জজ পণ্ডিত বাড়ির প্রতিমা। শান্তিপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পুরনো প্রাচীন শান্তিপুরের জজ পণ্ডিত বাড়ির দুর্গাপুজো। এখনও পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে নবমীর পান্তা করে রাখা হয়। দশমীতে সেই পান্তা ভোগে দেওয়া হয়। অষ্টমীর ভোগে থাকে ইলিশ।
পরিবারের লোকজন জানান, প্রায় সাড়ে চারশো বছরের প্রাচীন শান্তিপুরের জজ পণ্ডিত বাড়ির দুর্গাপুজো শান্তিপুরের প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে একটি। চৈতল মাহেশের বংশধর এই চট্টোপাধ্যায় পরিবার। গয়ার যদুয়া গ্রামে এক সময় তাঁদের জমিদারি ছিল। এই পরিবারের ত্রয়োদশ পুরুষ পীতাম্বর চট্টোপাধ্যায় ব্রিটিশ আমলে তর্কবাগীশ উপাধি পান। গয়ায় জমিদারির সময় প্রজাদের নানা সমস্যার বিচারের ভার ছিল পীতাম্বর তর্কবাগীশের উপরে। সংস্কৃত সাহিত্যে পাণ্ডিত্যের কারণে থেকে জজ পণ্ডিত উপাধি দেওয়া হয়। পরে পরিবার চলে আসে শান্তিপুরে।
পরিবারের সদস্যেরা জানান, স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা বংশ পরম্পরায় প্রতিমা তৈরি করেন। প্রতিমা তৈরি হয় পারিবারিক নাটমন্দিরে। তিথি অনুযায়ী পঞ্চমী বা ষষ্ঠীর দিন প্রতিমা পাটে ওঠে। সপ্তমীতে কচুর শাক, কলার বড়া, খিচুড়ি, ভাজা, মোচার ঘন্ট, এঁচোড়, বাঁধাকপি, ফুলকপি-সহ মরসুমি বিভিন্ন আনাজের তরকারি দেওয়া হয়। এ ছাড়াও ভোগে থাকে পায়েস, চাটনি, সাদা ভাত, ফ্রায়েড রাইস, শুক্তো, মুগের ডাল। অষ্টমীর ভোগে থাকে সাদা ভাত, বিভিন্ন ব্যঞ্জন, ইলিশ মাছ, পায়েস, চাটনি। আর নবমীর ভোগে থাকে সাদা ভাত, কচুর শাক, বিভিন্ন রকমের ব্যঞ্জন, চালতার চাটনি। নবমীর এই ভোগই পান্তা করে রেখে দেওয়া হয়। দশমীতে সেই পান্তা ভোগ খেয়ে কৈলাসের পথে পাড়ি দেন উমা। এক সময় তাদের পারিবারিক পুজোয় ছাগ বলি দেওয়া হত। সেই ছাগল বলির প্রথা এখন বন্ধ। পরিবর্তে ফল, কুমড়ো বলি দেওয়া হয়।
পারিবারিক পুজোয় সক্রিয় ভূমিকায় পরিবারের সদস্য সঞ্চারী চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রেখে আমরা পুজোর আয়োজন করেছি।’’ প্রচুর মানুষ আসেন পুজো দেখতে।’’