যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছিল ছোট্ট শরীরটা। বারবার আঁকড়ে ধরছিল বাবার জামা। তবে সময় যত গিয়েছে আলগা হয়েছে সেই মুঠোৈ।
বাবাও বুঝতে পারছিলেন আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ছে ছেলে। তাই চিকিৎসকের হাতেপায়ে ধরতে বাকি রাখেননি। হাতজোড় করে চিকিৎসকের কাছে বারবার অনুরোধ করেন, ছেলেকে একটিবার দেখার জন্য।
কিন্তু প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে যমে-মানুষে টানাটানি চললেও মুমূর্ষু শিশুটিকে চিকিৎসা করার সময় হল না কোনও চিকিৎসকের! শেষ পর্যন্ত সকলের চোখের সামনে ‘বিনা চিকিৎসাতেই’ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল বছর দেড়েকের শাকিবুল শেখ। রবিবার শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের ঘটনা।
ঘটনার জেরে হাসপাতাল চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনা স্থলে যায়। তবে এক মহিলা চিকিৎসকের অভিযোগ পেয়ে উল্টে ওই শিশুটির বাবা-সহ চার জনকে আটক করে।
রবিবার দুপুরে নাকাশিপাড়ার মালুমগাছা গ্রামে বাড়িতে খেলা করতে করতে কেরোসিন খেয়ে ফেলছিল শাকিবুল। বাড়ির লোকজন জানতে পেরে তাকে বেথুয়াডহরি গ্রামীণ প্রাথমিক ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বিকেল ৪টে ৮ মিনিট নাগাদ শিশুটি শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে মানবেশ্বর পালের তত্ত্বাবধানে ভর্তি হয়। সেই সময় জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ছিলেন মণীষা বিশ্বাস নামে ওই মহিলা চিকিৎসক।
পারিবারের লোকজনের দাবি, চোখের সামনে শিশুটি নেতিয়ে পড়ছিল। কিন্তু কোনও চিকিৎসককে আসতে না দেখে তাঁরা জরুরি বিভাগের ওই চিকিৎসককে শিশুটির চিকিৎসা করার জন্য বারবার অনুরোধ করতে থাকেন। কিন্তু তিনি জরুরি বিভাগ ছেড়ে যেতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। ৫টা ২৫ মিনিট নাগাদ শিশুটি মারা যায়।
অভিযোগ, এরপর শিশুটির পরিবারের লোকজন জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ওই চিকিৎসককে নিগ্রহ করেন। হাসপাতালে উত্তেজনা ছড়ায়। ঘটনার খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশ গেলে তাদেরকেও নিগ্রহ করা হয়। যদিও শিশুটির পরিবারের দাবি, হাসপাতালের কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীরাই উল্টে তাঁদের বেধড়ক মারধর করেছে।
শিশুটির বাবা হাবিহুল শেখ বলেন, ‘‘আমরা ওই চিকিৎসককে মারধর করিনি। আমরা তাঁর হাত ধরে টানাটানি করেছিলাম যাতে তিনি অন্তত একবার ছেলেটিকে দেখেন। বাঁচানোর চেষ্টা করেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার ছেলে বিনা চিকিৎসায় মারা গেল। নিরাপত্তারক্ষীরা মারধর করল। আবার পুলিশ গিয়ে আমাদেরই ধরে আনল। অথচ যাঁর গাফিলতিতে ছেলের মৃত্যু হল তাঁর কিছু হল না। এ কেমন বিচার বলতে পারেন?’’
যদিও জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ওই চিকিৎসক মণীষা বিশ্বাস জানান, একের পর এক রোগী আসছিল। তাই তিনি যেতে পারেননি। ওই শিশুটি যে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ভর্তি হয়েছিল তাঁকে একাধিকবার কলবুক দিয়ে ডাকা হয়। অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়। তাঁর কথায়, ‘‘কিন্তু তিনি সঠিক সময়ে আসেননি। এখানে আমার কিছু করার ছিল না।’’ যে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ওই শিশুকে ভর্তি করা হয়েছিল সেই মানবেশ্বর পাল বলেন, ‘‘আমাকে কেউ ফোন করেননি। মিথ্যে কথা বলা হচ্ছে। কলবুক পেয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে চলে আসি। এখানে আমারও কোনও দোষ নেই।’’
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার দেবব্রত দত্ত বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তারপরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। যা ব্যবস্থা নেওয়ার তাঁরাই নেবেন।’’