West Bengal Lockdown

অসহায় দশা গৃহবন্দিদের হেল্পলাইন? খাবার-জল মিলছে কই

কৃষ্ণনগরের রায়পাড়া এলাকায় এক করোনা আক্রান্তকে কোভিড হাসপাতালে পাঠিয়ে তাঁর পরিবারের তিন সদস্যকে রাখা হয়েছে সরকারি নিভৃতবাসে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২০ ০২:২৭
Share:

প্রতীকী ছবি

সরকার বলছে, কন্টেনমেন্টে থাকা মানুষজন যেন কোনও ভাবেই বাইরে না বেরোন। ফোনে জানালেই খাবার, পানীয় জল, ওষুধের মতো যে কোনও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এর অনেকটাই কথার কথা।

Advertisement

কৃষ্ণনগরের রায়পাড়া এলাকায় এক করোনা আক্রান্তকে কোভিড হাসপাতালে পাঠিয়ে তাঁর পরিবারের তিন সদস্যকে রাখা হয়েছে সরকারি নিভৃতবাসে। বাড়িটিকে কোয়রান্টিন করে দেওয়ায় বাড়িওয়ালার পরিবার পুরোপুরি গৃহবন্দি। তাঁদের অভিযোগ, দোকানিকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি জল দিয়ে যেতে রাজি হননি। বাধ্য হয়ে পাম্পের জল খেয়ে থেকেছে গোটা পরিবার। ঘরে চাল-ডাল যা ছিল তা হিসাব করে খরচ করা হয়েছে। বাড়িতে ছোটরা আছে। মরিয়া হয়ে এক জনকে অনুরোধ করায় তিনি ঝুঁকি নিয়েও পাঁচিলের ও পার থেকে জল ঢেলে দিয়েছেন পাত্রে।

প্রশাসনের কাছে ফোন করে খাবার বা পানীয় জল চাইলেন না কেন? তাঁদের অভিযোগ, হেল্পলাইন নম্বরই তাঁদের দেওয়া হয়নি। এক আত্মীয়ের মাধ্যমে কৃষ্ণনগর মহকুমাশাসককে সব জানিয়েছেন তাঁরা। কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা পুর বোর্ডের অন্যতম প্রশাসক অসীম সাহাকেও হোয়াটসঅ্যাপে প্রয়োজনের কথা জানিয়েছেন। শেষমেশ সোমবার, আট দিন পরে তাঁরা খাবার ও পানীয় জল পেয়েছেন। ওই বাড়ির এক মহিলা বলেন, “আটটা দিন যে আমাদের কী ভাবে কেটেছে!”

Advertisement

একই অভিযোগ চৌধুরীপাড়ার একটি পরিবারেরও। ছেলে করোনা আক্রান্ত। বাড়িতে বাবা, মা, স্ত্রী, বোন, ভগ্নিপতি ছাড়াও তিনটি শিশু আছে। তাঁদেরও অভিযোগ একই। আক্রান্তের বাবা ও মা দু’জনেই শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সাফাই কর্মী। তাঁদের অভিযোগ, হেল্পলাইনে ফোন করলেও কেউ ধরেনি। যুবকের বাবা বলেন, “ভাই আর জামাই খাবার আর জল দিয়ে যায় বাঁশ দিয়ে ঘেরা জায়গাটার ও পারে। হাতে টাকা নেই। ভাইয়ের কাছ থেকে ধার করে চালাচ্ছি। কোনও রকম সরকারি সাহায্য পেলাম না!”

কলকাতায় সরকারি বাসের কন্ডাক্টর ছিলেন চাঁদ সড়ক পাড়ার এক বাসিন্দা। বাড়ি ফিরে জ্বরে পড়েন। তিনি কোভিড হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর ও তাঁর দাদার পরিবারের প্রায় সকলে সরকারি নিভৃতবাসে আছেন। বাড়িতে আছেন বৌদি, অশীতিপর মা, অসুস্থ দাদা। হাসপাতাল থেকেই ফোনে তিনি অভিযোগ করেন, “হেল্পলাইনের নম্বর আমাদের কাছে নেই। প্রশাসন বা পুরসভার কোনও সহযোগিতা পাইনি। প্রাক্তন কাউন্সিলর বলেছিলেন, সব ব্যবস্থা করে দেবেন। তিনিও কিছু করছেন না। শুধু প্রতিবেশীরা আনাজ আর জল পাঠিয়ে সাহায্য করছেন।”

কেন খোদ জেলাসদরে এ রকম অবস্থা? প্রতিটি ওয়ার্ডেই স্বেচ্ছাসেবক থাকার কথা, যাঁদের ফোন করলেই প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেবেন। কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক মণীশ বর্মার দাবি, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। তেমন হলে সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।” সকলের পক্ষে কি সেটা সম্ভব? প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহারও দাবি, “সামগ্রী পৌঁছয়নি, এটা হওয়ার কথা নয়। এমনকি যাঁদের সত্যিকারের টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই, আমি তাঁদের সামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাড়ির কুকুরের খাবার পর্যন্ত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

দুই কর্তার কারও জবাবেই অবশ্য স্বেচ্ছাসেবীদের ভূমিকা স্পষ্ট হয়নি। তবে অসীমের আশ্বাস, “আমরা স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে বসব। এমনটা যাতে কোনও ভাবেই না হয়, সে জন্য তাঁদের অনুরোধ করব।”

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement