যানজটের গুঁতোয় নাভিশ্বাস বগুলার

মেরেকেটে ফুট চব্বিশের রাস্তা। দু’টো গাড়ি পাশাপাশি দাঁড়ালে মাঝখানে মাছি গলার জায়গা থাকে না। তবুও নিস্তার মিলছে কই। পথ জুড়ে কোথাও দাঁড়িয়ে দশ চাকার লরি, কোথাও বা বাস। মাঝেমধ্যে ভকভক করে ছাড়ছে কালো ধোঁয়া। সে সব এড়িয়ে যেখানে একটু জায়গা মিলছে সেখানে গিজগিজ করছে রিকশা, টুকটুক, সাইকেল। ফুটপাথ বলেও কিছু নেই। জবরদখল হয়ে গিয়েছে দু’দিকের রাস্তা।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

বগুলা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০১:৪৫
Share:

রাস্তা জুড়ে চলছে ছোট-বড় গাড়ি। বাড়ছে যানজট।— নিজস্ব চিত্র

মেরেকেটে ফুট চব্বিশের রাস্তা। দু’টো গাড়ি পাশাপাশি দাঁড়ালে মাঝখানে মাছি গলার জায়গা থাকে না। তবুও নিস্তার মিলছে কই।
পথ জুড়ে কোথাও দাঁড়িয়ে দশ চাকার লরি, কোথাও বা বাস। মাঝেমধ্যে ভকভক করে ছাড়ছে কালো ধোঁয়া। সে সব এড়িয়ে যেখানে একটু জায়গা মিলছে সেখানে গিজগিজ করছে রিকশা, টুকটুক, সাইকেল। ফুটপাথ বলেও কিছু নেই। জবরদখল হয়ে গিয়েছে দু’দিকের রাস্তা। রাস্তার দু’পাশে পসরা হাঁকিয়ে বসেছেন হকারেরা। তাই প্রাণ হাতে করে মূল রাস্তা ধরে হাঁটাহাটি সাধারণ মানুষের। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, কুণ্ডলী পাকিয়ে ওঠা ধোঁয়া, বিরামহীন হর্ন, তীব্র যানজট— সব মিলিয়ে প্রতিদিনই যেন ‘নরক’ হয়ে ওঠে বগুলা মোড়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে অনেক বদলে নিয়েছে বগুলা। পাল্টেছে শহরের রুচি, জীবনযাপনের ধরন-ধারণ। কিন্তু পাল্টায়নি কেবল শহরের যানজট। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, যত দিন যাচ্ছে যানজটের সমস্যটা আরও প্রকট হয়ে উঠছে। যানজট সামলাতে অবশ্য জনা কয়েক সিভিক ভলান্টিয়ার থাকলেও পরিস্থিতির কোনও হেরফের ঘটেনি।
বগুলার কাছেপিঠে তেমন কোনও বড় বাজার নেই। বাজার বলতে এক দিকে কৃষ্ণনগর আর অন্য দিকে দত্তফুলিয়া। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ বগুলার উপরে নির্ভরশীল। তার উপর রয়েছে বগুলা স্টেশন, একাধিক স্কুল-কলেজ। ফলেসকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের ভিড়ে গমগম করে বগুলা। শুধু তাই নয়, কৃষ্ণনগর থেকে দত্তফুলিয়া ছাড়াও একাধিক রুটের বাস, মামজোয়ান, ব্যানালি, ট্যাংরাখাল, হাঁসখালি, রামনগর, গাঁড়াপোতা, পায়রাডাঙা-নোনাগঞ্জ, আড়ংঘাটা রুটের কয়েকশো অটো বগুলার উপর দিয়ে যাতায়াত করে। সেই সঙ্গে লছিমন তো রয়েছে। তাদের সংখ্যাও কম নয়।

Advertisement

তার উপরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে টুকটুকের সংখ্যা। তার উপর বেআইনি দখলদারির ফলে দিনকে দিন সংকীর্ণ হচ্ছে রাস্তা। তার উপরে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে সাইকেল, ভ্যান-রিকশা, ফল, সব্জির পসরা সাজিয়ে রেখে চলে বিকিকিনি। দিনের বেশির ভাগ সময়ই শহরের ব্যস্ততম এলাকা নোনাগঞ্জ মোড়ে রাস্তার দু’পাশে কৃষ্ণনগর ও দত্তফুলিয়াগামী বাস মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকে। মাঝখানে একটি অটোরও গলারও জায়গা থাকে না। ফলে বগুলার নোনাগঞ্জ মোড়ে এসে কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় যানবাহনের গতি। রাস্তার দু’দিকে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে গাড়ি। সেই জট ছাড়াতে কালঘাম ছুটে যায় পুলিশের। আবার সেই জট ছাড়াতে না ছাড়াতে নতুন করে শুরু হয় যানজট।

বগুলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল বিশ্বাস বলেন, ‘‘যানজটের কারণে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বা পড়ুয়ারা সময় মতো ক্লাসে আসতে পারে না। সঠিক সময়ে বাড়ি থেকে বেরোলেও স্কুলে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে সেই ভোগান্তি আরও চরম আকার ধারণ করে। প্রশ্নপত্র নিয়ে সঠিক সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে পৌঁছাতে পারব কিনা তা নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। তার উপর প্রতি মুহূর্তে ছোটোখাটো দুর্ঘটনা তো লেগেই আছে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য চিন্তা হয়। আমরা সকলেই চাই দ্রুত এর একটা সমাধান হোক।’’

Advertisement

পদক্ষেপ যে একেবারেই নেওয়া হয় না তা নয়। একাধিকবার প্রশাসন দোকানের এগিয়ে আসা অংশ ভেঙে দিয়েছে। মাঝেমধ্যে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রচার করা হয়। রাস্তার পাশে শিবির করা হয়। কিন্তু শিবির যতদিন থাকে ততদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে। তার পরে আবার যেই কে সেই।

নিত্যযাত্রী সুনন্দ সরকার বলেন, ‘‘যানজটের কারণে বেশির ভাগ দিনই নোনাগঞ্জ মোড় থেকে হাসপাতালমোড় পর্যন্ত আসতেই পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট লেগে যায়। আমরা নিয়মিত যাতায়াত করি বলে অনেক আগেই বাড়ি থেকে বের হই ট্রেন ধরার জন্য। কিন্তু যারা জানেন না তাদের অনেকেই যানজটের কারণে ট্রেন ধরতে পারে না। একটা স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত মানুষের এই দুর্ভোগ থেকে রেহাই নেই।’’

বগুলা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের পীযুষকান্তি কুণ্ডু বলেন, ‘‘এমনিতেই রাস্তাটি প্রয়োজনের তুলনায় সংকীর্ণ। রাস্তা চওড়া না করা পর্যন্ত এর সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তার উপরে রাস্তার ধারেই আছে বিদ্যুতের খুঁটি। তবে সমস্যার সমাধান করতে আমরা মরিয়া।’’

পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে যানজট ঠেকাতে দুই দফায় ১০ জন সিভিক ভলান্টিয়ার যানজট নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ করে স্কুল শুরু ও ছুটির সময়ে। পুলিশ জানিয়েছে, আগামী শুক্রবার থেকে কৃষ্ণনগরগামী বাস নোনাগঞ্জ মোড় ও দত্তফুলিয়াগামী বাস কলেজের সামনে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করে হবে।

যানজট থেকে শহরকে মুক্ত করতে বেশ কয়েক মাস আগে স্থানীয় পুলিশ, গ্রামপঞ্চায়েত ও বিভিন্ন স্তরের গুরুত্ত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করে ছিলেন মহকুমা প্রশাসনের কর্তারা। সেখানে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তার একটিও এখনও বাস্তবায়িত হতে দেখা যায়নি। হাঁসখালির বিডিও প্রদ্যুৎ সরকার বলেন,‘‘আমরা প্রায় সাতটির মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যেগুলি মেনে চললে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যেত।’’ তা হলে তা হয়নি কেন। তার কোনও সদুত্তর অবশ্য মেলেনি।

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-নদিয়া মুর্শিদাবাদ’। ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান-www.facebook.com/anandabazar.abp বা চিঠি পাঠান এই ঠিকানায়— আমার শহর, নদিয়া-মুর্শিদাবাদ বিভাগ, জেলা দফতর, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement