টোটো চালকের মৃত্যুতে থানার সামনে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
অফিসটাইমের ব্যস্ত রাস্তা। প্রচুর লোক। ভিড়ে ভর্তি সেই প্রকাশ্য রাজপথে এক টোটো চালককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে তাঁর মাথার উপর দিয়ে লরি চালিয়ে দিল চালক। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল বছর আটত্রিশের টোটোচালক বাপ্পা মণ্ডলের। তাঁর বাড়ি কোতোয়ালি থানার ঝিটকেপোতা এলাকায়।
মঙ্গলবার কৃষ্ণনগর শহরের বুকে ঘটা এই ঘটনা শিহরিত করেছে নীতিবোধযুক্ত, দায়িত্বশীল নাগরিকমহলকে। কারণ, অসংখ্য লোকের চোখের সামনে ঘটনা ঘটলেও লরির পিছু ধাওয়া করে তাকে থামানোর চেষ্টা করেননি কেউ। পুলিশ সূত্রের খবর, কিছুদূর যাওয়ার পরে লরিটি রাস্তার ধারে ফেলে রেখে চম্পট দেয় চালক। সেই সময়েও তাকে কেউ বাধা দেননি। এমনকি, টোটোচালক যখন রক্তাক্ত হয়ে পড়ে রয়েছেন তখন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাননি আশপাশের কেউ। পুলিশ এসে তাঁরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসকেরা তখন পরীক্ষা করে জানান, অনেক আগেই তিনি মারা গিয়েছেন। ঘটনার কথা জানাজানির পরে শহরের টোটো চালকদের একাংশ কোতোয়ালি থানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, এ দিন সকাল পৌনে ন’টা নাগাদ কৃষ্ণনগর স্টেশন-সংলগ্ন রোল গোডাউন থেকে গাছের সার নিয়ে শহরের ভিতর দিয়ে করিমপুরের দিকে যাচ্ছিল লরিটি। নেদেরপাড়া মোড়ের কাছে লরিটি টোটোকে পিছন থেকে ধাক্কা মারে। টোটো চালক তখন লরিটিকে থামিয়ে দরজায় উঠে চালককে জোর করে নামানোর চেষ্টা করতে থাকে। সেই সময় লরি চালক এক ধাক্কায় টোটো চালককে রাস্তায় ফেলে দেয়। তার পর লরি চালিয়ে দেয়। টোটোচালকের মাথার উপর দিয়ে লরির চাকা চলে যায়। পুলিশ লরিটি আটক করেছে। চালকের খোঁজে তল্লাশি চলছে। লরি চালকদের সংগঠনের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, কৃষ্ণনগর শহরের মধ্যে সকাল ন’টার পরে লরি চলাচল নিষিদ্ধ। পৌনে ন’টা নাগাদ ঘটনা ঘটে। ফলে লরিটি যে আইন ভেঙে শহরের ভিতর দিয়ে যাচ্ছিল তা নয়। তবে তার গতি নিয়ন্ত্রিত ছিল না। করিমপুর যাওয়ার জন্য লরিকে কৃষ্ণনগর শহরের ভিতর দিয়েই যেতে হয়। তাই বেশিরভাগ লরি রাত আটটার পরে যায়। এই লরিটি অবশ্য সকালে যাচ্ছিল। শহরের বাসিন্দাদের একাংশ মনে করছেন, শহরে রাস্তার তুলনায় যানবাহন বিশেষ করে টোটোর সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়াটাও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
শহরের এই মুহুর্তে ঠিক কত টোটো চলে তার কোন নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই পুর কর্তৃপক্ষের হাতে। কৃষ্ণনগর পুরসভার সদ্য প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহা বলছেন, “বছর কয়েক আগে আমরা পুরসভার তরফে কৃষ্ণনগর শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দখল মুক্ত করা শুরু করেছিলাম। কিন্তু তৎকালীন জেলাশাসকের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত তা বন্ধ করতে বাধ্য হই।” অসীমবাবু আবার কৃষ্ণনগর টোটো চালক সমিতির সভাপতি। তিনি অবশ্য বলছেন, “এই ঘটনার জন্য ওই টোটো চালক নিজেও দায়ী। তিনি দাদাগিরি করতে গিয়েছিলেন বলে এমন হল। আমরা যেমন বেআইনি টোটোর বিরুদ্ধে তেমন চালকদের দাদাগিরিরও বিরুদ্ধে।”