শপথ নিয়ে বেরোতেই গ্রেফতার দুই কংগ্রেস কাউন্সিলর। —নিজস্ব চিত্র।
দল ভাঙানোর খেলায় শাসক দল যে ক্রমেই অপ্রিরোধ্যে হয়ে উঠছে ফের তা প্রমাণ পেল মুশির্দাবাদের ধুলিয়ানে।
বৃহস্পতিবার দলত্যাগীদের পুর-কর্তার টোপ দিয়ে ধুলিয়ানে পুর বোর্ডের দখল নিল তৃণমূল। এ দিন পুরপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন সদ্য বিজদেপি-র টিকিয়ে জয়ী সুবল সাহা। উপ-প্রধান হিসেবে ঘোষিত হয়েছে নির্দল টিকিটে জয়ী হয়ে দিন কয়েক আগে তৃণমূলে যোগ দেওয়া মহম্মদ নুর ইসলাম খানের নাম।
এমনই টাই যে হতে চলেছে তা আঁচ করে এ দিন ধুলিয়ানে হাজির ছিলেন কংগ্রেসের পাঁচ বিধায়ক। পাল্টা, তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেনও হাজির ছিলেন সপার্ষদ।
এ দিন সকালে মান্নানের গাড়িতেই জয়ী তৃণমূল কাউন্সিলরদের সঙ্গে, পদের ‘মোহে’ সদ্য শাসক দলে যোগ দেওয়া কাউন্সিলরেরাও আসেন ধুলিয়ানে।
রীতিমতো পুলিশি ঘেরাটোপে ঢুকে যান পুরসভায়। কংগ্রেসের অভিযোগ, বোর্ড গঠনের ভোটাভুটিতে ‘অঘটন’ ঘটার আশঙ্কায় দলত্যাগীরা যাতে কোনোওরকম বেচাল না করে তার জন্য এমন প্রহরা। তবে বোর্ড গঠনে ভোট পর্ব মিটেছে নির্বিঘ্নেই।
নাটক বাকি ছিল তার পরে। বেলা একটা নাগাদ বোর্ঢ গঠনের পরে কাউন্সিলকেরা পুর ভবন থেকে বেরোলে আচমকাই পুলিশ দুই কংগ্রেস কাউন্সলিসরের পথ আটকায়। ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাজাহার হোসেন এবং ১১ নম্বরের ইয়াসিন শেখ, কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী এই দুই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ, মারধর এবং খুনের চেষ্টা।
পুলিশ জানায়, ৩ মে মাজাহার হোসেন এবং ২৮ মে অর্থাৎ গণনার দিন, ইয়াসিন শেখ শাসক দলের কর্মী-সমর্কদের মারধর ও খুনের চেষ্টা করেন। কলকাতা হাইকোর্টে তাঁদের আগাম জামিনের আবেদন ইতিমধ্যেই খারিজ হয়ে গিয়েছে। তাই এ দিন তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
ধৃত দুই কাউন্সিলরকে এ দিন জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে দুই কাউন্সিলারকেই ২ জুন পর্যন্ত জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তবে কংগ্রেসের দাবি, ‘ঘোড়া কেনা বেচা’র সময়ে ওই দুই কংগ্রেস কাউন্সিলরকেও ‘লোভ’ দেখানো হয়েছিল। রাজি না হওয়াতেই তাঁদের কপালে োই শাস্তি জুটেছে।
পুরপ্রধান নির্বাচনে গোপনে ভোট নেওয়া হলে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিজেপি কাউন্সিলার সুবল সাহা ১১ – ৯ ভোটে (সভাপতি ভোট দেননি) কংগ্রেসের সফর আলিকে হারিয়ে প্রধান নির্বাচিত হন। কংগ্রেসের সফর আলি দলের ৮ জন ছাড়াও বিজেপির এক কাউন্সিলারের ভোট পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
পুর ভবনের ছাদে অস্থায়ী প্যান্ডেলের আড়ালে যখন আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া চলছে তখনই পুরভবন ছেড়ে বেরোবার মুখে পুলিশ োই দু’জনকে গ্রেফতার করে। পুরভবনের পাশেই হাজির থাকা একাধিক কংগ্রেস বিধায়ক ও কংগ্রেস নেতারা কেউ কিছু বুঝতেই পারেননি।
ফরাক্কার কংগ্রেসের বিধায়ক মইনুল হক বলেন , ‘‘মানুষের ভোটে হেরে গিয়ে শাসক দল পুলিশের ভয় ও টাকার লোভ দেখিয়ে দল ভাঙিয়ে ধুলিয়ানের পুরবোর্ড যেভাবে দখল করেছে তা গণতন্ত্রের পক্ষে কলঙ্ক।’’
ধুলিয়ানের মানুষ বিজেপিকে বিশ্বাস করে ৪টি আসনে জিতিয়েছিল। ব্যক্তি স্বার্থে তাদের ৩ জনের দলত্যাগে ধুলিয়ানের মানুষের আস্থা হারিয়েছে বিজেপি। একই পথে হেঁটে মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন কয়েক জন বাম কাউন্সিলারও।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন অবশ্য কংগ্রেসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। বলছেন, ‘‘ধুলিয়ানের উন্নয়নে কাজ করবে তৃণমূল পুরবোর্ড। আর ওই দুই কাউন্সিলারকে পুলিশ কেন গ্রেফতার করেছে তা পুলিশই বলতে পারবে।’’
এ বারই প্রথম পুর ভোটে দাঁড়িয়ে শুধু জয় নয়, পুরপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন সুবল সাহা। তিনি বলছেন, ‘‘বিরোধী কংগ্রেস এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের পরামর্শ নিয়েই কাজ করব।’’