আহত মাছবিক্রেতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। —নিজস্ব চিত্র
রাস্তায় ফেলে এক ব্যক্তিকে বেধড়ক মারধর করছে দু’জন। এক হাতে বন্দুক উঁচিয়ে লাথি মারা হচ্ছে ওই ব্যক্তিকে। আর নিগৃহীত ব্যক্তি হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছেন। মারমুখী দু’জনকে থামানোর চেষ্টা করছেন অন্য এক জন। শুক্রবার সকাল থেকেই সিসি ক্যামেরার এই ফুটেজ সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয় (যদিও এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। জানা যায়, নিগ্রহের এই ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার, নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরের গোয়ারিবাজারে। যে দু’জনকে মারধর এবং হেনস্থা করা হচ্ছিল, তাঁরা মাছবিক্রেতা। দু’জনকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণনগরের নগেন্দ্রনগর এলাকার বাসিন্দা সমীর ঘোষ এবং বিশ্বনাথ ঘোষ নামের দুই ভাই মাছের ব্যবসা করেন। প্রতি দিনের মতো শুক্রবার ভোরে তাঁরা স্থানীয় পাত্রবাজারে বিক্রি করার জন্য গোয়ারিবাজারে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, হঠাৎ ওই এলাকার কিছু দুষ্কৃতী তাঁদেরকে ঘিরে ধরে এবং টাকা দাবি করে। এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে কুণাল হালদার নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, ওই যুবক তৃণমূল ছাত্র পরিষদ করেন। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব কুণালের সঙ্গে দলের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন।
অভিযোগ, টাকা দিতে অস্বীকার করায় হঠাৎ একটি পিস্তল নিয়ে ওই দুই মাছ ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে কুণাল এবং আর এক ব্যক্তি। প্রথমে একটি গুলি বিশ্বনাথের পায়ে লাগে। বিশ্বনাথকে বাঁচাতে গেলে সমীরকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। কিন্তু গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বিশ্বনাথের পায়ে গুলি লাগায় তিনি মাটিতে পড়ে যান। বন্দুকের বাট দিয়ে মাথায় আঘাত করার অভিযোগও ওঠে।
চিৎকার-চেঁচামেচি এবং গুলির আওয়াজ শুনে ওই বাজারের অন্য মাছ ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থলে ছুটে এলে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। রক্তাক্ত অবস্থায় বিশ্বনাথকে উদ্ধার করে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে বিশ্বনাথ জানান, পর পর চার রাউন্ড গুলি চালায় অভিযুক্তেরা। তিনি বলেন, “আমাদের সঙ্গে অভিযুক্তদের পুরনো কোনও শত্রুতা নেই। যারা গুলি চালিয়েছে, তারা ওই এলাকায় সমাজবিরোধী কাজ করে বেড়ায়। ওরা টাকা চেয়েছিল। আমি দিতে অস্বীকার করাতেই এই আক্রমণ করেছে। আমার এবং ভাইয়ের কাছ থেকে ওরা প্রায় ৪০ হাজার নগদ টাকা জোর কর ছিনিয়ে নিয়েছে। আমরা চাই অবিলম্বে প্রশাসন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আইনত ব্যবস্থা নিক।”
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালি থানার পুলিশ। হাসপাতালে গিয়ে ওই দুই মাছ ব্যবসায়ীর সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলে তারা। ঘটনার বিবরণ জানতে চাওয়া হয়। যদিও এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযুক্তকে আটক কিংবা গ্রেফতার করা হয়নি। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।