হাঁটতে গেলেই হোঁচট খাচ্ছেন পথচারীরা

জিআরপি গেট ছেড়ে বেড়িয়ে জিএনপিসি রোডে উঠতেই বিড়ম্বনায় পড়লেন বছর ত্রিশের যুবক। কোথায় যাবেন? তাকে ঘিরে ধরেছেন টুকটুক চালকেরা। একটু বাঁ দিকে আসতেই কোথায় যাবেন বলে হাঁক পাড়ছেন কয়েকজন রিকশা চালকও।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০১:১৪
Share:

যানজটে রুদ্ধ পথ। রানাঘাট শহরে। — নিজস্ব চিত্র।

জিআরপি গেট ছেড়ে বেড়িয়ে জিএনপিসি রোডে উঠতেই বিড়ম্বনায় পড়লেন বছর ত্রিশের যুবক। কোথায় যাবেন? তাকে ঘিরে ধরেছেন টুকটুক চালকেরা। একটু বাঁ দিকে আসতেই কোথায় যাবেন বলে হাঁক পাড়ছেন কয়েকজন রিকশা চালকও। হাঁক ডাকে পিছিয়ে নেই ভ্যান চালকেরাও। রানাঘাট শহরের এই ভোল পাল্টে যাওয়া দেখে হকচকিয়ে যান ওই যুবক। বছর চারেক আগেও এত যানজট তো ছিল না! শহরে হাঁটাচলার পর্যাপ্ত জায়গা ছিল। এত গাড়ির দাপাদাপিও ছিল না।

Advertisement

কাজের সুবাদে বছর চারেক দুবাইয়ে কাটিয়েছেন রানাঘাটের শ্রীনাথপুরের বাসিন্দা আসলাম শেখ। কয়েকদিন আগে বাড়ি ফেরার সময় তার এই অভিজ্ঞতা। আসলামের কথায়, কী দেখে গিয়েছিলাম শহরটাকে। এখন এসে কী দেখছি। এ কী অবস্থা হয়েছে? যানজটের ঠেলায় পথ চলাই দায় হয়ে যাচ্ছে। মানুষ চলাচল করে কী করে? এ ব্যাপারে সকলের নজর দেওয়া উচিত।

শুধু আসলাম শেখই নন, সকলেরই উপলব্ধি দেড়শো বছরের পুরনো রানাঘাট শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। গত পাঁচ বছরে শহরে জনসংখ্যা বেড়েছে হাজার তিনেক। তাছাড়া অফিস-আদালত ও বাজারের উপস্থিতির জন্য সকাল হলেই আশপাশের অন্তত এক ডজন গ্রামের মানুষ শহরে ঢোকেন। আর এতেই শহরের প্রধান প্রধান রাস্তাগুলিতে যানজট মাত্রা ছাড়াচ্ছে। গাড়ির ঠেলায় ওই রাস্তাগুলিতে পা ফেলা যায় না। রানাঘাট স্টেশনের ১ নম্বর প্লাটফর্মের জিআরপি গেট এবং হলকামরা গেট দিয়ে বেরোতেই যানজটের মুখে পড়তে হচ্ছে লোকজনকে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা— জিএনপিসি রোড, সুভাষ এভিনিউ বা স্বামী বিবেকানন্দ সরণীতে যানজটের গুঁতোয় লোকজন চলাফেরা করতে পারছেন না। অধিকাংশ সময় ওই রাস্তাগুলো দিয়ে হাঁটাই যায় না। ট্রেন থেকে একলপ্তে শ’খানেক যাত্রী নামলে তো কথাই নেই। যানজট বেড়ে যায় আরও কয়েকগুন। তখন চলাফেরা তো দূরের কথা, এমনকী রাস্তার ধারে দাঁড়ানোর জায়গাই মেলে না।

Advertisement

রাস্তার দু’ধারে ফুটপাথ দখল করে ছোট-বড় দোকান গজিয়ে উঠেছে। তার উপর পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানবাহন। দুই ও চার চাকার গাড়ি গোটা শহরজুড়ে গিজগিজ করছে। আর যাত্রী নামানো-ওঠানোর জন্য তো টোটো, রিকশা, অটো যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে। পুরসভার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শহরে প্রায় ১৩০০ ভ্যান ও রিকশা রয়েছে। কিন্তু, বাস্তবে শহরে প্রতিদিন অন্তত হাজার পাঁচেক ভ্যান ও রিকশা ঘোরাফেরা করে। গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো রয়েছে টোটো। শহরে হাজার খানেক টোটো চলছে। পুরসভার দেওয়া তথ্য অন্তত এটাই বলছে। তবে বাস্তবে আশপাশের প়ঞ্চায়েত এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় আটশো টোটো শহরে ঢোকে। সেগুলির কোনও বৈধতা নেই।

রানাঘাট স্টেশন সংলগ্ন পুলিস ফাঁড়ির সামনে রয়েছে বাসস্ট্যান্ড। ওই স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন ৬০টি বাস ছা়ড়ে। সেগুলি কোর্ট মোড় হয়ে ফুলিয়া, শান্তিপুর, কালনাঘাট, হবিবপুর, তারাপুর, ন-পাড়া হয়ে বলাগড়ঘাট, হবিবপুর, শান্তিপুর, নবদ্বীপ হয়ে কাটোয়ায় যায়। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ড চত্বর থাকে ভিড়ে ভরা। এক বাস চালক জানান, শহরের মধ্যে বাস চালানো ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। এত সঙ্কীর্ণ রাস্তা আর তার উপর ছোট গাড়ির উৎপাতে বাসের চাকা যেন এগোতেই চায় না। এত যানজটের কারণে মাঝে-মধ্যেই শহরে ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই থাকছে। গত সোমবার সকালে শহরের দক্ষিণপাড়া এলাকায় রানাঘাট-গাইঘাটাগামী একটি বাসের ধাক্কায় জয়ন্ত দাস নামে এক সব্জি বিক্রেতার মৃত্যু হয়েছে। রাস্তাঘাট ঘিঞ্জি হওয়ায় কোনও দুর্ঘটনাস্থলে দমকলের গাড়ি যথা সময়ে পৌঁছতে পারছে না। শহরের রথতলা রেলগেটের কাছে রয়েছে দমকল বাহিনীর কার্যালয়। মূলত আগুন লাগার খবর এলে দমকলবাহিনী রথতলা ও চাবি রেলগেট পার হয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় যায়। দমকল বাহিনীর এক আধিকারিক বলেন, “রাস্তায় বার হলেই যানজটে গাড়ি আটকে যায়। দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতে অহেতুক বিলম্ব ঘটে। একেই দুর্ঘটনার খবর অনেক সময় দেরিতে মেলে তার উপর তারপর যানজটের কারণে আরও দেরিতে গাড়ি পৌঁছয়।’’

যানজটের সমস্যার কথা স্বীকার করে রানাঘাট পুরসভার পুরপ্রধান তৃণমূলের পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রানাঘাট পুরনো শহর। তাই ইচ্ছা থাকলেও শহরকে সে ভাবে সাজানো যাচ্ছে না। রাস্তাগুলো সঙ্কীর্ণ। রাস্তার দু’ধারে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। যার জন্য সমস্যা হচ্ছে। পুরকর্মীরা অবশ্য সর্বত্র যান নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। তবে শহরের বাইরে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। তা হলে শহরে অযথা গাড়ির ভিড় কমবে।’’ রানাঘাট উত্তর পশ্চিমের কেন্দ্রের সদ্য বিজয়ী বিধায়ক কংগ্রেসের শঙ্কর সিংহও যানজটের সমস্যার কথা মানছেন। তিনি বলেন, “পুরসভার উচিৎ যানজট সমস্যার সমাধান করা। কিন্তু এ ব্যাপারে পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement