—প্রতীকী চিত্র।
বিয়ের অনুষ্ঠানে দিনভর হই হই করে কেটেছে। গভীর রাতে একই ঘরে পাশাপাশি দুটো বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলেন আমন্ত্রিত জনা পনেরো অতিথি। আচমকা যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে ঘুম থেকে ওঠে বসেন এক জন। তাঁর একটি পায়ের বুড়ো আঙুলে কিছু একটা কামড়েছিল। ওই বধূর চিৎকারে অন্যেরাও ঘুম থেকে উঠে পড়েন। তাঁকে যখন দেখাশোনার চলছে, তখন নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় পাশে শুয়ে থাকা কিশোরীকে। তড়িঘড়ি দু’জনকে স্থানীয় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের কাউকেই বাঁচানো যায়নি।
চিকিৎসক প্রথমে কিশোরীকে পরীক্ষানিরীক্ষা করে জানান, বিষাক্ত কোনও সাপের ছোবলে মৃত্যু হয়েছে তার। তত ক্ষণে সাপের বিষ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে বধূর শরীরেও। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করানো হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় জেলা হাসপাতালে। কিন্তু তাঁরও মৃত্যু হয়। নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় একই সঙ্গে দুই আত্মীয়ের মৃত্যুর ঘটনায় বিয়েবাড়িতে বিষাদের সুর। শোকস্তব্ধ এলাকা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার নাকাশিপাড়া থানার অন্তর্গত সাহেবতলা এলাকায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন নদিয়ার চাপড়া থানার লক্ষ্মীগাছা গ্রামের বাসিন্দা কিশোরী ইয়াসমিন খাতুন এবং পারভিনা মন্ডল বিবি নামে এক বধূ। বুধবারের বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে একটি ঘরে দুটি খাট পাশাপাশি রেখে আমন্ত্রিতদের মধ্যে জনা ১৫ মহিলা ঘুমোচ্ছিলেন। মধ্যরাতে পায়ের একটি আঙুলে যন্ত্রণা নিয়ে ঘুম ভাঙে পারভিনার। তাঁর কী হয়েছে, তা নিয়ে যখন সবাই খোঁজখবর করছেন, তখন নজর যায় পাশে ঘুমিয়ে থাকা ১১ বছরের ইয়াসমিনের দিকে। তাকে ডাকাডাকি করেও ওঠাতে পারেননি কেউ। তড়িঘড়ি দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বেথুয়াডহরি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে চিকিৎসক ইয়াসমিনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পারভিনাকে দ্রুত জেলা হাসপাতাল স্থানান্তর করেন। আত্মীয়েরা সাপের কামড়ে আক্রান্ত বধূকে কৃষ্ণনগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সারা দিন চিকিৎসার পরেও ওই বধূর শারীরিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। তখন তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় জেলা হাসপাতালে। ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ২৫ বছরের বধূর মৃত্যু হয়েছে।