West Bengal Lockdown

চিকিৎসা পেতে নাজেহাল অবস্থা শিশুদেরও

করোনা-ত্রাস চারদিকে। সরকারি-বেসরকারি সব চিকিৎসাক্ষেত্রেই নীতিপ্রণেতা তথা চিকিৎসকদের সব চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টি নিবদ্ধ করোনার চিকিৎসায়। যার অবধারিত ফল হিসাবে অবহেলিত হচ্ছে অন্য রোগের চিকিৎসা পরিষেবা। হেনস্তার অন্ত থাকছে না রোগী ও তাঁর পরিজনেদের। তা নিয়েই আমাদের নতুন এই সিরিজ। আজ চতুর্থ কিস্তি।করোনা-ত্রাস চারদিকে। সরকারি-বেসরকারি সব চিকিৎসাক্ষেত্রেই নীতিপ্রণেতা তথা চিকিৎসকদের সব চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টি নিবদ্ধ করোনার চিকিৎসায়। যার অবধারিত ফল হিসাবে অবহেলিত হচ্ছে অন্য রোগের চিকিৎসা পরিষেবা। হেনস্তার অন্ত থাকছে না রোগী ও তাঁর পরিজনেদের। তা নিয়েই আমাদের নতুন এই সিরিজ। আজ চতুর্থ কিস্তি।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২০ ০৭:৩৬
Share:

নেই মাস্ক। কৃষ্ণনগর আদলত চত্বরে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

এমনিতেই গোটা করিমপুরে এক জনও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। এই নিয়ে এলাকার সকলে এমনিতেই চিন্তায় থাকেন। স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালেও কোনও শিশু চিকিৎসক নেই। সন্তানের অসুখ হলে ভরসা কোনও জেনারেল ফিজিশিয়ান বা হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক। আর বাকিদের ছুটতে হয় কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, কল্যাণী, তেহট্ট বা বহরমপুরের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে।

Advertisement

সবচেয়ে সমস্যা হয়, শিশুর জটিল কোনও সমস্যায় জরুরি পরিষেবা পেতে। সেই সমস্যা জটিলতর রূপ নিয়েছে করোনা ও লকডাউনে। ট্রেনও এখনও বন্ধ। বাড়িতে কোনও শিশুর শারীরিক সমস্যা শুরু হলেই দিশেহারা দশা হচ্ছে অভিভাবকদের।

করিমপুরের বাসিন্দা দেবজ্যোতি কর্মকার যেমন তার বছর দু’য়েকের ছেলের কোনও সমস্যা হলেই তেহট্টের এক শিশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। জানালেন, লকডাউন শুরুর দিন দশেকের মাথায় ছেলের হঠাৎ জ্বর আসে। সেই সময় তাকে তেহট্টে নিয়ে যাওয়ার কোনও উপায় ছিল না। গাড়ি-বাস-ট্রেন বন্ধ এবং চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখাও বন্ধ। শেষ পর্যন্ত ওই চিকিৎসককে ফোন করে শরীরের উপসর্গ জানিয়ে তাঁর পরামর্শ মতো ওষুধ বাজার থেকে কিনে খাওয়ানো হয়।

Advertisement

একই ভাবে সন্তান জন্মানোর পর ডাক্তারখানা থেকে নিয়মিত ব্যবধানে রুটিন টিকাকরণ করাতেন তেহট্টের বয়ারবান্দার সন্দীপ মন্ডল। কিন্তু টানা লকডাউন এবং সংক্রমণের আশঙ্কায় একাধিক মা বাবার মত তিনিও মেয়েকে টিকা দেওয়াতে পারেন নি। সন্দীপ বলেন, ‘‘১৪ মাসের মেয়েকে টিকাকরণের জন্য নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল স্থানীয় একটি চিকিৎসকের কাছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের ভয়ে তিনি যেতে পারেননি। অবশ্য লকডাউন কিছুটা শিথিল হতে তিনি টিকা দেওয়াতে পেরেছেন। তবে লকডাউনের তিন মাস সার্বিক ভাবে গোটা রাজ্যের মতো নদিয়াতেও সরকারি স্তরে শিশুদের টিকাকরণ অসম্ভব ধাক্কা খেয়েছে। বহু শিশু টিকা পায়নি বা অনেক দেরিতে পেয়েছে।

ষোলো মাসের শিশুকে নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন হোগলবেড়িযার বিবেক মন্ডল। হঠাৎ করে শিশুর জ্বর ও কাশি শুরু হয়েছিল। সংক্রমনের ভয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাননি। এ দিকে এলাকার সব প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ থাকায় শেষে স্থানীয় এক হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

তেহট্টের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অতনু বাগ জানান, লকডাউনের প্রথমদিকে চেম্বার সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছিলেন। কেউ সমস্যায় পড়লে ফোনে শুনে পরামর্শ দিতেন। খুব জটিল সমস্যা না হলে ওষুধ ফোনেই জানিয়ে দিতেন। তবে মাসখানেক পরে রোগীদের অসুবিধার কথা ভেবে চেম্বার খোলা হয়েছিল এবং সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে, স্যানিটাইজার ব্যহগার করে ও মাস্ক ও গ্লাভস পরে তবেই চেম্বারে রোগী দেখতেন। তবুও ট্রেন বন্ধ থাকায় ও সংক্রমণের ভয়ের কারণে এক চতুর্থাংশ রোগীও পেতেন না। এখনও পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement