বোজানো হচ্ছে জলা জমি। —ফাইল ছবি
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন, সরকারি দফতরের কিছু অসাধু কর্মীর সঙ্গে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকা প্রোমোটারদের তৈরি হয়েছে গোপন আঁতাঁত। তাঁদের প্রশ্ন: তা না হলে কী ভাবে প্রকাশ্যে ভরাট হয়ে যায় একের পর এক পুকুর-জলাশয়? করিমপুরের মতো গঞ্জ এলাকা হোক বা কল্যাণীর মত শিল্পনগরী!
জেলার কর্তারা বলছেন, পুকুর হোক বা জলাশয়, আইন অনুযায়ী কিছুই কোনও ভাবে ভরাট করা যায় না। এবং এ ক্ষেত্রে আইন বেশ কড়া। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) নারায়ণ বিশ্বাস বলছেন, “কোনও ভাবেই পুকুর বা জলাশয় বোজানো যায় না। আইনে তেমন কোনও সুযোগই নেই।”
তা হলে বছরের পর বছর কোন মন্ত্রবলে ধরে ভরাট হচ্ছে পুকুর? তৈরি হচ্ছে বড়-বড় আবাসন? প্রশ্নটা উঠছেই। এর কোনও সদুত্তর দিতে পারছেন না কোনও কর্তাই, অন্তত প্রকাশ্যে।
সময়ের সঙ্গে কুর্সিতে কর্তা বদলে যায়। কিন্তু পরিস্থিতির কোনও বদল হয় না। সকলেই যে চুপ করে থাকেন তা নয়। মাঝে-মধ্যেই প্রতিবাদে সরব হন পরিবেশপ্রেমীরা। তারা নানান জাগায় চিঠি লেখেন। রাস্তায় নামেন। তবে বিষয়টা খুব একটা যে সহজ বা নিরাপদ নয়, তা-ও তাঁরা হাড়ে-হাড়ে বুঝতে পারেন। কারণ বেশি বাড়াবাড়ি করলেই নেমে আসে আক্রমণ। আক্রান্তেরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। কিন্তু তাতে যে কাজের কাজ খুব কিছু হয়, তা নয়। বরং ক’দিনের জন্য স্তিমিত হলেও সব প্রতিবাদকে কাঁচকলা দেখিয়ে চলতে থাকে পুকুর ভরাটের কাজ।
প্রতিবাদে কাজ যে একেবারেই হয় না, তা অবশ্য নয়। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে পরিবেশপ্রেমীদের আন্দোলনে থমকে যেতে হয়েছে দাদাদের। তবে সেটা নেহাতই ব্যতিক্রম। দীর্ঘ দিন ধরে পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন চাকদহের বিবর্তন ভট্টাচার্য। একাধিক বার তাঁকে খুনের হুমকির মুখেও পড়তে হয়েছে। তিনি বলছেন, “ওরা মারাত্মক প্রভাবশালী। ওদের সঙ্গে আছে অর্থ আর রাজনৈতিক ক্ষমতা। সেই সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনের একটা অংশ।”
একই অভিজ্ঞতার কথা বলছেন জেলাসদর কৃষ্ণনগরের পরিবেশকর্মী খগেন্দ্রকুমার দত্ত। তাঁর অভিযোগ, “নগেন্দ্রনগরে খাল বুজিয়ে ফেলার সময়ে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের বারবার জানিয়েছিলাম। কোনও লাভ হয়নি। উল্টে বরং আমাকেই খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল।”
শুধু কি প্রশাসনের কর্তাদের চোখ বুজে থাকাতেই আইনের বেড়া টপকে যাওয়া যায়? তা কিন্তু নয়। বরং এই আইনে কোনও ফাঁক না থাকায় সরাসরি নথিতে জোচ্চুরি করা হয়। জেলা প্রশাসনের কর্মীদেরই একটা অংশের দাবি, তেমন দরকার হলে কম্পিউটারে বদলে দেওয়া হয় জমির শ্রেণি। নথিতে যা জলাশয়, সেটাই রাতারাতি হয়ে যায় ভিটেজমি। মোটা টাকার বিনিময়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরেরই কিছু কর্মী এই কাজ করেন বলে দীর্ঘদিন অভিযোগ করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। যদিও জেলাশাসক সুমিত গুপ্তের দাবি, “এমন কোনও অভিযোগ কিন্তু কখনও আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে সহজেই চিহ্নিত করতে পারব কোন কর্মী এমনটা করেছেন।” জলাশয় বা পুকুর ভরাটের অভিযোগ পেলেই তাঁরা সঙ্গে-সঙ্গে পদক্ষেপ করেন বলেও জেলা শীর্ষকর্তার দাবি।
আর যে অপরাধের অভিযোগ হয় না অথচ সাদা চোখে স্পষ্ট দেখা যায়?