পুরভোটের ময়দানে প্রবীণদের উপরেই আস্থা রাখছেন নবদ্বীপের তৃণমূল নেতারা।
পুরসভায় তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা অন্তত তেমনটাই বলছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নবদ্বীপ পুরসভায় তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্য মন্ত্রীসভায় জনস্বাস্থ্য এবং কারিগরি দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে তিনি জানান, এ বার আমরা চব্বিশটি ওয়ার্ডেই জিতে পুরসভাকে বিরোধী শূন্য করার লক্ষ্যে নামছি। সেই লক্ষ্যপূরণে দলের ভরসা পরিণত বয়সের প্রার্থীরাই। সব মিলিয়ে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় প্রায় এক তৃতীয়াংশ নতুন মুখ থাকলেও, তাঁদের কেউই প্রকৃত অর্থে নতুন প্রজন্মের নন। নদিয়ায় এ বার আটটি পুরসভায় ভোট রয়েছে। তবে, নবদ্বীপ ছাড়া আর কোনও জায়গাতেই শুক্রবার অবধি প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়নি। সেখানে নবদ্বীপ ব্যতিক্রম কেন?
তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রতিবারই নবদ্বীপ পুরসভার প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেন পুণ্ডরীকাক্ষবাবু। তা ছাড়া, রাজ্যের অন্যত্র প্রার্থী বাছাইকে ঘিরে তৃণমূলের অন্তঃকলহের যে চিত্র উঠে আসছে, নবদ্বীপের ছবিটা তার থেকে অনেকটাই আলাদা। তৃণমূলের সূচনা পর্ব থেকেই নবদ্বীপে দলের শেষ কথা পুণ্ডরীকাক্ষ ওরফে নন্দ সাহা। মুখ্যমন্ত্রীর নেকনজরে থাকা এই নেতার সিদ্ধান্তের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করার লোক এলাকায় খুঁজে পাওয়া ভার! শহর এবং ব্লকে তিনিই তৃণমূলের মুখ। দলের একটি সূত্রে খবর, তার মানে এই নয় যে নবদ্বীপে তৃণমূলের গোষ্ঠী রাজনীতি নেই। কিন্তু বিরুদ্ধ গোষ্ঠীও তাঁর উপরেই ভরসা রাখেন, সমঝে চলেন। ফলে এ বারও পুরভোটের প্রার্থী নিয়ে শেষ কথা তিনিই বলেছেন।
গত দেড় দশক ধরে এই পুরসভা তৃণমূলের দখলে। ২০০০ সালে সিপিএমকে হারানো ইস্তক টানা তিনবার নবদ্বীপে পুরবোর্ড গড়ে তৃণমূল। ২০১০ সালের ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল ১৯টিতে জেতে। সিপিএম জিতেছিল ৩টি ওয়ার্ডে। একটি করে ওয়ার্ড কংগ্রেস এবং নির্দল প্রার্থীর দখলে ছিল। তবে এ বারই প্রথম তৃণমূল পুরভোটে লড়ছে, যখন রাজ্যেও তাঁদেরই সরকার ক্ষমতাসীন। প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হতেই আনুষ্ঠানিক ভাবে ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ল নবদ্বীপে। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগে গত কয়েক দিন ধরে শহরে কান পাতলে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন ওয়ার্ডে শোনা যাচ্ছিল বিভিন্ন জনের নাম। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই সব জল্পনার অবসান হল।
এ দিন প্রার্থী তালিকা ঘোষণার শুরুতেই নবদ্বীপ পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা জানিয়ে দেন, তিনি এ বার প্রার্থী হচ্ছেন না। তিনি ছাড়াও মোট তিন জন কাউন্সিলর প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। তাঁরা হলেন ৪ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর দীপা সাহা এবং লাক্সি বসু। বাদ কেন? দীপাদেবী সাহা শারীরিক ভাবে অসুস্থ বলে জানা গিয়েছে। কাউন্সিলর হিসেবে লাক্সিদেবীর ভূমিকায় অখুশি ছিলেন স্থানীয়দের একাংশ। তৃণমূলের একটি সূত্রে খবর, তাই ফের তাঁকে প্রার্থী করার ঝুঁকি নিতে চায়নি দল।