ছাই দিয়ে চাষ। লাগবে না সার-কীটনাশক। তেমনটা কি সম্ভব?
ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি) কর্তৃপক্ষ বলছে, বিলকুল সম্ভব। ছাই উড়িয়ে অমূল্য রতন খোঁজার দরকার নেই। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই চাষের কাজে লাগালে সোনা ফলবে জমিতে। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে কীটনাশক বা রাসায়নিক সার কেনার দরকার নেই।
উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদের নরেন্দ্রদেব নরেন্দ্রদেব কৃষি ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়টি নিয়ে গবেষণায় সাফল্য মিলেছে বলে দাবি এনটিপিসি-র। এ বার মুর্শিদাবাদেও চাষের কাজে ফরাক্কা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই ব্যবহার করতে চাইছে তারা। সে জন্য চাষিদের উৎসাহ যোগানোর কাজে নেমেছে তারা।
এনটিপিসি যাই বলুক, কৃষি বিজ্ঞানীরা কিন্তু এতে তেমন উৎসাহ দিচ্ছেন না। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা সবে শুরু হয়েছে। ফলে, এখনই ব্যবহার না করারই পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। কারণ, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই বা ফ্লাই অ্যাশে কিছু রাসায়নিক যেমন রয়েছে, তেমন প্রচুর পরিমাণে ধাতব পদার্থ।
এনটিপিসির ফরাক্কা প্রকল্পের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অরবিন্দ কুমার সিংহ বলেন, ‘‘রাসায়নিক সারে ১৮টি রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। ফ্লাই অ্যাশে রয়েছে ৪৮টি উপাদান। ফলে এই ছাই কৃষি ক্ষেত্রে বাড়তি সার ও কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ফ্লাই অ্যাশ মিলবেও নিখরচায়।’’ মুর্শিদাবাদে ফ্লাই অ্যাশের ব্যবহার নিয়ে জেলা কৃষি দফতরের সঙ্গে যৌথ সমীক্ষা করতে চায় এনটিপিসি। সে জন্য জমি দেখাও চলছে। এনটিপিসি-র বিভিন্ন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতিদিন প্রচুর ছাই জমা হচ্ছে। ইট বা রাস্তা তৈরির কাজে কিছু ছাই ব্যবহার হলেও প্রচুর ছাই জমে থাকে তাদের অ্যাশ পন্ডে। সেই জমে থাকা ছাই তাদের মাথা ব্যাথার কারণ। সেই ছাই ব্যবহারের নতুন জায়গা খুঁজছে তারা।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিসিকেভি) কৃষি রাসায়নিক এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞানের অধ্যাপক বিশ্বপতি মণ্ডল জানান, এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহারের জন্য কৃষি ক্ষেত্রে গবেষণায় উৎসাহ দিতে চাইছে। বছর দেড়েক আগে ভোপালে এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ কৃষি বিজ্ঞানীদের নিয়ে বৈঠক করেছিল। এই বিষয়ে গবেষণার জন্য পৃথক তহবিল করেছে তারা।
বিশ্বপতিবাবুর মত, ‘‘চাষের কাজে ফ্লাই অ্যাশ এখনই ব্যবহার করা ঠিক হবে না। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। শুধু এক বা দু’বছর ফলন দেখে সিদ্ধান্তে পৌঁছনা যায় না। রাসায়নিকের সঙ্গে সঙ্গে ফ্লাই অ্যাশে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধাতু থাকে।’’ বিসিকেভির আর এক অধ্যাপক মতিউর রহমানের বক্তব্য, ‘‘শুধু ফলন দেখলেই হবে না। মানুষের উপর তার প্রভাব নিয়ে আগে নিশ্চিত হওয়া দরকার। তার পরে না হয় চাষের কাজে ছাই ব্যবহার করা যাবে।’’