। যাতে কেউ মদ না খায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”
শুধু নজরদারিতেই অবশ্য থেমে নেই তাঁরা। কাউকে মদ্যপ অবস্থায় দেখলে রীতিমতো শাসন করছে এই বাহিনী। প্রয়োজনে তাদেরকে বোঝানোও চলছে। এঁদেরই এক জন দুর্গা মাহাতো বলেন, “গ্রামের পুরুষেরা যে ভাবে মদের নেশা করছিলেন, তা আটকাতে আমরাই এ বার উদ্যোগী হয়েছি।”
বিষ মদ কাণ্ডের পরে চৌধুরীপাড়া এবং আশপাশের এলাকায় প্রশাসনের নজরদারি বেড়েছে। পাশাপাশি, এই প্রমীলা বাহিনীর কারণেও ঘরে ঘরে পুরুষদের মদের নেশা অনেকটাই দূর হয়েছে বলে মানছেন স্থানীয়েরা।
স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বেশ্বর মাহাতো বলেন, “এই নজরদারিতে লাভ হয়েছে। অনেকে বাইরে থেকে মদ্যপান করে আসছিলেন। সেটাও এখন অনেক কমেছে।”
স্থানীয় হরিপুর পঞ্চায়েতের সদস্য বীরেন মাহাতো বলেন, “মহিলারা এগিয়ে এসে যে কমিটি করেছেন, সেই কমিটির নজরদারিতে এলাকার বাসিন্দারা এখন অনেকটা শুধরেছেন। মদ্যপানের ঘটনাও কমেছে অনেক।”