খই বিনিময়। নিজস্ব চিত্র
কাঠা দিয়ে ধান মেপে তার বদলে দেওয়া হচ্ছে বিন্নি খই।
হাওড়ার সাঁতরাগাছি থেকে আসা পর্যটক দম্পতি সে দৃশ্য মোবাইলে বন্দি করতে করতে বলছেন, ‘‘এখনও যে বিনিময় প্রথা চলে, লালবাগে বেড়াতে না এলে তা জানতেই পারতাম না!’’
গোটা পৌষ মাস জুড়ে কিরীটেশ্বরী মন্দিরকে ঘিরে লালবাগ মহকুমা এলাকার নবগ্রাম ব্লকের কিরীটেশ্বরী গ্রামে চলেছে এই মেলা। যে মেলা কমিটির সভাপতি আবদুল বারি, সম্পাদক আমিরুল ইসলাম এবং সহ-সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ সৌমিত্র দাস ও অরুণ মণ্ডল।
গত ১০ বছর ধরে সম্পাদক পদে থাকা আমিরুল জানান, পৌষ মাসের প্রথম মঙ্গলবার থেকে ওই মেলা শুরু হয়েছে। শুধু মেলা কেন, পুজো-পার্বণ থেকে উৎসব-অনুষ্ঠান সব কিছুতেই সব ধর্মের লোকজন যোগ দেন। মেলা চলাকালীন ভক্ত ও পর্যটকদের কেনাকেটাও চলেছে মেলায়। গ্রামীণ ওই মেলায় নাগরদোলা যেমন এসেছে, তেমনি কয়েকশো দোকান পসরা সাজিয়ে বসেছিল।
আরও পড়ুন: বিস্ফোরণ যে হবে, আঁচ পাননি গোয়েন্দারা
জিয়াগঞ্জের আমাইপাড়া ও বিধান কলোনি এলাকার ৩০টি পরিবার মেলায় খইয়ের দোকান খুলে বসেছিলেন। মেলায় অন্যতম আকর্ষণ ছিল বিন্নি ও ভুট্টার খই। মেলা কমিটির সহ-সম্পাদক সৌমিত্র দাস বলেন, ‘‘এই মেলার ঐতিহ্য খই। কিরীটেশ্বরী পঞ্চায়েতের প্রায় ২৮টি পাড়ায় আছেন আদিবাসীরা। ওই সমস্ত পাড়ায় এক কাঠা ধান দিয়ে ৬ কাঠা খই মেপে নেওয়ার রেওয়াজ সেই কবে থেকে চলে আসছে। তাঁদের হাতে মোবাইল এলেও পুরনো এই প্রথা তাঁরা ভুলে যাননি।’’
খই বিক্রেতা কালাচাঁদ মণ্ডল বা লক্ষ্মীরানি হালদারদের কথায়, ‘‘বিনিময় প্রথা থাকায় আমরা মেলায় দোকান করার সময়ে নতুন কাঠা বানিয়ে নিয়ে আসি। এলাকার মানুষ কাঠা দিয়ে ধান মেপে খই নিয়ে যান।’’
যে মেলা স্থানীয় লোকজন তো বটেই বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পর্যটকেরাও উপভোগ করেন। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে কাঠা দিয়ে ধান মেপে খই নেওয়ার যে আগ্রহ, তার টানেই প্রতি বছর মেলায় ভিড় করেন লোকজন।