পথ্য নেই শস্যহানি,  রোখ রাস্তা

কখনও ধামা-কুলোর হাট কখনও ইট-বালির গোডাউন, গ্রামীণ রাস্তা যেন বিস্তৃত উঠোন, ঘুরে দেখল  আনন্দবাজার কখনও ধামা-কুলোর হাট কখনও ইট-বালির গোডাউন, গ্রামীণ রাস্তা যেন বিস্তৃত উঠোন, ঘুরে দেখল  আনন্দবাজার

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:০৩
Share:

খোলা বুকে, খড়-গম-কলাই নিয়ে পড়ে থাকা অঘ্রানের রাস্তা— শীতের চেনা ছবি। ছাগল-পালের আলস্য কিংবা হাটের ব্যস্ততা সামাল দেওয়ার জন্যও সে রয়েছে। রয়েছে, গ্রামীণ মন খারাপ, হা-হুতাশ কিংবা রোষের ইজেল হয়েও।

Advertisement

আর কিছু না থাক, হিন্দি সিনেমার মতো গ্রামবাসীরা অন্তত বলতে পারে— আমার কাছে রাস্তা আছে!

বাস্তবিকই তাই, তাকে আটপৌর কাজে ব্যবহার থেকে রাগের উঠোন— যথেচ্ছ ব্যবহার করে চলেছে বাংলার গ্রাম। দুর্ঘটনা থেকে গাফিলতিতে রোগী মৃত্যু, গ্রামে জলের হাহাকার থেকে চালের মুমূর্ষু ফলন এমনকী তার পরম প্রিয় সেই রাস্তা তার হার জিরজিরে চেহারা হলে, প্রতিবাদের জন্য বেছে নেওয়ার মঞ্চ সেই রাস্তাই।

Advertisement

গ্রাম বাংলার অন্য জেলার সঙ্গে নদিয়া-মুর্শিদাবাদেও এটাই দস্তুর।

কিন্তু সেই প্রতিবাদের ধাক্কায় যে থমকে যাচ্ছে আর পাঁচটা গাঁ-গঞ্জের জীবন রেখা? সে কথা শুনছে কে, ভাবখানা, মেরে পাস রাস্তা হ্যায়, অতএব তাকে আমি যে কোনও ভাবেই করতে পারি ব্যবহার।

সে তালিকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও কম যান না। বিভিন্ন দাবিতে রাস্তায় পা ছড়িয়ে কিংবা চেয়ার পেতে অবরোধ করতেও কসুর করেন না তাঁরা। সে তালিকা থেকে রেয়াত মেলে না খোদ জাতীয় সড়কেরও। রাস্তা কেন? প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর যুক্তি, ‘‘সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই আমরা রাস্তা অবরোধ করে থাকি। জানি অবরোধে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষও অবরোধের কারণ জানতে পারেন।’’ মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে শেখদিঘি ও আহিরণের মধ্যে গত কয়েক দিনে অন্তত ছ’বার অবরোধ করেছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। রাস্তা কেন ভাই? উত্তর এসেছে, ‘‘রাস্তা অবরোধ করা আমাদের হক বটে!’’

পড়শি নদিয়ায় জুয়ার ঠেকে গণ্ডগোলের জেরে গ্রামের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে বলেও জাতীয় সড়ক রুখে দেওয়ার নজির রয়েছে এ সপ্তাহেই। রয়েছে, শান্তিপুর কলেজে টিএমসিপি-র দুই দল ছাত্রের মধ্যে গণ্ডগোলের প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধের সঙ্গে রয়েছে, কোথাও আবার মদের দোকান তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে, কোথাও বা নব্য রাস্তা তৈরির দাবিতে রাস্তা রোখার নজির।

বহরমপুরে গত তিন মাসে ৬টি, লালগোলা থানা এলাকায় ৩টি, ভগবানগোলা থানা এলাকায় ৫টি, লালবাগে ২টি, নবগ্রামে ৬টি, ডোমকলে মহকুমায় ৬টি, বেলডাঙায় ৩টি, রেজিনগরে ২টি, নওদায় ২টি— রাজ্য পুলিশের দেওয়া অবরোধের পরিসংখ্যান এমনই।

দিন কয়েক আগে আবার গ্রামের মধ্যে মদের দোকান রাখার প্রতিবাদে করিমপুর-নতিডাঙা রাস্তায় পা ছড়িয়ে বসলেন স্থানীয় স্কুলের পড়ুয়া-শিক্ষক-শিক্ষিকারা। রাজ্য সড়ক লাগোয়া দোকান তুলে নিয়ে গ্রামের ভেতরে সেই মদের দোকান তৈরির প্রতিবাদে তেহট্টের বেতাই ও ছিটকায় রাস্তা অবরোধ নতুন নয়।

যা দেখে এক শিক্ষকেরই মন্তব্য, ‘‘কী বলব, এ তো এক অন্যায় রুখতে গিয়ে অন্য অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement